Sylhet Today 24 PRINT

রাজশাহীতে চিকিৎসা সেবার মানোন্নয়নের দাবিতে বিক্ষোভ

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ০৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসা সেবার মানোন্নয়নসহ চিকিৎসকদের দায়িত্ব অবহেলা ও অব্যবস্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে সামাজিক সংগঠন রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দ।

সোমবার বেলা ১১ টায় রাজশাহী নগরীর কোর্ট শহীদ মিনার চত্বরে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে নেতৃবৃন্দ এসব দাবি জানান। পরে নেতৃবৃন্দ রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার মানোন্নয়নের দাবিতে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।

এর আগে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন পরিষদের সভাপতি লিয়াকত আলী। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. জামাত খান, রাজশাহী চেম্বারের পরিচালক হারুনার রশিদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান আলী বরজাহান, এ্যাডভোকেট এন্তাজুল হক বাবু, মোতাসিম বিল্লাহ, পরিবেশবিদ মিজানুর রহমান মিজান, আওয়ামী নেতা অধ্যাপক লুৎফর রহমান, নারী নেত্রী সেলিনা বেগম, জেলা লোকমোর্চর সহ সভাপতি আলাউদ্দিন আল আজাদ, রেস্তোরা মালিক সমিতির সভাপতি রিয়াজ আহমেদ খান, প্রকৌশলী খাজা তারেক, ওয়েব সভাপতি আঞ্জুমান আরা লিপি, ওয়ার্কার্স পাটির নেতা আবদুল মতিন, নিজাম উদ্দিন, আদিবাসী নেতা সুভাসচন্দ্র, শামসুর রহমান বাদশা, ইমাম ফেরদৌস ইয়াহিয়া প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, বিভাগীয় শহর রাজশাহী হলেও এখনো অবহেলিত জনপদ। এখানে লাখ লাখ মানুষের বসবাস হলেও সরকারি আধুনিক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। রাজশাহীর সরকারি হাসপাতাল, থানা হেলথ কমপ্লেক্স থেকে শুরু করে তৃনমূল পর্যায় পর্যন্ত মানুষ চিকিৎসা সেবা ঠিকমত পাচ্ছে না। চিকিৎসার নামে চিকিৎসকদের প্রায় খারাপ আচরণের শিকার হন। এসব অবিলম্বে বন্ধ করে চিকিৎসা সেবার মানোন্নয়ন করার দাবি জানানো হয়। ভুল চিকিৎসায় প্রায় রোগীর মৃত্যু, নবজাতকের মৃত্যু, রোগীর স্বজনদের সঙ্গে মারামারি এমন ঘটনা এখন প্রায় ঘটছে রামেক হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, সরকার স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে অনেক আন্তরিক হলেও কতিপয় চিকিৎসকের কারণে সরকারের সাফল্য ম্লান হচ্ছে।

বক্তারা বলেন, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগেও চলছে ওষুধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টিভদের সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য। বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের জরুরী সময়ে বিরক্ত করে রিপ্রেজেন্টিভরা। চিকিৎসকের রুম থেকে বের হওয়া মাত্রই তারা রোগীদের ঘিরে ধরে এবং জরুরী সময়ে নিষেধ করা সত্ত্বেও হাত থেকে প্রেসক্রিপশন ছিনিয়ে নেয়।

বক্তারা আরো বলেন, সরকারি হাসপাতালে নরমাল ডেলিভারির জন্য খরচ হয় প্রায় ৩ হাজার টাকা এবং অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে খরচ হয় সব মিলিয়ে ১২ হাজার ৮ শত টাকা পর্যন্ত। বেসরকারি হাসপাতালে এই খরচ দাড়ায় প্রায় ২০ হাজার টাকা। এছাড়াও অস্ত্রোপচারের জন্য কোমরে যে এনাস্থসিয়া ইনজেকশন পুশ করা হয় এর সাইট ইফেক্ট সারাজীবনের জন্য। বেসরকারি হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান জন্মদান একদিকে যেমন আর্থিক ক্ষতি তেমনি অন্যদিকে শারীরিক এবং স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে অভিযোগ তুলেন নেতৃবৃন্দ।

