Sylhet Today 24 PRINT

করোনার বাড়লেও আর লকডাউন নয়

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ০১ জুলাই, ২০২২

করোনার প্রথম থেকে তৃতীয় ঢেউয়ে প্রতিবার নানা নামে লকডাউনের মতো বিধিনিষেধ দেয়া হলেও অর্থনীতির বিবেচনায় এবার আর সেই পথে হাঁটছে না সরকার।

ভাইরাসটির চতুর্থ ঢেউ ছড়িয়ে পড়া নিশ্চিত হলেও আপাতত কঠোর কোনো অবস্থানে যাচ্ছে না প্রশাসন। জনগণকে উদ্বুদ্ধ করে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপরই আপাতত জোর দেয়া হবে।

সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, এর আগে দুইবার কঠোর বিধিনিষেধের কারণে অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সে সময় মানুষের মৃত্যুর হার ও আক্রান্তদের মধ্যে জটিলতা ছিল বেশি। সে কারণে অর্থনীতির সেই ক্ষতি মেনে নিতে হয়েছে। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। রোগী বাড়লেও এবার ভাইরাসটির যে ধরন ছড়াচ্ছে, সেটি রোগীদের মধ্যে জটিলতা তৈরি করছে না সেভাবে। মৃত্যুর হারও কম।

তাছাড়া ইউক্রেন যুদ্ধসহ নানা কারণে বিশ্ব অর্থনীতি এখন চাপে। বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতির যে সমস্যা, তার বাইরে নয় বাংলাদেশও। নিত্যপণ্যের দাম দিয়েছে লাফ। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মনস্তাত্ত্বিক চাপ। এর মধ্যে দেশের পূর্বাঞ্চলে দেখা দিয়েছে বন্যা, উত্তরের কোথাও কোথাও একই সমস্যা। সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষের জীবন হয়ে গেছে কঠিন। এই পরিস্থিতিতে অর্থনীতির ক্ষতি হতে পারে, এমন সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে আরও অপেক্ষা করতে চায় সরকার।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘করোনা ১৫ দিন আগেও অনেক কম ছিল, এক শর নিচে ছিল। এখন অনেক বেড়েছে। আমরা লাগাম টেনে ধরতে চাই। এটা শুধু আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। এভাবেই কমানো সম্ভব। সংক্রমণ থেকে নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হলো মাস্ক পরা।’

তিনি বলেন, ‘মাঠ পর্যায়ে আমরা নির্দেশ দিয়েছি মাস্ক পরার নিশ্চিত করার জন্য। এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ একটি চিঠিও দিয়েছে। সেখানে আমাদের সুপারিশ থাকে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে মাস্ক পরানো, শাস্তি দিয়ে বা কোনো পেনাল্টি দিয়ে না। আমরা তাদের আহ্বান করব, কারণ তাদের মঙ্গলের জন্যই তো এ কাজটি করি। তারপরেও যদি সরকার দেখে যে এখানে ব্যত্যয় ঘটছে, তাহলে কোনো পদক্ষেপ নিতেই সরকার দ্বিধা করবে না। কারণ, আমাদের দেশকে তো করোনামুক্ত রাখতে হবে, সব সচল রাখতে হবে।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালও জোর দিচ্ছেন মাস্ক ব্যবহারের ওপর। তিনি বলেন, ‘কোরবানির হাট হোক, মসজিদ হোক, যেকোনো জনসমাগমে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে যে নির্দেশ দিয়েছে সেটি মেনে চলতে হবে।’

করোনা পরিস্থিতির অবনতিতে সব সরকারি চাকরিজীবীদের এরই মধ্যে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করে নির্দেশ জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

করোনার তৃতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আসার পর বৃহস্পতিবার গত সাড়ে তিন মাসের মধ্যে ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, বুধবার সকাল থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত এক দিনে ভাইরাসটিতে মৃত্যু হয়েছে চারজনের। এর চেয়ে বেশি মৃত্যু হয় গত ১১ মার্চ। সেদিন ২৪ ঘণ্টায় পাঁচজনের মৃত্যুর কথা জানানো হয়।

এ নিয়ে ভাইরাসটিতে এখন পর্যন্ত মারা গেছে ২৯ হাজার ১৪৯ জন।

করোনার তৃতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আসার পর গত ১৬ জুন প্রথমবারের মতো পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৫ শতাংশ ছাড়ায়। টানা ১৪ দিন ৫ শতাংশের বেশি শনাক্তের হার পাওয়া যাওয়ার পর দেশে চতুর্থ ঢেউ ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী, করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকা অবস্থায় শনাক্তের হার পরপর দুই সপ্তাহ ৫ শতাংশের বেশি হলে পরবর্তী ঢেউ ছড়িয়েছে বলে ধরা হবে। সেই হিসাবে দেশে এখন করোনার চতুর্থ ঢেউ চলছে।

