Sylhet Today 24 PRINT

কলেজছাত্রীকে ‘যৌনকর্মী’ বলে বেকায়দায় ইউপি চেয়ারম্যান

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ২১ নভেম্বর, ২০১৯

টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলায় ধর্ষণের শিকার বিচারপ্রার্থী এক কলেজছাত্রীকে পতিতা এবং ধর্ষিতার বাবাকে মাদক ব্যবসায়ী বলে আখ্যা দিয়ে বেকায়দায় পরেছেন টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার ধুবড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মতিয়ার রহমান মতি।

উপজেলার ধুবড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান মতিউর রহমান তার ইউনিয়ন পরিষদের প্যাডে ধর্ষণের শিকার কলেজছাত্রীকে দেহ ব্যবসায়ী ও তার কৃষক বাবাকে মাদক ব্যবসায়ী আখ্যা দিয়ে গত ৫ নভেম্বর জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার এবং বার সমিতির কাছে প্রতিবেদন দেন তিনি। এ ঘটনা নিয়ে নাগরপুর উপজেলা জুড়ে চলছে সমালোচনার ঝড়।

কলেজছাত্রীর বাবা বলেন, চেয়ারম্যান আমার পরিবারকে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছেন। চেয়ারম্যান ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী আমাকে গ্রাম থেকে চলে যেতে নির্দেশ দিয়েছেন। পরিবার নিয়ে আমি এখন নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছি।’
 
ধর্ষণ মামলার আসামিরা হলেন সারুটিয়াগাজি গ্রামের জয়ধর শেখের ছেলে মো. জুয়েল রানা (২২), ধুবড়িয়া গ্রামের হায়েদ আলীর ছেলে মো. শিপন (২৬), মো. রিপন (২৩), উফাজ (৪২) ও একই গ্রামের মো. বাবুল মিয়ার ছেলে মো. রিয়াজ মিয়া (২১)। মামলা তুলে নেয়ার জন্য পরিবারটিকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়ে আসছে তারা। সিআইডি মামলার তদন্ত রিপোর্ট দাখিলের পর আসামীরা আরও ভয়ংকর হয়ে উঠে। আসামীরা এলাকার প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহস পাচ্ছে না। আসামীরা ধুবড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে দিয়ে ধর্ষণের বিষয়টিকে ধামাচাপা দিয়ে উল্টো ভিকটিমকে দেহ ব্যবসায়ী ও তার বাবাকে মাদক ব্যবসায়ী আখ্যা দিয়ে আসামীদের পক্ষে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

সিআইডি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ মামলার কলেজ ছাত্রীর বাবা একজন হত দরিদ্র কৃষক। তিনি দিন মজুরের কাজ করেন এবং এক প্রবাসীর বাড়িতে স্ত্রী ও চার কন্যা সন্তান নিয়ে দুর্বিষহ ভাবে বসবাস করে আসছেন। মেয়েটি ২০১৮ সালে ধুবড়িয়া ছেফাতুল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয় হতে এস এস সি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুরে এক কলেজে লেখাপড়া করে আসছে। ছেফাতুল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ার সময় ওই ছাত্রীর সঙ্গে জুয়েল রানার পরিচয় হয়। জুয়েল এ ছাত্রীকে ভালোবাসার প্রস্তাব দিলে সে তা প্রত্যাখ্যান করে। পরে জুয়েল রানা ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটায়। সিআইডি’র তদন্ত কর্মকর্তারা ঐ কৃষকের পরিবারের বিরুদ্ধে মাদক ও দেহ ব্যবসার কোন অভিযোগ পাননি।

এ ব্যাপারে ধুবড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মতিউর রহমান মতির সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, 'আমি চেয়ারম্যান। আমি প্রতিবেদন দিতে পারি তাই দিয়েছি। ছাত্রীর বিরুদ্ধে মাদক ও দেহ ব্যবসার ক্ষেত্রে কোন মামলা আছে কি না আমি জানিনা। এলাকার লোকজন বলেছে তাই আমি এ প্রতিবেদন দিয়েছি।'

এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে টাঙ্গাইল জজ কোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এডভোকেট এস আকবর খান বলেন, 'আদালত কর্তৃক কাউকে দোষী না করা পর্যন্ত কোন ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করা তো দূরের কথা মাদক ও দেহ ব্যবসায়ী বলে কাউকে আক্রান্ত করার এখতিয়ার কারও নেই। সেক্ষেত্রে চেয়ারম্যান যে প্রতিবেদন দিয়েছেন তা সম্পূর্ণ আইন বহির্ভূত।' এক্ষেত্রে চেয়ারম্যানের শাস্তি হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।

এ ব্যাপারে গত বুধবার নাগরপুর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে মত পাল্টে ভিন্ন বক্তব্য তুলে ধরেন চেয়ারম্যান মতিউর। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, কলেজছাত্রী ধর্ষিত হওয়ার ঘটনা আমি জানতাম না। এমনকি আদালতে ধর্ষণ মামলা আছে জানলেও ওই নোটিস আমি পাঠাতাম না।

ওই মেয়ের পরিবারকে বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার জন্য নোটিস দিতে ধুবড়িয়া গ্রামের সাবেক দুই ইউপি চেয়ারম্যানসহ এলাকাবাসী তার উপর চাপ সৃষ্টি করায় তিনি নোটিস দেন বলে দাবি করে বলেন, নোটিশে ভাষাগত ভুলের জন্য আমি প্রশাসন ও সর্বসাধারণের কাছে ক্ষমা প্রার্থী।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.