বক্তারা উল্লেখ করেন, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জন্য সরকার প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি ও ওষধ সরবরাহ করলেও রহস্যজনক কারণে বিকল করে রাখা হয়। ওষধ রোগীদের দেওয়া হয় না। হাসপাতালের কতিপয় চিকিৎসক ও অসাধু কর্মচারীরা ভুয়া স্লিপ ইস্যু করে সেসব ঔষধ বাজারে বিক্রি করে দেয়। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগীদের জন্য বরাদ্দকৃত খাবারের সিংহভাগ আত্মসাৎ করা হয় উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইনডোর ও আউটডোরে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা কেবলমাত্র নিজের যেসব ক্লিনিকের সাথে সংশ্লিষ্ট সেসব ক্লিনিকের রোগী ধরার জন্য হাসপাতালে যান। হাসপাতালে মরণাপন্ন রোগীদের কতিপয় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হাসপাতালে দিনে একবারও রোগী না দেখে বিভিন্ন ক্লিনিকে পালাক্রমে রোগী দেখে থাকেন। অবস্থা সংকটাপন্ন রোগীদের ক্লিনিকে চিকিৎসা করার নাম করে হাসপাতাল থেকে নিয়ে যাওয়া হয় আর দরিদ্র রোগীরা দিনের পর দিন হাসপাতালের বেডে শুয়ে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরায়। সরকারি বিধিভুক্ত করে লেকচারার পর্যায়ের চিকিৎসকরা পর্যন্ত নিজেদের ক্লিনিকে রোগীদের কাছ থেকে খেয়াল খুশিমতো অতিরিক্ত ফি আদায় করে থাকেন।

বক্তারা বলেন, মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চাকুরীরত কতিপয় চিকিৎসক রোস্টার অনুযায়ী হাসপাতাল বা কলেজে উপস্থিত না থেকে ক্লিনিকে বসে চুটিয়ে ব্যবসা করেন। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের অকারণে বিভিন্ন প্যাথলজিক্যাল টেস্টের জন্য শতকরা ৬০ ভাগ পর্যন্ত কমিশন নিয়ে থাকেন। শিক্ষা নগরী রাজশাহীকে ক্লিনিক নগরীতে রূপান্তরের জন্য একশ্রেণীর চিকিৎসক সরাসরি অংশিদারিত্বের ভিত্তিতে ক্লিনিক স্থাপন করে সরকারি বেতন ভোগ করার পাশাপাশি বেআইনি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসা এবং রোগীদের প্রস্তুতি অবহেলার কারণে অসময়ে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়তে হচ্ছে। ভেজাল ওষুধে বাজার সয়লাব করে দিয়েছে। এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় অনেক রোগী মৃত্যুবরণ করছে এবং অনেকেই আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। রাজশাহী হাসপাতালে জরুরী বিভাগ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ওয়ার্ডে রোগীকে ভর্তি হওয়া পর্যন্ত শুরু হয় রোগীদের প্রতি অবহেলা ও দুর্ব্যবহার।

বক্তারা বলেন, বর্তমান ডেন্টাল ইউনিট রাজশাহী মেডিকেল কলেজ গুনে মানে ডেন্টাল কলেজ পূর্ণাঙ্গ ডেন্টাল কলেজ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, কিন্তু অজ্ঞাত কারণে কয়েকবছর পর এটি ডেন্টাল ইউনিটে রূপান্তরিত হয়।

বক্তারা রাজশাহীতে পৃথক হৃদরোগ হাসপাতাল, শিশু হাসপাতাল, চক্ষু হাসপাতাল ও পঙ্গু হাসপাতাল স্থাপন এবং মানুষের আয়ের সাথে সংগতি রেখে চিকিৎসকদের ফি নির্ধারণের ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তারা। সমাবেশ থেকে বক্তারা অবিলম্বে এসব দাবি মেনে নেয়ার আহ্বান জানান, অন্যথায় আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তোলার হুমকি দেয়াও হয়।

পরে নেতৃবৃন্দ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি পেশ করেন। তিন পাতার স্মারকলিপিতে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসকদের অবহেলা, চিকিৎসার নামে নৈরাজ্য ও অপচিকিৎসার বিবরণ তুলে ধরা হয়।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.