Sylhet Today 24 PRINT

ধানের শীষে ভোট দেওয়ায় ‘গণধর্ষণ’

নিজস্ব প্রতিবেদক |  ০১ জানুয়ারী, ২০১৯

নোয়াখালীর সুবর্ণচরে চার সন্তানের এক জননীকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ১০-১২ জন কর্মী মিলে গণধর্ষণ করেছে। নির্বাচনে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দেওয়ায় তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

সোমবার (৩১ ডিসেম্বর) এ ঘটনা ঘটে বলে জানা যায়।

নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন আছেন ৩৫ বছরের ওই নারী।

চর জুবিলী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য রুহুল আমীনের নেতৃত্বে এই পাশবিক কাজ করা হয়েছে বলে জানান ধর্ষণের শিকার ওই নারী।

তিনি বলেন, তারা আমাকে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে ভোট দেওয়ার জন্য জোর করেছিলো। কিন্তু আমি তাদের কথা না শুনে ধানের শীষে ভোট দিয়েছি।

এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে রুহুল আমীন জানান, ওই নারী তার আত্মীয় এবং তাদের মধ্যে কোনো শত্রুতা নেই।

তিনি আরও বলেন, ভোটকেন্দ্রে কেবল একবার আমি তার (নারী) সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম।

রুহুল আমীনের রাজনৈতিক পরিচয় জানতে চাইলে, তিনি সুবর্ণচর আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন বলে জানান।

ঘটনার বর্ণনায় ভুক্তভোগী নারী জানান, গতকাল মধ্যরাতের পর ১০ থেকে ১২ জন লোক হাতে লাঠিসোটা নিয়ে বেড়া কেটে তার বাড়িতে ঢুকে। তারপর তারা তার সিএনজিচালিত অটোরিকশার ড্রাইভার স্বামী ও চার সন্তানকে দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলে।

তীব্র ব্যথায় গোঙাতে গোঙাতে ওই নারী বলেন, এরপর তারা আমাকে বাইরে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে।

তিনি আরও বলেছেন, এ বিষয়ে মুখ খুললে তার স্বামী ও সন্তানদের মেরে ফেলা হবে এবং বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হবে বলে হুমকি দিয়েছে ধর্ষণকারীরা।

ওই নারীর স্বামী (যিনি নিজেও আহত) জানান, আনুমানিক রাত চারটার দিকে তার স্ত্রীকে মারাত্মক আহত করে অচেতন অবস্থায় ফেলে রাখে এবং ৪০ হাজার টাকা, সোনার গয়না ও অন্যান্য দামী জিনিসপত্র নিয়ে ধর্ষণকারীরা পালিয়ে যায়।

এরপর ওই নারীর স্বামী ও সন্তানের কান্নাকাটি শুনে প্রতিবেশীরা এসে তাদের উদ্ধার করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রতিবেশী বলেন, প্রথমে গ্রামের একজন চিকিৎসককে ডাকা হয়। কিন্তু ওই নারীর শরীর থেকে রক্তক্ষরণ হতে থাকায় দুপুরে তাকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক শ্যামল কুমার বিশ্বাস বলেন, তারা ধর্ষণের আলামত পেয়েছেন। ভুক্তভোগীর শরীরে একাধিক স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

ওই নারীর স্বামী জানান, তার স্ত্রী রোববার সকাল ১১টায় চর জুবিলী প্রাথমিকে বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে যান। সেখানে তিনি সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারের কাছ থেকে ব্যালট পেপার নিয়ে বুথে যেতে চান। ওই সময় আওয়ামী লীগের কর্মী রুহুল আমীন তাকে নৌকায় ভোট দেওয়ার জন্য জোর করেন। কিন্তু তাকে (রুহুল আমীন) যখন বলা হয় যে ধানের শীষে ভোট দেওয়া হয়েছে, তখন তিনি ব্যালট পেপারটি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু এর মধ্যেই তার স্ত্রী ব্যালটটি বাক্সে ঢুকিয়ে দেন। এতেই রুহুল ক্ষেপে যান এবং দেখে নেওয়ার হুমকি দেন।

চর জব্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিজাম উদ্দিন সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর পরিবার থানায় একটি মামলা করেছেন। পুলিশ বাদশাহ মিয়া নামের একজনকে গ্রেপ্তার করেছে। বাকীদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।

এ ঘটনাটি নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কোন কারণে কি না তা যাচাই-বাছাই করে দেখবেন বলে জানিয়েছেন ওসি।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.