Sylhet Today 24 PRINT

ভাতা নয়, গেজেটে নাম দেখে মরতে চান মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জলিল!

জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ থেকে |  ১৩ জুন, ২০১৬

জীবনকে তুচ্ছ করে রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেছেন আব্দুল জলিল। সংসার আর জীবনের প্রতি তার কোন মায়া ছিল না। বারুদের গন্ধ তাকে পাক বাহিনীকে পরাস্ত করতে যুদ্ধের মাঠে নিয়ে যেত। সেই মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জলিলের মনে আজ অব্যক্ত যন্ত্রণা। জীবন সায়াহ্নে এসে রণাঙ্গনের এই অকুতোভয় সৈনিক হেরে যাচ্ছেন আমলাতন্ত্রের কাছে।

মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে সনদপত্রসহ সব প্রমাণ তার রয়েছে, কিন্তু গেজেটে তার নাম নেই বলে সরকারী ভাতা পাচ্ছেন না। সরকারী গেজেটে নাম ওঠানোর জন্য অনেক ঘুরেছেন তিনি, কিন্তু কোন কাজই হয়নি। শেষমেশ হাল ছেড়ে দিয়েছেন এ মুক্তিযোদ্ধা।

আব্দুল জলিল ঝিনাইদহ সদর উপজেলার রাঙ্গিয়ারপোতা গ্রামের মৃত ছানারুদ্দীনের ছেলে। তিনি ১৯৫২ সালে জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমান তিনি সাধুহাটী ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামে বড় ছেলে ফারুক হোসেন ও ছোট ছেলে জিয়ার কাছে বসবাস করেন।

মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জলিল জানান, ১৯৭১ সালে তার বয়স যখন ১৯ বছর তখন তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। তার কমান্ডার ছিলেন চুয়াডাঙ্গা জেলার সলুয়া গ্রামের ওয়াজেদ আলী। তার নেতৃত্বে তিনি কোটচাঁদপুরের ধোপাবিলা, চুয়াডাঙ্গার খেজুরতলা, গড়াইটুপি, বংকিরা, গোবিন্দপুর ও রাঙ্গিয়ারপোতা এলাকায় সক্রিয় ছিলেন।

সে সময় তার সহযোদ্ধা ছিলেন, গড়াইটুপির মরহুম সাবদার হোসেন, মোহাম্মদপুর গ্রামের মরহুম এড আইয়ুব হোসেন, খেজুরতলার মরহুম ফুটান, ধোপাবিলা গ্রামের আনসার, আবু তৈয়ব, আব্দুল প্রমুখ। এক সঙ্গে যুদ্ধ করে সহকর্মীদের গেজেটে নাম উঠলেও আব্দুল জলিল বঞ্চিত হয়েছেন। কাগজপত্র নিয়ে তিনি অফিসে অফিসে ঘুরেছেন, কিন্তু কেউ কথা রাখেনি। হবে হচ্ছে আশ্বাস দিয়ে সবাই তাড়িয়ে দিয়েছেন।

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, দেশের দুরবস্থার এমন চিত্র হবে আগে জানলে যুদ্ধ করতাম না। আব্দুল জলিল মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে প্রমাণাদি দেখিয়ে বলেন, ২০০১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কেন্দ্রীয় কমান্ডের চেয়ারম্যান আব্দুল আহাদ চৌধুরী সাক্ষরিত সনদ তার রয়েছে (যার নং ৫৪১৪২)।

মুক্তিযোদ্ধা পুনর্বাসন সোসাইটি থেকেও তার সনদ প্রদান করা হয়েছে যার নং ৫৮৩৭। তিনি ঝিনাইদহ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের একাধিক নেতার দ্বারস্থ হয়েছেন বলে জানান। কিন্তু কেউ তাকে পাত্তা দেয়নি। সবাই তার কাছে টাকা চেয়েছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন। কিন্তু বর্তমান পক্ষাঘাতগ্রস্ত আব্দুল জলিল এখন কোথায় টাকা পাবেন?

এ বিষয়ে মালয়েশিয়া প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জলিলের ছেলে ফারুক হোসেন জানান, তার বাবা গেজেটে নাম ওঠানোর জন্য ২০১১ সালে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর কাছে দরখাস্ত করেন। ২০১১ সালের ৯ মার্চ প্রতিমন্ত্রী ১২৮৯ নং স্মারকে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সচিবকে নোট দিয়েছিলেন। কিন্তু ৫ বছর পার হলেও কোন সাড়া নেই। বাবার নাম গেজেটে ওঠেনি।

মৃত্যুর আগে তিনি মুক্তিযোদ্ধা ভাতা নয়, গেজেটে নাম ওঠা দেখে মরতে চান। তবেই তিনি মনে করবেন দেশের কল্যাণে তার যুদ্ধ সার্থক ছিল বলেন গ্রামের বাড়িতে থাকা ছোট ছেলে জিয়ারুল।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.