Sylhet Today 24 PRINT

লালমনিরহাটে যুবককে হত্যা করে লাশ পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ২৯ অক্টোবর, ২০২০

লালমনিরহাটের পাটগ্রামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার পর লাশ পুড়িয়ে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। ধর্ম অববমানার অভিযোগ এনে তাকে হত্যা করা হয় বলে জানা গেছে।

বৃহস্পতিবার (২৯ অক্টোবর) মাগরিবের নামাজের আগে বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে ঘটে এ ঘটনা। এরপর লাশ নিয়ে বুড়িমারী প্রথম বাঁশকল এলাকায় জয় ট্রেডার্সের সামনে লালমনিরহাট-বুড়িমারী জাতীয় মহাসড়কের ওপর কাঠখড়ি ও পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা।

এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য হাফিজুল ইসলাম।

ইউপি সদস্য হাফিজুল ইসলাম মোবাইলে ঘটনার বর্ণনা করে বলেন, ‘আসরের নামাজ শেষে বুড়িমারী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে দুই জন অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তি আসেন। মসজিদের খাদেম জুবেদ আলীকে সঙ্গে নিয়ে তাদের একজন মসজিদের ভেতরে প্রবেশ করে কোরআন-হাদিসের বই রাখার তাকে অস্ত্র আছে বলে তল্লাশি শুরু করেন। এক পর্যায়ে মসজিদের সামনে থাকা ৫-৬ জন মুসল্লি মসজিদের প্রবেশ করে ওই ব্যক্তিকে এবং বারান্দায় থাকা অপর ব্যক্তিকে মারধর করেন। খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই দুই ব্যক্তিকে বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদের একটি কক্ষের ভেতরে ঢুকে তালা লাগিয়ে রক্ষার চেষ্টা করি। তবে মুহূর্তে শত শত লোকজন জড়ো হতে থাকে। আমি ও স্থানীয় রফিকুল ইসলাম প্রধান নামে এক ব্যক্তি পাটগ্রাম থানার ওসি সুমন কুমার মোহন্ত, ইউএনও কামরুন নাহার, উপজেলা চেয়ারম্যান রুহুল আমীন বাবুল ও বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম নেওয়াজ নিশাতকে ফোন করে ঘটনাস্থলে আসতে বলি। এরই মধ্যে উত্তেজিত জনতা কারও কথা না শুনে পরিষদের দরজা-জানালা ভেঙে এক ব্যক্তিকে বাইরে বের করে পিটিয়ে হত্যা করে। পরে লাশ নিয়ে লালমনিরহাট-বুড়িমারী জাতীয় মহাসড়কের বুড়িমারী প্রথম বাঁশকল এলাকায় কাঠখড়ি ও পেট্রোল দিয়ে আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দেয়। সেখানে ৫-৬ হাজার উত্তেজিত মানুষ ছিল, কারও কোনও নিয়ন্ত্রণ ছিল না।’

তিনি মোবাইলে আরও বলেন, ‘আমরা লোক দুই জনের সঙ্গে কথা বলার সময় পাইনি। তাই পরিচয় নেওয়া সম্ভব হয়নি। এমন কি তাদের ধর্ম সম্পর্কেও জানা সম্ভব হয়নি।’

বুড়িমারী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন আফিজ উদ্দিন বলেন, ‘আমি আসরের নামাজ শেষ করে বাইরে বের হয়ে যাওয়ার সময় দেখতে পাই খাদেম জুবেদ আলীকে দুই জন অপরিচিত ব্যক্তি সালাম দিয়ে হ্যান্ডশেক করে কথা বলছিল। এরপর তারা মসজিদের ভেতরে ঢুকে যায়। আমিও চলে যাই। পরে ঘটনার কথা এসে শুনেছি। কিন্তু বিস্তারিত কিছু জানি না।’

ওই মসজিদের খাদেম জুবেদ আলী বলেন, ‘আমাকে র‌্যাব ও আর্মির পরিচয় দিয়ে বলা হয় যে, কোরআন শরীফ ও হাদিস রাখার তাকে নাকি অস্ত্র আছে। এ কথা বলে তাদের একজন খোঁজ শুরু করেন। এক পর্যায়ে সবকিছু তছনছ করেন। এসময় মসজিদের বাইরে অবস্থানরত হোসেন আলী (৩৫) নামে এক মুসল্লিসহ ৫-৬ জন মুসল্লি মসজিদে প্রবেশ করে দুই জনকে আটক করে বাইরে নিয়ে আসেন। মসজিদের বারান্দার সিঁড়িতে প্রথম দফায় তাদের মারধর করা হয়। পরে হাফিজুল ইসলাম মেম্বার এসে তাদেরকে নিয়ে যায়। এরপর কি হয়েছে আমি জানি না।’

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম ঘটনাস্থলে পৌঁছে জানান, দুই জনের মধ্যে একজন পুলিশ হেফাজতে আছেন। অপরজনকে পিটিয়ে মারার পর আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে শুনেছি। বিস্তারিত কিছু আর বলতে পারছি না।

পাটগ্রাম থানার ওসি সুমন কুমার মোহন্ত এ বিষয়টি নিয়ে ব্যস্ত আছেন জানিয়ে কোনও কথা বলতে চাননি।

জেলা প্রশাসক আবু জাফর ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, সেখান সার্বিক পরিস্থিতি এখনই বলার মতো নয়। শুনেছি ইউনিয়ন পরিষদসহ বিভিন্ন জায়গায় অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে। একজনকে মেরে আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। এসব সার্বিক বিষয়ে সরজমিনে জানার জন্য ও পরিস্থিতি বোঝার জন্য ঘটনাস্থলের পথে রয়েছি।



টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.