Sylhet Today 24 PRINT

সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জঙ্গিবাদবিরোধী স্কোয়াড গঠনের ডাক গণজাগরণ মঞ্চের

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ১৫ জুলাই, ২০১৬

সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সারাদেশে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছে গণজাগরণ মঞ্চ। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে গণসংযোগ, মিছিল ও স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে জঙ্গিবাদ বিরোধী স্কোয়াড গঠনেরও ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি।

যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি কার্যকর আন্দোলন নিয়ে সুচনা হওয়া সংগঠন গণজাগরণ মঞ্চ এবার সাম্প্রদায়িকতা ও সাম্প্রতিক জঙ্গিবাদী হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে মাঠে নামার ঘোষণা দেয় শাহবাগ থেকে। শুক্রবার বিকেলে শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের উদ্যোগে "সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গীবাদবিরোধী নিরাপদ বাংলাদেশ চাই" স্লোগানে অনুষ্ঠিত হয় নাগরিক সমাবেশে বক্তারা বলেন, ইসলামের নামে যারা হত্যাযজ্ঞ শুরু করেছে তারা ইসলামের ক্ষতি করছে। প্রগতির বাংলাদেশকে ধ্বংস করাই তাদের লক্ষ্য।

নাগরিক সমাবেশে মানবাধিকারকর্মী খুশি কবির বলেন, "গুলশান এবং শোলাকিয়ার ঘটনা যারা ঘটিয়েছে, তারা বিবেকহীন। এদের কর্মকাণ্ডকে প্রতিহত করতে আমাদের কাজ করে যেতে হবে। এদের নৃশংসতায় ভয় পেয়ে থেমে যাওয়া মানে পরাজিত হওয়া। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ এই অপশক্তির কাছে পরাজিত হবে না"।

মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল বলেন, "এদেশের সাধারণ মানুষ মনেপ্রাণে মৌলবাদ জঙ্গীবাদকে ঘৃণা করে। একজন মুক্তিযোদ্ধা, নারী এবং মানবাধিকারকর্মী হিসেবে আমি বিশ্বাস করি, এদেশে জঙ্গীবাদ কিছুতেই ঘাঁটি গেড়ে বসতে পারবে না।"

গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার বলেন, যখন একাধারে একের পর এক লেখক, প্রকাশক, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, শিক্ষক, ইমাম, পুরোহিতসহ বিভিন্ন ধর্মের মানুষকে হত্যা করা হলো, আমরা তার প্রতিবাদ করেছি, বিচার চেয়েছি। অথচ খুনিদের বিচার করার বদলে বিচারপ্রার্থীদের হেনস্তা করা হয়েছে, নানাভাবে গৃহবন্দী করে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে।

আজকের এই পরিস্থিতি তৈরি করে জঙ্গীবাদের উত্থান ঘটানোর জন্য বারবার গণজাগরণ মঞ্চকে থামানোর চেষ্টা করা হয়েছে, সেটি আপনারা দেখেছেন। আমরা যখন পুরো বছর জুড়ে সহযোদ্ধাদের হত্যার বিচারের দাবিতে সোচ্চার, আমাদের নানাভাবে বাধা দেয়া হয়েছে, আক্রমণ করা হয়েছে। আজকে শুধু দায়মুক্ত হলে চলবে না, কাউকে না কাউকে এই পরিস্থিতির দায় নিতে হবে।

দেশকে খাদে ফেলে কাউকে রাজনীতি করতে দেয়া হবে না। জাতীয় সংকটেও কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ না করলে তাদের বিরুদ্ধেও রাস্তায় নামতে হবে। জনগণকে বিপদে রেখে যারা ক্ষমতায় থাকা কিংবা ক্ষমতায় যেতে চাইবে তাদের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।

