Sylhet Today 24 PRINT

খাদ্যে-পণ্যে ভেজাল রোধে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনার দাবি ক্যাবের

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ২২ অক্টোবর, ২০১৮

জেলা প্রশাসন, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিদিনের মোবাইল কোর্ট ও বাজার অভিযানে দেখা হোটেল রেস্তোরা, বেকারি, মিষ্টান্ন, মিনারেল ওয়াটার ফ্যাক্টরি ভেজাল, মানহীন, নিন্মমানের, অপরিষ্কার, অপরিছন্ন, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার বিক্রির ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠছে। প্রতিবার জরিমানার ফলে এখানে তেমন পরিবর্তন আসছে না। একই প্রতিষ্ঠানকে বারবার একই অপরাধে জরিমানা করা হলেও এখান থেকে পরিত্রাণ মিলছে না। কারণ মোবাইল কোর্টে জরিমানার ফলে ক্রেতারা ঐ প্রতিষ্ঠানকে বয়কট না করে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে, ফলে জরিমানার অর্থ ভোক্তার পকেট থেকে একদিনেই আদায় করে নিচ্ছে।

নগরীতে খাদ্যে ভেজাল রোধে প্রশাসনের প্রতিনিয়ত অভিযানের পরও খাদ্য ও জীবনরক্ষাকারী ওষুধে ভেজালের ক্রমাগত বিস্তারে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এক বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ এ দাবি জানান।

অধিকন্তু অনেক স্থানে ব্যবসায়ীরা সংঘবদ্ধ হয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনায় নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্ঠি করছে। এর মধ্যে কিছু ব্যবসায়ী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা না করার জন্য হাইকোর্টেও মামলা করেছে। আর এ সমস্ত ভয়াবহ চিত্র শুধুমাত্র খাদ্যে পণ্যে নয় এমনকি জীবন রক্ষাকারী ওষুধের দোকানেও ভেজাল ওষুধের ছড়াছড়ি। এ অবস্থায় মানুষের জীবন বাঁচাতে খাদ্যে-পণ্যে ভেজাল রোধে জিরো টলারেন্স প্রদর্শন, খাদ্যে-পণ্যে ও জীবনরক্ষাকারী ওষুধে জেলা প্রশাসন, ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর, সিটি কর্পোরেশন, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর, বিএসটিআই, কৃষি, মৎস্য, প্রাণিসম্পদ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও ক্যাব সমন্বয়ে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করে এ সমস্ত প্রাণঘাতী অপরাধের বিরুদ্ধে দৃষ্ঠান্তমুলক শাস্তি ও সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য সরকার ও সংস্লিষ্ঠ প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছেন কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম।

নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন বিগত জেলা প্রশাসক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী খাদ্যে ভেজাল ও মাদক বিষয়ে প্রশাসনককে জিরো টলারেন্স প্রদর্শনের নির্দেশনা প্রদান করেন। কিন্তু আইন শৃংখ্যলাবাহিনী মাদকের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করলেও জেলা ও উপজেলা প্রশাসন খাদ্যে ভেজাল রোধে তেমন তৎপরতা দেখায়নি।

নেতৃবৃন্দ আরও বলেন নির্বাচনের প্রাক্কালে অনেক সরকারী কর্মকর্তা ব্যবসায়ীদের সাথে কোন ধরনের সংঘাতে না যেতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনায় শিথিলতা প্রদর্শনের কথা বলে থাকেন। অথচ খাদ্যে ও জীবন রক্ষাকারী ওষুধে জেজালের অর্থ হলো মানুষকে জীবন্ত মেরে ফেলা। মানুষ বন্দুকের গুলি খেয়ে মরলে একবার মরবে, আর খাদ্যে ভেজালের খেসারত একজন মানুষ ও তার পরিবারকে পঙ্গু করে দিবে এবং ধুকে ধুকে সারা জীবন তাকে মৃত্যুর যন্ত্রণা বয়ে বেড়াতে হবে। তাই ক্যাব থেকে বারংবার দাবি করে আসা হচ্ছে খাদ্যে ভেজাল মানুষ হত্যার চেয়েও বড় অপরাধ এবং বিষয়টিকে সেভাবেই বিবেচনায় আনা উচিত। খাদ্যে ভেজালের কারণে একটি জাতি পুরো পঙ্গুতে পরিণত হবে, আগামী প্রজন্ম মেধাহীন ও রুগ্নভাবে গড়ে উঠবে। সেকারণে সরকারকে সকল উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের মধ্যে বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়ে বিবেচনায় না নিলে মেধাবী জাতি গঠন কঠিন হবে। যা উন্নয়ন রাষ্ট্রের কাতারে দেশকে উন্নীত করতে বড় প্রতিবন্ধক হবে।

নেতৃবৃন্দ আরও বলেন সকলের জন্য নিরাপদ খাদ্যে নিশ্চিত করার জন্য সরকার নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩ প্রণয়ন করেছেন এবং নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ গঠন করলেও ঢাকায় সীমিত লোকবল নিয়ে মাঝে মাঝে কিছু কার্যক্রম পরিচালনা করলেও জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কোন কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছে না। যদিও ঢাকায় কিছু দিন পূর্বে কিছু খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় নিরাপদ খাদ্য মেলার আয়োজন করেছিলো।

জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠিত হলেও এর কোন ধরণের কার্যকারিতা নেই। কার্যকারিতাহীন কাগজে কলমে সরকারের এ ধরনের কমিটি গঠন বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর রাষ্ট্রীয় অধিকার খর্ব করা বলে নেতৃবৃন্দ অভিমত প্রকাশ করেন। নেতৃবৃন্দ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকে সঠিক ভাবে কার্যকর করতে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পরিবর্তে এটাকে স্বাস্থ্য বা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতায় আনা এবং দেশের ১৬ কোটি ভোক্তাদের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করা না হলে এ অবস্থার পরিত্রাণ সম্ভব নয় বলে মনে করেন।
 
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীরা হলেন ক্যাব কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, ক্যাব মহানগরের সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, ক্যাব দক্ষিণ জেলা সভাপতি আবদুল মান্নান ও ক্যাব যুব গ্রুপের সভাপতি চৌধুরী কেএনএম রিয়াদ প্রমুখ।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.