Sylhet Today 24 PRINT

ঝিনাইদহের জঙ্গি আস্তানার বাড়ির মালিক, ইমামসহ ৫ জন ১১ দিন ধরে ‘নিখোঁজ’

জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ |  ১৭ জুলাই, ২০১৬

ঝিনাইদহে জঙ্গি নিবরাস ও আবির সোনালীপাড়ার যে বাসায় থাকতেন ওই বাড়ির মালিক সাবেক সেনাসদস্য কওছার আলী তাঁর কলেজপড়ুয়া দুই ছেলেসহ এবং পাশের মসজিদের ইমাম মো. রোকনুজ্জামান ও সহকারী ইমাম সাব্বির হোসেনকে ৬ জুলাই ভোর থেকে পাওয়া যাচ্ছে না।  

বাড়ির মালিক কওছার আলীর স্ত্রী বিলকিস নাহারের অভিযোগ পুলিশ পরিচয়ে তাদের তোলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।  তবে ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেন জানান তাদের আটকের বিষয়ে তিনি ‘কিছু জানেন না’।

অভিযোগ উঠেছে, সোনালী পাড়ার দারুস সালাম মসজিদের ইমাম ছিলেন রোকনুজ্জামান। তিনি নিবরাজসহ আট জনকে স্থানীয় কাউসার আলীর বাড়ির মেসে তোলেন। তিনি আগে থেকেই হয়তো নিবরাসদের পরিচয় জানতেন।

রোকন যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার শংকরপুর ইউনিয়নের নাইড়া গ্রামের মৃত আইনুদ্দিনের ছেলে। ঝিনাইদহে থেকে তিনি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতেন। তবে তিনি বাড়ির সাথে যোগাযোগ রাখতেন কম।

রোকনুজ্জামানের ভাবি রাবেয়া খাতুন বলেন, “আমার শ্বশুর বেঁচে নেই। তাই রোকন বাড়ি থেকে লেখাপড়ার খরচ নিত না। নিজের উপার্জনের টাকায় চলত। মাঝে মাঝে বাড়িতে বেড়াতে আসত। রোকন ভালো ছেলে। অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করেছে।

“তিনি আরো বলেন, স্থানীয় বাগআচঁড়া মাদ্রাসা থেকে আলিম পাস করার পর সে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেয়। কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পায়। এরপর ঝিনাইদহ শহরে থেকে পড়াশুনার পাশাপাশি একটি মসজিদে ইমামতি করত। ঈদের আগে থেকে তিনি আর বাড়ি আসেননি বলে জানান রাবেয়া।

এদিকে শনিবার জানা যায় কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় বন্দুকযুদ্ধে নিহত আবির রহমানও গুলশান হামলায় নিহত নিবরাসের সঙ্গে এক মাস ছিলেন। তিনি নিবরাস ইসলামের খালাতো ভাই পরিচয় দিয়ে থাকতেন। জঙ্গী আবিরের ছবি দেখে শনিবার ওই মেসের কাজের বুয়া ও এলাকার যুবকরা এ তথ্য জানান।

সোনালীপাড়ার বাসিন্দারাও জানিয়েছেন আবির রহমানকে তারা নিবরাস ওরফে সাঈদের সাথে দেখেছেন। এই নিয়ে ঝিনাইদহ জঙ্গী আস্তানায় থাকা ৮ জনের মধ্যে দুই জনের পরিচয় পাওয়া গেলে। বাকী ৬ জন কারা তা এখনো রয়েছে রহস্যময়।

পরিবারের দাবি অনুযায়ী, আবির রহমান (২২) চার মাস ধরে নিখোঁজ ছিলেন। তবে তাঁর নিখোঁজ থাকার বিষয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে রাজধানীর ভাটারা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয় ৬ জুলাই। এর পরদিন ফেসবুক ও গণমাধ্যমে ছবি দেখে স্বজনেরা জানতে পারেন, শোলাকিয়ায় নিহত হয়েছেন আবির।

ঝিনাইদহ শহরে হামদহ এলাকার সোনালীপাড়ার ওই জঙ্গি আস্তানার পাশেই রয়েছে খেলার মাঠ। সোনালীপাড়ার তরুণদের সঙ্গে ফুটবল খেলায় অংশ নিতেন সাঈদ নামধারী নিবরাস ইসলাম। ওই মাঠে খেলতেন এমন কয়েকজন স্থানীয় তরুণকে আবিরের ছবি দেখালে তারা তাকে নিবরাস ইসলামের খালাতো ভাই বলে শনাক্ত করেন। ছবি দেখে তাদের ভাষ্য এটা তো ‘সাঈদ ভাইয়ের খালাতো ভাই’! জঙ্গিদের ভাড়া করা ওই বাড়িতে রান্নার কাজ করতেন যে নারী, তিনিও আবিরের ছবি দেখে শনাক্ত করেছেন।

এর আগে বাড়ির মালিকের স্ত্রী বিলকিস নাহার, গৃহকর্মী ও ফুটবল খেলার সাথিরা ছবি দেখে নিবরাসকে শনাক্ত করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলঅকার তরুনরা জানান, এই ছবি সাঈদ ওরফে নিবরাসের খালাতো ভাই আবিরের। তিনি সবার সঙ্গে মিশতেন না, ফুটবলও খেলতেন না। মাঠের পাশে বসে সময় কাটাতেন। মাঝেমধ্যে মাঠের পাশে ছোট জায়গায় বাচ্চাদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলতেন। ওই দুই স্থানীয় তরুণ বলেন, ‘ওই ভাইয়ের নাম কী জিজ্ঞাসা করলে জবাব দেওয়ার আগেই সাঈদ ভাই বলতেন, এটা আমার খালাতো ভাই।’

তাঁরা বলেন, আবিরের চলাফেরা কিছুটা অপ্রকৃতিস্থ ছিল। কেমন যেন হেলেদুলে হাঁটতেন। আর সাঈদ (নিবরাস) ভাই সব সময় কালো মিশ্রিত জামা কাপড় পরতেন। আবিরদের মেসে তিন বেলা রান্না করা কাজের বুয়া জানান, ‘সাঈদ ভাই (নিবরাস) আর ছবির এই ভাই (আবির) একই রুমে থাকতেন। তাঁরা বেশির ভাগ সময় ঘরেই সময় কাটাতেন।’

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.