প্রতিবাদ, মানববন্ধন আর নয়। এবার হবে প্রতিরোধ। সারাদেশ থেকে সাম্প্রদায়িকতা জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। শান্তি শান্তি অনেক করেছি। শান্তির পথ খোলা না রাখলে অশান্ত হয়ে দেখানো হবে। রক্ত দিয়ে হলেও রক্তের হোলিখেলা আর বিদেশী বিমান ঠেকানো হবে।

আজকে সময় এসেছে এই অপশক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করার। এই প্রতিরোধের আহ্বানে যদি আমাদের টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত রোডমার্চ করে যেতে হয়, তবে তাই করতে হবে। সারা দেশের গ্রামেগঞ্জে প্রতিরোধ গড়ে তুলে এই অপশক্তিকে উৎখাত করতে হবে।"

জঙ্গীবাদ ও সাম্প্রদায়িক হামলা প্রতিরোধে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করেন ইমরান এইচ সরকার। আগামী ১৮ জুলাই থেকে মাসব্যাপী সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গীবাদবিরোধী গণসংযোগ কর্মসূচি "প্রতিরোধ ঘরে ঘরে" শিরোনামে শুরু হবে। সারাদেশের জেলা উপজেলা, গ্রামেগঞ্জে, প্রতিষ্ঠানে জঙ্গীবাদবিরোধী লিফলেট, পোস্টার পৌঁছে দেয়া হবে, প্রত্যেক ঘরে ঘরে এই কর্মসূচি নিয়ে যাবে গণজাগরণ মঞ্চ। সোমবার সকাল ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে শুরু হবে এই কর্মসূচি।

২০ জুলাই বিকাল ৪টায় শাহবাগসহ সারা দেশে একযোগে পালিত হবে অব্যাহত জঙ্গী এবং সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল এবং সমাবেশ।

২২ জুলাই শাহবাগে জঙ্গীবাদবিরোধী গণমিছিল অনুষ্ঠিত হবে। সেখান থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা দেয়া হবে।

এছাড়াও জঙ্গীবাদ মোকাবেলায় দেশের সকল সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসাসহ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে "জঙ্গীবাদ এবং সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী স্কোয়াড" গঠনের ঘোষণা দেন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র।

সভাপতির বক্তৃতায় শিক্ষাবিদ ড. অজয় রায় বলেন, "গুলশান হামলায় যে পাঁচ জঙ্গীর পরিচয় পাওয়া গেছে, তারা প্রত্যেকেই উচ্চ মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান। এতোদিন শুধু মাদ্রাসার ছাত্রদের জঙ্গীবাদের দোষ দেয়া হতো। আমাদের এখন বিশ্লেষণ করার সময় এসেছে, তথাকথিত সেকুলার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্ররা কেন জঙ্গীবাদের দিকে ঝুঁকে পড়ছে।

আমাদের সরকার, আইনশৃঙ্খলা বাহিণীর হর্তাকর্তা, গোয়েন্দাদের একটু সচেতন হতে হবে, কর্মঠ হতে হবে।

জঙ্গীদের যারা প্রশ্রয় দিচ্ছে, প্রশিক্ষণ দিচ্ছে, মোটা দাগের টাকা দিচ্ছে, তাদের সনাক্ত করতে হবে।

পুলিশকে এমনভাবে তাদের অভিযান পরিচালনা করতে হবে, যেন তথাকথিত দোষী ব্যক্তি মারা না যায়। তাকে জীবন্ত রাখতে পারলে হত্যাকাণ্ডের পেছনে কারা আছে, তা খুঁজে বের করা সম্ভব হবে।"

সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি ইমরান হাবিব রুম্মনের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি লাকি আক্তার, ভাস্কর রাসা,বাংলাদেশ সম্মিলিত ইসলামিক জোটের সভাপতি আলহাজ হাফেজ মাওলানা জিয়াউল হাসান প্রমুখ।

সমাবেশ শেষে গণজাগরণ মঞ্চের পতাকা মিছিল শাহবাগ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার ঘুরে আবার শাহবাগে ফিরে আসে।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.