Sylhet Today 24 PRINT

ভোলায় কিশোর নির্যাতনকারী ইউপি সদস্য গ্রেপ্তার

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ২৪ জানুয়ারী, ২০১৯

ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায় মুরগি চুরির অভিযোগে ১৪ বছর বয়সী এক কিশোরকে বেঁধে পেটানোর মামলায় হাজারীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আমজাদ হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

বুধবার (২৩ জানুয়ারি) রাত ৯টার দিকে চরফ্যাশন পৌর শহর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে শশীভূষণ থানার ওসি মনিরুল ইসলাম জানান।

নির্যাতনের শিকার ছেলেটি চরফ্যাশন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন। তার বাড়ি হাজারীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে। আমজাদ ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য।

নির্যাতনের ওই ঘটনা গত বছর ১৫ নভেম্বর ঘটলেও নির্যাতনকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় ভুক্তভোগী অস্বচ্ছল পরিবার মামলা করার সাহস পাচ্ছিল না।

সম্প্রতি নির্যাতনের ভিডিওটি ফেইসবুকে আলোচনার জন্ম দিলে এলাকার লোকজনের সহায়তায় ওই কিশোরের মা ছয়জনকে আসামি করে শশীভূষণ থানায় মামলা করেন।

ওই মামলার আরেক আসামি বাবুল বাঝিকে (৪৫) মঙ্গলবার সকালে গ্রেপ্তারের পর আদালতে হাজির করে পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়েছিল পুলিশ। আদালত দু্ই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে বলে জানান ওসি।   

তিনি বলেন, বাবুলের দেওয়া তথ্যে আমজাদকে গ্রেপ্তার করা হয়। আমজাদের নির্দেশে সেই দিন ওই কিশোরের উপর নির্যাতন চালানোর কথা বাবুল জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ১৪ নভেম্বর রাতে কবির তালুকদার নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি তার প্রতিবেশী ওই কিশোরের বিরুদ্ধে মুরগি চুরির অভিযোগ করেন ইউপি সদস্য আমজাদের কাছে। এরপর আমজাদ ও জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে তাদের সহযোগীরা ছেলেটিকে ধরে হাজারীগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে নিয়ে যায়। সেখানে পিছমোড়া করে হাত ও পায়ের মাঝে লাঠি বেঁধে তাকে পেটানো হয়। পরে ওই কিশোর এবং তার কয়েকজন সঙ্গীকে মারধর করে কান ধরে উঠবস এবং নাকে খত দেওয়ানো হয়। উপস্থিত জনতার মধ্যে কেউ একজন ওই ঘটনা ভিডিও করেন এবং সম্প্রতি তা ফেইসবুকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

নির্যাতিত ওই কিশোরের মা বলেন, তার ছেলে এক সওদাগরি নৌকায় বাবুর্চির কাজ করে। পাড়ার কয়েকজন ছেলে মিলে বনভোজন করার জন্য সেদিন তারা কবিরের স্ত্রীর কাছ থেকে ৩০০ টাকায় একটি মুরগি কেনে। কিন্তু কবির মুরগি চুরির কথা বলে আমার ছেলের নামে নালিশ করলে ওকে ধরে নিয়ে গিয়ে মারধর করে। পরে আমজাদ মেম্বার আমার কাছে ২০ হাজার টাকা চায়। নাকফুল বেচে আমি ৫ হাজার টাকা দিয়ে মেম্বারের কাছ থেকে ছেলেকে ছাড়িয়ে আনি। আমি এর বিচার চাই।

বাবুলের দেওয়া তথ্যের বরাতে ওসি বলেন, আমজাদ এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ জেলেদের উপর নির্যাতন করত। চড়া সুদে সে জেলেদের ঋণ দিত। ফলে জেলেসহ এলাকাবাসী তার কাছে জিম্মি হয়ে পড়ে। তার ভয়ে এলাকার কেউ মুখ খোলার সাহস পেত না, এমনকি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কথাও আমজাদ মানতো না।

চরফ্যাশন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক শোভন বসাক জানান, নির্যাতনের শিকার ছেলেটির শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তাকে এখনও চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

এদিকে হাই কোর্ট এ ঘটনায় মামলা করতে বিলম্বের কারণ, আসামি গ্রেপ্তার ও নির্যাতিত কিশোরের চিকিৎসা ও নিরাপত্তার বিষয়ে রোববারের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছে শশীভূষণ থানার ওসিকে।

নির্যাতিত ওই কিশোরের মায়ের অভিযোগ, ঘটনার পর শশীভূষণ থানায় গিয়ে ওসিকে না পেয়ে তিনি এসআই পবিত্র কুমারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু ওই পুলিশ সদস্য তাকে থানা থেকে তাড়িয়ে দেন।

ওই অভিযোগ অস্বীকার করে এসআই পবিত্র বলেছেন, এ রকম কোনো ঘটনা থানায় ঘটেনি।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.