Sylhet Today 24 PRINT

পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে রাজধানীতে গণসংযোগ ও প্রচারপত্র বিতরণ

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ১৯ মার্চ, ২০২৪

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে রাজধানী ঢাকায় গণসংযোগ ও প্রচার কর্মসূচি পালন করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলন।

মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) সকাল ১১টায় এ গণসংযোগ কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের দুই যুগ্ম সমন্বয়কারী মানবাধিকার কর্মী জাকির হোসেন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. খায়রুল ইসলাম চৌধুরী।
এসময় গণসংযোগ ও প্রচার কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করেন সিপিবি সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, ঐক্য ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লাহ তারেক, জাতীয় শ্রমিক জোটের সভাপতি ও জাসদ নেতা সাইফুজ্জামান বাদশা, ঐক্য ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আসাদুল্লাহ তারেক, জাসদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহিল কাইয়ুম, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের যুগ্ম আহবায়ক ডা: অসিত বরণ রায়, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মানবেন্দ্র দেব, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সহ-সাধারণ সম্পাদক ডাক্তার গজেন্দ্রনাথ মাহাতো, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় নেতা দীপায়ন খীসা, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি দীপক শিল, বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি অতুলন দাস, বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের সাবেক সভাপতি অনন্ত বিকাশ ধামাই প্রমুখ।

এছাড়াও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, সিপিপি, বাসদ, ঐক্য ন্যাপ, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন, যুব মৈত্রী, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র মৈত্রী, ছাত্র ফ্রন্ট, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদসহ জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন রাজনৈতিক, প্রগতিশীল সামাজিক সংগঠন ও ছাত্র-যুব সংগঠন এই গণসংযোগ কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করেন।

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী জাকির হোসেন স্বাগত বক্তব্য বলেন, ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৬ বছর অতিক্রান্ত হয়ে যাওয়ার পরেও তা এখনো পূর্ণ বাস্তবায়ন হয়নি। পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনে সর্বস্তরের মানুষকে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্য নিয়েই পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলন নামে একটি জাতীয় প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলা হয়েছে। আমরা পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য আন্দোলন চালিয়ে যাব।

গণসংযোগ ও প্রচার কর্মসূচি চলাকালীন পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বিষয়ে প্রচারপত্র বিতরণ করা হয়।

প্রচারপত্রে, উল্লেখ করা হয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম জুম্ম আদিবাসী অধ্যুষিত বৈচিত্র্যপূর্ণ একটা অঞ্চল। দীর্ঘ দুই যুগের অধিক সশস্ত্র সংঘাতের অবসান ঘটিয়ে এই অঞ্চলের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর তৎকালীন সরকারের সাথে পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির ঐতিহাসিক এক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সকলে তখন আশা করেছিল, সাংবিধানিক কাঠামোতে এইসব আদিবাসী জাতিসমূহের স্বাতন্ত্র্য অস্বীকারের মধ্য দিয়ে যে ঐতিহাসিক ভুল এই রাষ্ট্র করেছিল তার কিছুটা হলেও সংশোধন হবে উল্লিখিত চুক্তির মধ্য দিয়ে। দুঃখজনক হলেও সত্য, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরের ২৬ বছর পেরুলেও এই চুক্তির মৌলিক বিষয়সমূহ বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামকে জুম্ম অধ্যুষিত অঞ্চল হিসেবে তার অনন্য বৈশিষ্ট্যসহ সংরক্ষণ ও বিকাশের কাজটি অসম্পূর্ণ থেকে গেছে। পাহাড়ে এখনো উপনিবেশিক কায়দায় পাহাড়ি মানুষের উপর শাসন ও শোষণ অব্যাহত আছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ার মূলে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব রয়েছে বলে গণসংযোগ কর্মসূচিতে উপস্থিত নেতৃবৃন্দ মনে করেন। এসময় নেতৃবৃন্দ বলেন, এই মার্চ মাস আমাদের জাতীয় জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই মাস স্বাধীনতার মাস। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আপামর মানুষ আশা করেছিল সকলের জন্য মানবিক মর্যাদা নিশ্চিত হয় এমন একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু স্বাধীনতার পরে আজ দীর্ঘ চার দশকেরও অধিক সময় পার হয়ে যাওয়ার পরেও আমাদের বলতে হয়, এই রাষ্ট্র এখনো সকলের জন্য সমান মর্যাদা ও অধিকার নিশ্চিত করতে পারে নি। আমরা চাই এই রাষ্ট্র সকলের জন্য সমান অধিকার নিশ্চিত করবে যেখানে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানুষের অধিকার তথা ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি অনুযায়ী অঙ্গীকারকৃত অধিকারসমূহ প্রতিষ্ঠিত হবে।

গণসংযোগ কর্মসূচি থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির দ্রুত ও যথাযথ বাস্তবায়ন এবং পার্বত্য সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য ৫ দফা এবং সমতলের আদিবাসীদের জন্য ২টি পৃথক দাবি উত্থাপন করা হয়। দাবিগুলো হচ্ছে-

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য সময়সূচী ভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করে চুক্তির দ্রুত ও যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে; পাহাড়ে সামরিক কর্তৃত্ব ও পরোক্ষ সামরিক শাসনের স্থায়ী অবসান করতে হবে; আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদকে প্রতিনিধিত্বমূলক গণতান্ত্রিক করা এবং স্থানীয় শাসন নিশ্চিত করতে পার্বত্য চুক্তি মোতাবেক এসব পরিষদের যথাযথ ক্ষমতায়ন করতে হবে; পার্বত্য ভূমি সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনকে কার্যকরের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু ও ভারত প্রত্যাগত জুম্ম শরণার্থীদের পুনর্বাসন করে তাঁদের ভূমি অধিকার নিশ্চিত করতে হবে; এবং দেশের মূল স্রোতধারার অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও স্থায়িত্বশীল উন্নয়নে পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের অংশীদারত্ব নিশ্চিত করতে হবে।

সমতলের আদিবাসীদের জন্য দাবিসমূহ হচ্ছে, ইউনিয়ন পরিষদসহ সকল স্তরের স্থানীয় সরকারে সমতলের আদিবাসীদের জন্য বিশেষ আসন সংরক্ষণ এবং আদিবাসী জনগণের জীবনমান উন্নয়নে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে; এবং সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠন করতে হবে।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.