Sylhet Today 24 PRINT

ঝিনাইদহে গুদাম থেকে ১৯ কোটি টাকার সার উধাও!

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: |  ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ বাফার সার গুদাম থেকে হাজার হাজার বস্তা ইউরিয়া সার গায়ের হওয়ার চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। এই সার কি ভাবে গায়েব হলো তার কোন হিসাব নেই কর্মকর্তাদের কাছে। অভিযোগ উঠেছে গায়েব হওয়া সারের যোগানদাতা প্রতিষ্ঠানের কাছে থেকে রাতের আধারে গ্রহণ করে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে আর আনলোড করা হয়নি।

তবে সার গুদামের ইনচার্জ মাসুদ রানা বলেছেন, ২০১৫/১৬ অর্থ বছরে ৫৪৭ মেট্রিক টন অর্থাৎ ১০ হাজার ৯৪০ বস্তা সারের কোন হদিস নেই। যার আন্তর্জাতিক বাজার মূল্য ১৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। তিনি জানিয়েছেন এই সার তিনি স্টকে কম পেয়েছেন। সার গায়েব হওয়ার বিষয়ে বিসিআইসি কর্তৃপক্ষ একেবারেই নীরব রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে

বাফার গুদাম সূত্রে জানা গেছে, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলায় ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ বাফার গুদাম থেকে সার সরবরাহ করা হয়। বিসিআইসির ২১৫ জন তালিকাভুক্ত ডিলার এই সার নিয়ে থাকেন। সার ডিলারদের অভিযোগ বাফার কর্মকর্তারা আর্থিক সুবিধা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কম ও জমাট বাঁধা সার গ্রহণ করে থাকেন। এ নিয়ে তাদের ভোগান্তির শেষ নেই।

সূত্রে জানায়, গত ২৪ জুলাই যশোরের নওয়াপাড়ার বালব ও চট্রগ্রামের নবাব এন্টারপ্রাইজের ওজনে কম সার বাফার ইনচার্জ মাসুদ রানা বুঝে নেন। এ নিয়ে ডিলারদের মধ্যে হৈচৈ পড়ে যায়। প্রতি বস্তায় সার কম থাকার কারণে সার ডিলারদের মাঝে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ফলে উক্ত সার আনলোড বন্ধ হয়ে যায়। পরে আবারো এই দুই সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ওজনে কম সার বিশেষ কায়দায় বাফারে ঢুকিয়ে দিতে সমর্থ হয়। আর্থিক সুবিধা নিয়ে ইনচার্জ মাসুদ রানা কম ওজনের সার বুঝে নেন বলে কথিত আছে। কালীগঞ্জ বাফার গোডাউনের ইউরিয়া সার নিয়ে বেপরোয়া অর্থ বাণিজ্য করা হচ্ছে বলেও শোনা যায়। গোডাউনের ইনচার্জ, হিসাব রক্ষক ও লোড আনলোডের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যৌথ ভাবে এই অর্থ বাণিজ্যের সাথে জড়িত থাকলেও তাদের কিছুই হয় না।

তাদের কারণেই কোট কোটি সারের কোন হদিস মিলছে না এমন কথাও উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে ঝিনাইদহে পাঠানো সার দীর্ঘদিন বন্দরের ঘাটে পড়ে থাকায় সারের ওজন কমে যাওয়ার পাশাপাশি গুনগতমান নষ্ট হয়ে গেছে। এসব সারের বস্তা ফাটা, ছেড়া ও জমাট বাঁধার কারণে ডিলাররা নিতে চান না। ফলে কালীগঞ্জ বাফার গোডাউনে ৩/৪ হাজার বস্তা জমাট বাঁধা সার পড়ে আছে। এই নিম্নমানের সার কৃষকদের মাঝে বিক্রি করা হচ্ছে।

সম্প্রতি বিসিআইসির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইকবাল ও পরিচালক আব্দুল হাই কালীগঞ্জ বাফার গোডাউনে এসে সঠিক ওজন দিয়ে জমাট বাঁধা এ সব সার রিপ্যাক করে বিতরণের নির্দেশ দিয়েছিলো।

কিন্তু প্রায় ৬ মাস পেরিয়ে গেলেও জমাট বাঁধা সার তেমনই পড়ে আছে। সেগুলো রিপ্যাক করা হয়নি। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এই বিভাগটির কালীগঞ্জ বাফার সার গোডাউনের দায়িত্বশীলরা দুর্নীতি ও চরম অবহেলার পরিচয় দিচ্ছেন। তাদের কারণে কালীগঞ্জ বাফার সার গোডাউনে এক বিশৃঙ্খল পরিবেশ বিরাজ করছে।

এ বিষয়ে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ বাফার সার গোডাউনের ইনচার্জ মাসুদ রানা সার কম হওয়ার তথ্য স্বীকার করে জানান, তিনি ৩ মাস হলো এখানে এসেছেন। তিনি এসে ৫৪৭ মেট্রিক টন সার কম পেয়েছেন।

এই সার আগে থেকেই স্টক রেজিস্টার কম ছিল বলে তিনি জানান। জমাট বাঁধা সারের ওজন ঠিক করে রি প্যাক করা বিসিআইসি চেয়ারম্যানের নির্দেশ মুখে পেলেও লিখিত কোন আদেশ আসেনি বলে জানান তিনি।   

ইনচার্জ মাসুদ রানা আরো বলেন, বালব ও নবাব ইন্টার প্রাইজের সার ওজনে কম ছিল। পরে তারা ঠিক করে দিয়েছে। বাংলাদেশ ফারটিলাইজার এসোসিয়েশন ঝিনাইদহ শাখার সভাপতি আলহাজ্ব জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, আমরা শুনেছি বাফার গোডাউনে ৬/৫’শ মেট্রিক টন সার সর্ট রয়েছে। এখন সেগুলো কি ভাবে রিকোভারি করবে সেটা বাফার কর্তৃপক্ষের ব্যাপার। তবে তিনি অভিযোগ করেন, জমাট বাঁধা ও নিম্নমানের সার ডিলারদের কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.