Sylhet Today 24 PRINT

শান্তি প্রক্রিয়া শুরু করতে সু চির প্রতি ইউনূসের আহবান

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

মিয়ানমারের রাখাইনে দ্রুত শান্তি প্রক্রিয়া শুরু করার আহ্বান জানিয়েছেন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী বাংলাদেশি অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউসূস। এর সূচনা হিসেবে ইউনূস শান্তিতে নোবেল বিজয়ী মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চিকে বাংলাদেশে এসে শরণার্থী শিবিরগুলো পরিদর্শনের আহ্বানও জানিয়েছেন।

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দমন অভিযানের মুখে কয়েক লাখ রোহিঙ্গার পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার প্রেক্ষাপটে মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে শান্তিতে নোবেলজয়ী প্রতিবেশী দেশটির নেত্রীর প্রতি এ আহ্বান রাখলেন একই পুরস্কারজয়ী এই বাংলাদেশি।

বিবৃতিতে ইউনূস বলেন, “তিনি (সু চি) শরণার্থীদের এই বলে আশ্বস্ত করতে পারেন যে, মিয়ানমার যেমন তার দেশ, এটা শরণার্থীদেরও নিজেদের দেশ; তিনি তাদের ফিরিয়ে নিতে এসেছেন।”

“তার জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়টা এখন তার সামনে। তিনি কোন পথে যাবেন- শান্তি ও বন্ধুত্বের নাকি ঘৃণা ও সংঘর্ষের, তা বেছে নেবার ঐতিহাসিক মুহূর্ত এটাই।”

রাখাইন সংকট সমাধানে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বাধীন কমিশনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের উপর গুরুত্ব দিয়ে ইউনূস বলেন, ‘আনান কমিশনের সুপারিশগুলোর পূর্ণ ও তাৎক্ষণিক বাস্তবায়ন রোহিঙ্গা সংকটের অবসান ঘটাতে সক্ষম’।

মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “আমরা নতুন বিতর্কে না গিয়ে সরাসরি এখান থেকেই শুরু করতে পারি। এই প্রতিবেদনে চমৎকার সব সুপারিশ রয়েছে যা মিয়ানমার সরকার গ্রহণ করেছে। কী-কী সংশোধনমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে তা কমিশনের প্রতিবেদনে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।”

মিয়ানমারের সব পক্ষের এই প্রতিবেদন অনুমোদনের কথা উল্লেখ করে কফি আনান কমিশনের কয়েকটি সুপারিশ বিবৃতিতে তুলে ধরেন তিনি। এগুলো হলো- রোহিঙ্গাদের পূর্ণ নাগরিকত্ব প্রদানের ব্যবস্থা, তাদের অবাধ চলাচলের সুযোগ ও আইনের চোখে সমান অধিকার, রোহিঙ্গাদের স্থানীয় প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা যার অভাবে স্থানীয় মুসলিমরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং নিজ ভূমিতে ফিরে আসা রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জাতিসংঘের সহায়তা কাজে লাগানো।

রাখাইনে শান্তি স্থাপনের প্রক্রিয়া ‘এখনই শুরু করা দরকার’ মন্তব্য করে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “আমরা এখনই ব্যবস্থা না নিলে র‌্যাডিকালাইজেশনের যে আশঙ্কার কথা আনান কমিশন মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে মনে করিয়ে দিয়েছে তা বাস্তবে নিশ্চিতভাবে জটিলতর হতে থাকবে। ত্বরিত ব্যবস্থা নিতে সময়ক্ষেপণ এবং মিয়ানমার সরকারের নীরবতা ও নিষ্ক্রিয়তা শান্তি স্থাপন প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত ও কঠিন করে তুলবে।”

তিনি প্রস্তাব করেছেন, আনান কমিশনের সদস্যদের নিয়ে অবিলম্বে একটি ‘বাস্তবায়ন কমিটি’ গঠনের, যাদের কাজ হবে কমিশনের সুপারিশগুলোর যথাযথ বাস্তবায়ন তত্ত্বাবধান করা।

তার অন্যান্য সুপারিশের মধ্যে রয়েছে- দেশটি থেকে শরণার্থীর প্রবাহ বন্ধ করতে অবিলম্বে পদক্ষেপ গ্রহণ, আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের নিয়মিতভাবে পীড়িত এলাকাগুলো পরিদর্শন করতে আমন্ত্রণ জানানো, যেসব শরণার্থী ইতোমধ্যে দেশত্যাগ করেছে তাদের ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা, ফিরে যাওয়া শরণার্থীদের পুনর্বাসনের জন্য জাতিসংঘের অর্থায়ন ও তত্ত্বাবধানে মিয়ানমারে ট্রানজিট ক্যাম্প স্থাপন, বাস্তবায়ন কমিটির কর্তৃত্বে আনান কমিশনের প্রতিবেদনের সুপারিশ মোতাবেক রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব প্রদান এবং রোহিঙ্গাদের রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও অবাধে চলাফেরার স্বাধীনতা নিশ্চিত করা।

রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে মুহাম্মদ ইউনূস কথা বলছেন না বলে সরকারের এক মন্ত্রীর বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টা পর ইউনূস সেন্টারের এই বিবৃতি এলো।

রোহিঙ্গাদের উপর সহিংসতা বন্ধে পদক্ষেপ চেয়ে গত ৪ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের উদ্দেশ্যে পাঠানো খোলা চিঠির কথাও বিবৃতিতে উল্লেখ করেছেন ইউনূস।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.