Sylhet Today 24 PRINT

‘ভূতের আছর’, তাই শিকলে আটকে গেছে দিপালীর জীবন

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ০৭ আগস্ট, ২০১৬

মাত্র আড়াই মাস আগে বিয়ে হয়েছিল গাইবান্ধা সদর উপজেলার দিপালী রাণীর। কিন্তু তার শরীরে অলংকারের পরিবর্তে জুটেছে লোহার শিকল।

বিয়ের আড়াই মাসের মধ্যে 'পাগল' পরিচয়ে শিকলবন্দি হয়ে গৃহবধু দিপালী রাণীকে বাবার বাড়িতে ফিরে আসতে হয়। তার ওপর 'ভূতের আছর' হয়েছে বলে পায়ে লোহার শিকল পরিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে।

দিপালী এখন সদর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়নের চান্দেরঘাট মাঝিপাড়া গ্রামে তাঁর বাবার বাড়িতে আছেন। লোহার বেড়ি লাগিয়ে তাঁকে ফেলে রাখা হয়েছে বাড়ির আঙিনায়। কারও সঙ্গে কথা বলেন না দিপালী, মাঝে মাঝে মাথা তুলে এদিক-ওদিক দেখেন। দিপালীকে দেখতে তাদের বাড়ির উঠোনে উৎসুক মানুষের ভীড়।

বাড়ির লোকজন বলছেন, দিপালীকে 'পাগলী' বানিয়ে বাপের বাড়িতে পাঠানো হয়েছে।

দিপালীর স্বামী গণেশ বলেন, "ওর (দিপালী) ওপর ভূতের আছর পড়েছে। গ্রাম্য কবিরাজ-ওঝার কাছে ঝাড়-ফুঁকসহ কবিরাজি চিকিৎসা হয়েছে। কোনো কিছুতেই সুস্থ না হওয়ায় তাকে নিজের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।"

দিপালীর বাবা সুশীল কুমার দাস আক্ষেপ করে বলেন, "এ মেয়েকে নিয়ে আমি এখন কি করবো?"

পরিবারের পক্ষ থেকে জানা গেছে, দিপালী তিন বোন এক ভাইয়ের মধ্যে সবার বড়। মাছ ব্যবসায়ী বাবা যে রোজগার করেন, তা দিয়ে সুন্দরভাবে তাদের সংসার চলছিল।

মা অমলা রানী জানান, "২০০২ সালের শেষ দিকে কিশোরী দিপালী রানী অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকে। কম কথা বলা, একা জোরে গান গাওয়া, হঠাৎ করে বাড়ি থেকে রাস্তায় বেরিয়ে পড়া- এসব করতো সে।"

মেয়ের এ অস্বাভাবিক আচরণ দেখে বাবা সুশীল কুমার দাস চিন্তিত হয়ে পড়েন। তাঁকে কবিরাজের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসা চলে দীর্ঘদিন। কিন্তু তাতে দিপালীর তেমন কোনো পরিবর্তন আসে না।

এক পর্যায়ে কবিরাজ সুশীল দাসকে পরামর্শ দেন মেয়ের বিয়ে দেয়ার জন্য। তাকে জানানো হয়, বিয়ের পর এসব ভালো হয়ে যাবে।

গত বৈশাখ মাসে সাঘাটা উপজেলার পুটিমারি গ্রামের মৃত নাদারু দাসের ছেলে জেলে পরিবারের সন্তান গণেশ দাসের সঙ্গে দিপালীর (২২) বিয়ে দিয়ে দেন বাবা।জামাইকে যৌতুক হিসাবে দেন ২০ হাজার টাকা। আনন্দ উৎসবের মধ্যই দিয়ে দিপালী শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে ওঠে।

বিয়ের পর প্রায় দুমাস ভালোই কাটছিল দিপালীর। কিন্তু এরই মধ্যে এক সময়ে দিপালী রানী তার শ্বশুর বাড়িতে নতুন করে অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকে।

গত ১ আগস্ট দিপালীর স্বামী গনেশ চন্দ্র ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন দিপালীর হাত-পা বেঁধে তার পায়ে শিকল পরিয়ে দেয়। গ্রাম্য কবিরাজ দিয়ে চিকিৎসা করায়।

কিন্তু দিপালীর মানসিক উন্নতি না হওয়ায় একদিন শিকলবন্দি অবস্থায় দিপালীকে শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে আসেন গণেশ। এরপর সে রাতেই গণেশ শ্বশুর বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়।

মা অমলা রানীসহ বাড়ির সবাই দিপালীর এই অবস্থা দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। মেয়েকে অনেক প্রশ্ন করেও কোনো উত্তর পাননি তিনি।

এলাকার লোকজন বলেন, উন্নত চিকিৎসায় দিপালী সুস্থ হয়ে উঠবে। কিন্তু মেয়ের চিকিৎসার ব্যবস্থা করার মতো আর্থিক সংগতি নেই বাবা সুশীল চন্দ্র দাসের। তাই অসহায় চোখে মেয়ের দুর্দশা দেখা ছাড়া এখন কিছুই করার নেই তাঁর।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.