Sylhet Today 24 PRINT

করোনাভাইরাস বায়ুবাহী : এসি বন্ধ রাখার পরামর্শ

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ১২ জুলাই, ২০২০

এয়ার কন্ডিশনিং ইউনিটগুলো একটা রুমের একই বাতাস রিসার্কুলেট করে; তাই হয় এসি বন্ধ, নয়তো রুমের জানালা খোলা থাকলেই শুধু ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। বাতাসে করোনাভাইরাস ছড়ানো নিয়ে সাম্প্রতিক আলোচনা, তর্ক-বিতর্কের ভেতর এসি ব্যবহারকারীদের প্রতি এমন পরামর্শ তাদের।

যুক্তরাজ্যের টেলিগ্রাফ পত্রিকাকে বিশেষজ্ঞরা বলেন, এয়ার কন্ডিশনিং ইউনিটগুলো যেহেতু শুধুই রিসার্কুলেটেড বাতাস ব্যবহার করে, তাই কোভিড-১৯ আক্রান্ত কারও শরীর থেকে ভাইরাসটি কোনোভাবে ওই বাতাসের জুড়ে গেলে, তাতে আরও অনেকের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়বে।

দেশটির রয়েল একাডেমি অব ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ফেলো, ড. শন ফিটজেরাল্ড বলেন, এয়ার কন্ডিশন ইউনিট দুই ধরনের; এরমধ্যে এক ধরনেরটি বাইরে থেকে বাতাস টেনে আনে, তারপর আবার বাইরে বের করে দেয়; অন্যটি একই বাতাস রিসার্কুলেট বা বারবার ব্যবহার করে।

এই দ্বিতীয় ধরনেরটি 'স্প্লিট' ইউনিট নামেও পরিচিত; এটি বাতাস টেনে নিয়ে কুলিং কয়েলের ভেতর ঠেলে দেয়, তারপর আবার ছড়িয়ে দেয় রুমের ভেতর।

ড. ফিটজেরাল্ডের সহায়তায় তৈরি হওয়া চার্টার্ড ইনস্টিটিউট অব বিল্ডিং সার্ভিস ইঞ্জিনিয়ারসের গাইডলাইনে সতর্ক করে দিয়ে বলা হয়েছে, স্প্লিট এয়ার কন্ডিশনিং ইউনিটে যেহেতু 'বাইরে থেকে রুমে বাতাস আসার কোনো ডেডিকেটেড সোর্স নেই, তাই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার মাধ্যমে নিজেদের নিরাপদ ভাবা মানুষগুলোকে' বায়ুবাহী ভাইরাসে আক্রান্ত করতে পারে এটি।

ড. ফিটজেরাল্ড বলেন, কথাটা শুনতে হয়তো বিচক্ষণতার অভাব এবং আরও বেশি খরুচে ব্যাপার বলে শোনাবে, তবু এ ধরনের এসি ব্যবহারের সময় ঝুঁকি কমানোর জন্য জানালা খোলা রাখাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।

বিজ্ঞাপন



'আমরা বলব, আপনার যদি এ ধরনের কোনো স্প্লিট ইউনিট থাকে, তাহলে জানালা খুলে রাখুন এবং ঘরের পরিবেশ শীতল রাখার আকাঙ্ক্ষা বিসর্জন দিন।  কেননা, বাতাসে যদি সামান্য পরিমাণ ভাইরাসও থাকে, সেটি ঘুরতেই থাকবে। তাই জানালা খোলার মতো পরিস্থিতি না থাকলে আপনি বরং ইউনিটটিই (এসি) অফ করে দিন।'

তিনি বলেন, এ ধরনের ওয়াল-মাউন্টেড ইউনিট সাধারণত বছরে কয়েক দিন ব্যবহারের জন্য বসানো হয়।

