Sylhet Today 24 PRINT

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে দিনরাত হাত পাখা তৈরিতে ব্যস্ত কারিগররা

মো. জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ  |  ০১ মার্চ, ২০১৭

গরমের প্রভাব আসার সাথে সাথে ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের হাত পাখা তৈরির কারিগরদের যেন বাতাস খাওয়ার সময় নেই। গরমে মানুষকে একটু শান্তির পরশ দিতে দিন রাত পরিশ্রম করে তৈরি করছে কালীগঞ্জের তালপাখা কারিগররা। পূর্ব পুরুষের ব্যবসা করে এখনো সংসার চালাচ্ছে কালীগঞ্জ প্রায় অর্ধশত পরিবার। গরম শুরুর সাথে সাথে তাদের কাজ বেড়ে গেছে। তাল পাখা তৈরি তাদের পেশা ও বাণিজ্যিক ভিত্তিতে করে থাকে। এদের কোন জমি নাই যে মাঠে কৃষি ফসল চাষ করবে। এদের প্রধান পেশা পাখা তৈরি একমাত্র পেশা।

ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ উপজেলার দুলালমুন্দিয়া, পারিয়াট, চাচড়া,আড়পাড়া এলাকা ঘুরে পাখা তৈরি কারিরা বলেন, গরম পড়লেই পাখা পল্লীর কারিগরদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। যেন কথা বলার সময় তাদের নেই। শরীর দিয়ে নোনতা পানি বের হলেও নিজেরা পাখা দিয়ে বাতাস খাওয়ার সময় নেই তাদের। কেউ বা পাতা কেটে সাইজ করছে, কেউ সেলাই করছে আবার কেউ বা পাখা তৈরি করেছে কেউ আবার প্রস্তুত হওয়া পাখা গুলো বিক্রির জন্য বোঝা বাধছে।

পাখা তৈরির কারিগর আব্দুল গফুর বলেন, তাদের পূর্ব পুরুষরা এই তালপাখা তৈরি করে জীবন জীবিকা চালাতো। ফলে আমরাও পূর্ব পুরুষের কাজটি ধরে রেখেছি। তিনি জানান,কালীগঞ্জে প্রায় ৫০টি পরিবার পাখা তৈরির কাজ করে থাকেন।

কুষ্টিয়া থেকে আসা পাইকারি ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন জানান, কালীগঞ্জের তালপাখার ক্রেতাদের কাছে চাহিদা ব্যাপক। তাই এখান থেকে পাখা কিনতে এসেছি।

পাখা করিগর নজরুল ইসলাম জানান, পাখা তৈরির প্রধান উপকরণ তালপাতা সংগ্রহ করা হয় শীতকালে। মাগুরা, ফরিদপুর, রাজবাড়ী এলাকা থেকে পাতা সংগ্রহ করে এনে পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয়। তারপর পাতা ভিজে নরম হয়ে গেলে পানি থেকে উঠিয়ে তা কেটে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। একটা পাতায় দুটো পাখা হয়। এই পাতা পুনরায় বেঁধে রাখা হয়। এভাবে রাখার পর গরমের মৌসুম আসার সাথে সাথে সেগুলো আবার পানিতে ভিজতে দেয়া হয়। পানিতে দেবার পর পাতা নরম হয়ে গেলে শুরু হয় মূল পাখা তৈরির কাজ। সাধারণত পরিবারের বড়রা পানিতে ভিজে নরম হয়ে যাওয়া পাতা ছাড়িয়ে পাখা আকৃতির করে চারিদিক কেটে সমান করে থাকে। আর বাড়ির মেয়েরা সেগুলো বাঁশের সলা দিয়ে বেঁধে ফেলে। পরিবারের ছোট সদস্যরা এগুলো সুচ আর সুতা দিয়ে সেলাই করে থাকে। এভাবে ব্যবহারের উপযোগী একটি তালপাখা তৈরি হয়। বাড়ির ছেলে, মেয়ে, শিশুরা ও গৃহবধূরা সবাই মিলে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত ১/২টা পর্যন্ত পাখা তৈরির কাজে ব্যস্ত থাকেন।

নজরুল আরো জানান, তাদের তৈরিকৃত পাখা পাইকারী ও খুচরা বিক্রি করা হয়। এখান থেকে পাইকাররা প্রতিপিস পাখা ১২/১৫ টাকা দরে ক্রয় করে নিয়ে খুচরা ২০/২২ টাকায় বিক্রি করে। মূলত পাখা ব্যবসা থাকে গরমের ৩/৪ মাস। কালীগঞ্জের পাখা বিশেষ করে কুষ্টিয়া, মাগুরা, রাজশাহী, নাটোর, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গাসহ বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা এসে পাইকারি দরে পাখা কিনে নিয়ে যায়। কালীগঞ্জ উপজেলায় এরা খুচরা ও বাইরে থেকে আসা ব্যবসায়ীদের কাছে পাইকারি হিসাবে বিক্রি করে থাকেন।

 

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.