Sylhet Today 24 PRINT

বিসিএস পরীক্ষা দেওয়া হল না অভির

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

সরকারি বড় কর্মকর্তা হবার স্বপ্ন দেখতেন কাজী এনামুল হক অভি। সংসারের অভাব-অনটন দূর করে মা-বাবার মুখে হাসি ফোটাবেন। তাই ঢাকায় থেকে বিসিএস পরীক্ষা দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু বুধবার ঢাকার চকবাজারে ভয়াবহ আগুনে এনামুলের সঙ্গে পুড়ে গেছে তার সেই স্বপ্নও। তার পরিবারে নেমে এসেছে শোকের কালো ছায়া।

এনামুলের (২৭) বাড়ি পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার মাধবখালী ইউনিয়নের রামপুর গ্রামে। সংসারে বৃদ্ধ বাবা কাজী মোখলেছ, মা আকিমন বেগম। দুই ভাই ও দুই বোন। একসময় কৃষিজমি থাকলেও পায়রা নদীর ভাঙনে তা অনেক আগেই বিলীন হয়েছে।

শুক্রবার সকালে বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে অনেক মানুষের ভিড়। পরিবারের সদস্যদের কান্নায় অন্যদের চোখেও পানি চলে এসেছে।

এনামুলের আত্মীয়রা বলেন, ছোটবেলা থেকে লেখাপড়ায় প্রবল আগ্রহ ছিল তার। এনামুল ঢাকার চকবাজারে তার চাচাতো ভাই কাজী ইউসুফের সঙ্গে থাকতেন। ঢাকাতে টিউশনি করে বিসিএস পরীক্ষা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।

এনামুলের বাবা কাজী মোখলেছ জানান, ‘অভির স্বপ্ন ছিল বড় অফিসার হইবে। সংসারে দায়িত্ব নেবে। বড় ছেলে বেশি লেখাপড়া করে নাই। কিন্তু অভি লেখাপড়া ছাড়া কিছুই বুঝত না। অভিরে অনেক কইছি চাকরিবাকরি কর, কিন্তু অভি কইতো যদি চাকরি করি, তাহলে বড় চাকরি করুম।’

মা আকিমন বেগম তার সন্তানের ছবি হাতে নিয়ে শুধু বিলাপ করছে আর বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন।

তিনি বলেন, ‘কইছিলাম বাড়ি আইতে। অভি বড় অফিসার হইয়া বাড়ি আইবে। গ্রামের মানুষ অভিরে দেখতে আইবে। পুতে বাড়ি আইছে ঠিকই, তয় লাশ হইয়া।’

গ্রামের যুবক ইব্রাহিম বলেন, ঘটনার দিন বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে অভি তার সঙ্গে ছিলেন। অভি তাকে বলেছিলেন আজিমপুরে গিয়ে নিজের জীবনবৃত্তান্ত (সিভি) তৈরি করার পর দাঁতের চিকিৎসার জন্য চকবাজার যাবেন। ঘটনার সময় অভি দাঁতের চিকিৎসার জন্য চকবাজারের ওই ভবনের দ্বিতীয় তলায় ডেন্টাল কেয়ারে ছিলেন। পরদিন সকালে ঢাকা মেডিকেলে পাঞ্জাবি, জিনস প্যান্ট, স্লিপার দেখে তাকে শনাক্ত করে মরদেহ বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। শুক্রবার ভোরেই মরদেহ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায়।

একই ইউনিয়নের সন্তোষপুর গ্রামের দিনমজুর মজিবর হাওলাদার (৫০) চকবাজারের আগুনে মারা গেছেন। এ সময় আহত হয়েছেন তার আপন ভাইয়ের ছেলে আলম হাওলাদার (৩০)।

মজিবরের তিন ছেলে ও দুই মেয়ে। দুই ছেলে ঢাকায় দিনমজুরি করেন। বাকি তিনজন তাদের মা মাকসুদা বেগমের সঙ্গে বাড়িতে বসবাস করছে। শুক্রবার ভোরে অ্যাম্বুলেন্সে মজিবরের মরদেহ সন্তোষপুরে নিয়ে আসা হয়।

আহত আলমের বড় ভাই আলমাস হাওলাদার (৪০) জানান, তারা চকবাজারের এক প্লাস্টিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। ঘটনার দিন রাতে তারা ৯ জন তিনটি ঠেলাগাড়িতে প্লাস্টিকের মালামাল এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিচ্ছিলেন। চাচা মজিবর হাওলাদারের ঠেলাগাড়ি ছিল সবার পেছনে। হঠাৎ আগুনে ট্রান্সফরমার বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হলে তার চাচা মারা যান।

সন্তোষপুর গ্রামের হেলাল সিকদার (২০) নামের অপর একজন ঢাকায় চিকিৎসাধীন।
সূত্র: প্রথম আলো

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.