অরণ্য রণি | ০২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯
কোরবানি ঈদের লম্বা ছুটির পরে মৌলভীবাজার বন্ধুসভার বন্ধুরা একটু ভিন্নভাবে ঈদ পুনর্মিলনীর আয়োজন করে। বন্ধুরা সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেয় শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে জলের বুকে ভাসমান গ্রাম অন্তেহরিতে যাওয়ার। ২১ আগস্টের এই ভ্রমণে দুপুরের পর বন্ধুসভার অফিসে বন্ধুরা একে একে জমায়াত হতে থাকেন। সবাই আসার অটোরিকশায় করে বন্ধুরা জলের গ্রামের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন।
যেহেতু জলের গ্রামে যাওয়া হচ্ছে সেহেতু নৌকা তো অবশ্যই লাগবে। বন্ধু হাদী আগে থেকেই ফোনে যোগাযোগ করে পরিচিত নৌকা ঠিক করে রাখে। গ্রামীণ আঁকাবাঁকা সড়ক ধরে ৪০ মিনিটের যাত্রা শেষে বন্ধুরা গন্তব্যে পৌঁছে। আর বন্ধুদের সবাই এই ভ্রমণে পাঞ্জাবি ও লুঙ্গি পড়ে একটু ব্যতিক্রমভাবে যান।
প্রকৃতি দুইহাতে তার রূপ বিলিয়ে দিয়েছে সিলেট বিভাগের প্রতিটি জেলা উপজেলায়। এই সিলেটে আছে হাওর-বাওর, পাহাড়-নদী, নানা জাতের বৃক্ষরাজি, আছে জলবন, সোয়াম্প ফরেস্ট। এর অনেকটা পর্যটকদের কাছে পরিচিত হলেও অনেক এলাকা এখনো রয়ে গেছে প্রচারের আড়ালে। তেমনি একটি এলাকা মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার একটি গ্রাম। বছরে ৭-৮ মাস জলমগ্ন থাকে এই গ্রাম। জলমগ্ন এই গ্রাম, গ্রামের রূপ বাংলাদেশের আর অন্য কটা গ্রামের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। পুরো গ্রামই পানির উপর ভাসমান, ঠিক যেমন ভেসে আছে শাপলাসহ নানা জাতি-প্রজাতির জলজ উদ্ভিদ। গ্রামের প্রতিটি বাড়ির বাঁকে বাঁকে নানা প্রজাতির জলজ উদ্ভিদ যা এক অন্যরকম মোহনীয় দৃশ্য। এই গ্রামেই আছে সোয়াম্প ফরেস্টের হিজল-তমাল-করচসহ বিভিন্ন গাছগাছালি।
অন্তেহরি ছাড়াও আশেপাশের অনেকগুলো গ্রামে জলারবন রয়েছে। বড়ই অদ্ভুত এই গ্রামগুলোর দৃশ্য। কোনো গাছের হাঁটু পর্যন্ত ডুবে আছে পানিতে। একটু ছোট যেগুলো, সেগুলো আবার শরীরের অর্ধেকই ডুবিয়ে আছে জলে। কোথাও চোখে পড়বে মাছ ধরার জাল পেতেছে জেলেরা। কোথাও ঘন হয়ে জন্মানো গাছপালার কারণে কেমন অন্ধকার লাগবে পুরো বনটা। আবার কোথাও একেবারে ফাঁকা শুধু অথই পানি। আবার শুকনো মৌসুমে যখন পানি থাকে না তখন ধানসহ নানা ধরণের শাক-সবজির চাষ করেন এই গ্রামের মানুষ।
জলের গ্রামের গাছের ডালে বাসা বেধেছে নানা প্রজাতির পাখি। আবার অনেক গাছে আশ্রয় নিয়েছে অনেক প্রজাতির বন্যপ্রাণী। বর্ষায় লোকালয় পানির নিচে চলে যায় তাই এসব বন্যপ্রাণী উঠে পড়ে গাছের ওপর। শীতকালে এখানে দাপিয়ে বেড়ায় বনবিড়াল, বেজি, শিয়ালসহ নানা প্রজাতির বন্যপ্রাণী।
সারা গ্রাম পানির নিচে থাকলেও ছোট একটি বাজার আছে অন্তেহরি গ্রামে। সেই বাজারে ডিঙি নৌকা নিয়ে এসে জড়ো হন আশেপাশের গ্রামবাসী। মনে হবে পানির উপর ভাসমান কোন এক জাহাজ।
পানির মধ্যেই একটা সেতু আছে যা হয়তো রাস্তা করার জন্য করা হয়েছিল। কিন্তু পানির কারণে তা আর হয়নি। এই সেতুতে আমরা কিছুক্ষণ অবস্থান করে গোধূলিলগ্ন উপভোগ করি এবং বাজারে মাঝিকে পাঠিয়ে গরম গরম পিয়াজু দিয়ে হালকা নাস্তা করি।
যেভাবে যাবেন: ঢাকা থেকে বাসে করে মৌলভীবাজার নন-এসি বাসে মৌলভীবাজার বা ট্রেনে শ্রীমঙ্গল। সেখান থেকে ৩০ টাকা ভাড়া দিয়ে মৌলভীবাজার। তারপর মৌলভীবাজারের চাঁদনীঘাট এলাকা থেকে সিএনজি অটোরিকশা করে কাদিপুর জনপ্রতি ভাড়া নেবে ৩৫ টাকা। সেখান ২-৩ ঘণ্টার জন্য নৌকা ভাড়া নেওয়া যাবে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায়।