কঠোর ব্যবস্থা ছিল আগের ঢেউগুলোতে

২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়ে। এরপর ধীরে ধীরে সংক্রমণ বাড়তে থাকে।

ওই মাসের ২৫ তারিখে সরকার সাধারণ ছুটি নাম দিয়ে অফিস আদালত, যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। টানা ৬৬ দিন চালু থাকে এই ব্যবস্থা।

প্রথম ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আসে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে। একই বছরের মার্চে ডেল্টা ধরনের করোনায় আসে দ্বিতীয় ঢেউ। তবে ওই মাসের শেষ থেকে সংক্রমণ আবার বাড়তে থাকে।

এর মধ্যে ভারতে করোনার এই ধরনটি ব্যাপক প্রাণহানির কারণ হতে থাকে। আর দেশেও ভাইরাসটির উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়ার পর ৫ এপ্রিল দেশ যায় বিধিনিষেধে। শুরুতে মন্ত্রীরা লকডাউনের কথা বললেও পরে লিখিত আদেশে ‘কঠোর বিধিনিষেধ’-এর কথা বলা হয়।

এই বিধিনিষেধ পরে ধাপে ধাপে শিথিল করা হয়। তবে এর মধ্যে করোনা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হয় জুলাইয়ে। একপর্যায়ে শনাক্তের হার ৩৩ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়।

সে সময় বিধিনিষেধ আরও কঠোর করা হয়। মন্ত্রীরা শুরুতে বিধিনিষেধকে ‘শাটডাউন’ বলে আখ্যা দেন। জনগণকে ঘরে রাখতে মোতায়েন করা হয় সেনাবাহিনীও। পরে ধাপে ধাপে শাটডাউন শিথিল হতে হতে আগস্টের শেষে তা তুলে নেয়া হয়।

২০২০ সালের মার্চে বন্ধ করে দেয়া স্কুল-কলেজ তখনও খোলেনি। শাটডাউন তুলে নেয়ার পর সেপ্টেম্বর থেকে ধাপে ধাপে সশরীরে ক্লাস শুরু হতে থাকে শিক্ষাঙ্গনে।

একপর্যায়ে নিয়ন্ত্রণে চলে আসে করোনার দ্বিতীয় ঢেউও। কিন্তু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকেনি খুব বেশি। চলতি বছরের শুরুতে করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন নিয়ে আসে তৃতীয় ঢেউ।

তৃতীয় ঢেউয়ের ২৮ জানুয়ারি করোনা শনাক্তের হার ৩৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ দাঁড়ায়, যা দেশে করোনা সংক্রমণ ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি।

তবে তৃতীয় ঢেউয়ে আক্রান্ত বেশি হলেও মৃত্যু ছিল তুলনামূলক কম। আর আগের দুই ঢেউয়ের মতো এবার সরকার অতটা কঠোর সিদ্ধান্তে যায়নি। তবে অর্ধেক জনবলে অফিস করার পাশাপাশি টিকা কার্যক্রমের ওপর জোর দেয়া হয়।

করোনার এই ঢেউ দ্রুত নিয়ন্ত্রণেও আসে। গত ১১ মার্চ তৃতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আসার বিষয়টি নিশ্চিত হয়। তৃতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আসার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর মাস্ক পরা ছাড়া করোনাসংক্রান্ত সব বিধিনিষেধ তুলে দেয়া হয়। তবে জনগণের মধ্যে মাস্ক পরা নিয়ে অনীহার বিষয়টি আবার দেখা যায়। করোনা সংক্রমণ ক্রমেই বাড়তে থাকলেও এ বিষয়ে সচেতনতার অভাবের বিষয়টি এখনও স্পষ্ট।

গত ১৬ জুন পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার আবার ৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যাওয়ার পর স্পষ্ট হতে থাকে করোনার আরও একটি ঢেউ আসছে। প্রায় প্রতিদিনই শনাক্তের হার ও শনাক্তের সংখ্যা আগের দিনকে ছাড়িয়ে এখন দিনে শনাক্ত ছাড়িয়েছে দুই হাজার।

তবে এবার মৃত্যুর সংখ্যা তৃতীয় ঢেউয়ের চেয়ে কম। গত সাড়ে তিন মাসে ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছে ৪ জন, যা দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় একপর্যায়ে ২০০ ছাড়িয়ে গিয়েছিল।

চতুর্থ ঢেউয়ে মানুষের মধ্যে উদ্বেগ কম থাকার বিষয়টিও স্পষ্ট। সরকার আবার ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ নীতিতে ফিরলেও মানুষ খুব একটা উৎসাহ দিচ্ছে না। আর সরকার এবার আগের মতো মাস্ক নিয়ে কোনো অভিযান চালাচ্ছে না।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.