Sylhet Today 24 PRINT

বন্যার কারণে ৩ সহস্রাধিক ভারতীয়ের আশ্রয় হল বাংলাদেশে

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ৩১ জুলাই, ২০১৬

প্রবল বন্যার কারণে ৩ সহস্রাধিক ভারতীয় নাগরিকের বর্তমানে ঠাই হল বাংলাদেশে। সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরের বিভিন্ন বাড়িঘরে তারা আশ্রয় নিয়েছেন। বাংলাদেশিরাও সহায়তার হাত বাড়িয়ে তাদের আশ্রয় দিয়েছেন। খেতেও দিচ্ছেন খাবার।

বন্যায় ভারত থেকে ভেসে আসা নাগরিকদের আশ্রয় দিয়ে এমন উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে লালমনিরহাটের মোঘলহাট সীমান্তের মানুষ।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোঘলহাট ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী চওড়াটারী গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে এমন দৃশ্য। ভারতীয় শত শত নারী-পুরুষ আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশিদের ঘরবাড়িতে। তাদের সঙ্গে রয়েছে শিশু সন্তানসহ গবাদি পশুও।

জানা গেছে, ভারতে প্রবল বন্যার কারণে দিশেহারা হয়ে পড়ে অনেক ভারতীয় নাগরিক। জীবন বাঁচাতে তারা গত মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) মধ্যরাত থেকে বানে ভেসে আসতে থাকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে। ওই সময় সাত-পাঁচ না ভেবে রাত জেগে প্রতিবেশি দেশের অসহায় বানভাসিদের নদী থেকে উদ্ধার করে সীমান্তে বসবাসকারী মানুষ। এরপর তারা বিভিন্ন স্থানসহ নিজ নিজ বাড়িতেও আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে।

প্রতিবেশি দেশের বিপন্ন মানুষদের উদ্ধার করার পরে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশিরা যে মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছে তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে ভারতীয় নাগরিকরা।

বন্যায় ভেসে আসা একাধিক ভারতীয় নাগরিক জানান, ‘গত মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) মধ্য রাতে তাদের জারিধরলা নদী উত্তাল হয়ে উঠে। এসময় অনেক গবাদি পশু পানিতে ভেসে যায়। তারা জীবন বাচাঁতে কোনো কিছু না ভেবে ভেলা ও নৌকায় বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এসে আশ্রয় নেয়। সেই রাতে অনেককেই স্থানীয় মোঘলহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে থাকার ব্যবস্থা করা হয়। এছাড়াও সেখানে স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় স্থানীয়রা তাদের সবাইকে নিজ নিজ বাড়িতে আশ্রয় দেয়।

ভারতের কুচবিহার জেলার জারিধরলা গ্রামের আব্দুর রহিমের বৃদ্ধা স্ত্রী ফিরোজা বেগম প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ তাদের আশ্রয় না দিলে তারা পানিতে মরে ভেসে যেতেন।’ তিনি এসময় আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে বলেন, ‘তাদের যারা আশ্রয় দিয়েছে তারাও গরীব মানুষ। কিন্তু অনেক কষ্ট হলেও তাদের তিন বেলা খাবার খেতে দিচ্ছেন।’

এবিষয়ে ভারতের নগরটারীর হায়তুননেছা নামের অপর এক বৃদ্ধা বলেন, ‘তিনিসহ পরিবারের অপর ৩ নারী সদস্য আশ্রয় নিলেও বাড়িতে ঝুঁকি নিয়ে থেকে গেছেন পুরুষ সদস্যরা। বাংলাদেশ থেকে তাদের নদী পথে খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে অনেক কষ্ট করে।’

এসময় জনৈক ভারতীয় বৃদ্ধ আব্দুর রহীম বলেন, ‘সীমান্ত পার্শ্ববর্তী ৪টি ভারতীয় গ্রাম জারিধরলা, দরিবোস, বাদুর কুটি ও নগড়টারী গ্রামের প্রায় ৩ হাজার মানুষ বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের সহযোগিতার কারণেই আজ তারা সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে বেঁচে আছেন।’

এবিষয়ে মোঘলহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেন, ‘বন্যায় নাকাল হয়ে অনেক ভারতীয় নাগরিক গত মঙ্গলবার মধ্য রাত থেকে তার ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে।’

অনেকেরই মন্তব্য, বন্যার হিংস্রতাকে পরাজিত করে জয় হয়েছে মানবতার। তাতে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়াও।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.