সম্প্রতি ইমার্জিং ইনফেকশাস ডিজিজ জার্নালে এক গবেষণাপত্র ছাপা হওয়ার পর এয়ার কন্ডিশন ইউনিট সম্পর্কে নড়েচড়ে বসেন বিশেষজ্ঞরা। চীনের একটি রেস্তোরাঁয় খেতে গিয়ে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটনো ১০ ভোজনকারীর ওপর আলোকপাত করা হয় ওই গবেষণাপত্রে।  ওই লোকগুলো তিনটি আলাদা টেবিলে বসেছিলেন। গবেষকদের বিশ্বাস, একটি এয়ার কন্ডিশনিং ইউনিট থেকে ওই তিন দল লোকের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছিল জীবাণুকণা।

বাতাসে করোনাভাইরাস ছড়ানোর ঝুঁকি শনাক্ত করতে সম্প্রতি দুই শতাধিক বিজ্ঞানীর একটি দল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে খোলা চিঠি দিয়েছে।

এরপর, সংস্থাটির সাম্প্রতিক গাইডলাইনে বলা হয়, ভাইরাসটি মূলত নাক কিংবা মুখ থেকে বের হওয়া কণার মাধ্যমে ছড়ায়; তাই হাত ধোয়া ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলাই এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া ঠেকানোর সেরা উপায়।

কিন্তু ওই চিঠিতে স্বাক্ষরকারীরা দালানকোঠায় যথাযোগ্য ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করার এবং জনসমাগম কমানোর ওপর জোর দেন।

এর প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার প্রকাশ করা নতুন একটি সায়েন্টিফিক ব্রিফে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানায়, বাতাসে কোভিড-১৯ ছড়ানোর 'সম্ভাবনা রয়েছে'।

সংস্থাটি বলে, রেস্তোরাঁ, নাইটক্লাব ও প্রার্থনালয়ের মতো জায়গাগুলোতে লোকেরা চিৎকার করে, কথা বলে, নয়তো গান গায়; তাই এমন জায়গায়, আর যেখানে ভেন্টিলেশনের সুব্যবস্থা নেই, সেখানে ভাইরাসটি বাতাসে ছড়ানোর ঝুঁকি রয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে লেখা ওই খোলাচিঠির অন্যতম প্রধান লেখক এবং লিচেস্টার রয়েল ইনফার্মারির কনসালট্যান্ট ভাইরোলজিস্ট ড. জুলিয়ান ট্যাং বলেন, লোকেরা নিঃশ্বাস নেওয়ার সময় নিঃসরিত হওয়া প্রতিটি থার্মাল প্লুম প্রতি সেকেন্ডে দেড় ফুট দূরত্ব পর্যন্ত পৌঁছতে পারে। এদিকে পানশালা বা রেস্তোরাঁয় কাজ করা লোককে অনেক সময় চিৎকার করে কথা বলতে হয়; সেক্ষেত্রে এটি আরও দ্রুত ও দূর পর্যন্ত পৌঁছবে।

'আপনি যদি কোনো এয়ার কন্ডিশনিং ইউনিটের নিচে বসে থাকেন, তাহলে এটি আপনাকে আশপাশ থেকে পাওয়া করোনাভাইরাসে জীবাণুতে আক্রান্ত করতে পারে,' বলেন তিনি, 'গরম বাতাস যাবে কয়েলে, আর এয়ার কন্ডিশনিং ইউনিটে যেহেতু কোনো ভাইরাস বা ছত্রাকরোধী ফিল্টার নেই, তাই যেকোনো সংক্রামক প্লুম ছড়িয়ে পড়তে পারে।'

শীতল পরিবেশে করোনাভাইরাস মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে বলে ধারণা করা হয়; তাই এসি চালিয়ে পরিবেশ শীতল রাখাটা হয়তো ভাইরাসটিরই উপকার করবে বলে ধারণা ডা. ট্যাংয়ের।

    সূত্র: দ্য টেলিগ্রাফ

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.