Sylhet Today 24 PRINT

যে শহরে রাস্তায় রাস্তায় লাশ পড়ে আছে

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ০৫ এপ্রিল, ২০২০

দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ইকুয়েডরের সবচেয়ে জনবহুল শহর গুয়াইয়াকিলে করোনাভাইরাস মহামারির কারণে মানুষজন শুধুমাত্র জনাকীর্ণ হাসপাতাল মারা যাচ্ছে তা নয়, এখানে মানুষকে রাস্তায় মরে পড়ে থাকতে দেখা গেছে।

বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ এর কারণে বাড়িতে যাদের মৃত্যু হয়েছে তাদের মরদেহগুলো সরিয়ে নিতেও কয়েকদিন সময় লেগে যাচ্ছে। কারণ মরদেহ সরিয়ে নেওয়ার তালিকা আর এর জন্য অপেক্ষা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে।

গুয়াইয়াস প্রদেশে করোনাভাইরাসের কারণে ১ এপ্রিল পর্যন্ত ৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে। পুরো ল্যাটিন অ্যামেরিকার সবগুলো দেশ মিলিয়েও এই পরিমাণ মানুষ মারা যায়নি করোনাভাইরাসে। ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে ১৯৩৭ জনের মধ্যে। অন্যদিকে ইকুয়েডরে ২ এপ্রিল পর্যন্ত ১৭৫৮ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ৯৮ জনের। প্রদেশটির রাজধানী গুয়াইয়াকিলেই মোট আক্রান্তের ৭০% রোগীর বসবাস। এটি বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় শহরগুলির মধ্যে একটি যেখানে মাথাপিছু করোনাভাইরাস আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি। তার ওপর, ভাইরাস পরীক্ষার আগেই যারা মারা গেছেন তাদেরকে এই পরিসংখ্যানের বাইরে রাখা হয়েছে।

দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে ইকুয়েডরে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা তৃতীয় সর্বোচ্চ - এর আগে রয়েছে ব্রাজিল এবং চিলি- তবে জনসংখ্যার অনুপাতে ইকুয়েডরে মৃত্যুর হার অন্যান্য দেশের চাইতে বেশি। এমন অবস্থায় গুয়াইয়াকিলের শেষকৃত্য আয়োজকরাও এই পরিস্থিতি সামলে উঠতে পারছে না।

সঙ্কটের মাত্রা এমন যে প্রেসিডেন্ট লেনিন মোরেনো মৃতদেহ সরিয়ে নিতে এবং সমাহিত করতে বিশেষ টাস্কফোর্স তৈরি করেছেন।

জরুরি সেবা সংস্থাগুলোয় মানুষের অতিরিক্ত ফোনের কারণে যে কেবল কোভিড -১৯ রোগীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তা নয়, এতে অন্য রোগে আক্রান্ত মানুষকেও ভুগতে হচ্ছে। যারা রাস্তায় পড়ে মারা যাচ্ছেন তাদের মৃত্যুর খবর রিপোর্ট করতে এবং মানুষকে সেটা জানাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করছেন স্থানীয়রা।

মার্চের শেষ সপ্তাহে, বাড়িতে ৩০০ জনের বেশি মানুষ মারা গিয়েছেন (বিভিন্ন কারণে) এবং তাদের মরদেহ পুলিশ উদ্ধার করে। নিউজ এজেন্সি ইএফই-র একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অপেক্ষমাণ তালিকায় বর্তমানে ১১৫টি নাম রয়েছে। প্রতিদিন বেলা ২টার পর থেকে দেশব্যাপী ১৫ ঘণ্টার কারফিউ জারির কারণে কফিন সংগ্রহ করাও কঠিন হয়ে পড়েছে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র গোছানোও শেষ করা যায় না।

সেনাবাহিনী কমান্ডার ডারউইন জারিন মাত্র কয়েকদিন আগে গুয়াইয়াস প্রদেশের সরকারি সামরিক ও পুলিশ সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বিবিসিকে জানান যে, এই সপ্তাহের শেষে সমস্ত মরদেহ সমাহিত করা হবে।

তবুও মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমশ বাড়তে থাকায় বড় ধরণের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের। স্থানীয় গণমাধ্যম এই বিষয়টি তুলে ধরায় দেশটিতে রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়েছে।

গুয়াইয়াকিলের মেয়র সিনটিয়া ভিটেরি (করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ায় যিনি এখন আলাদা হয়ে আছেন), জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার ব্যর্থতার জন্য সরকারকে দায়ী করেছেন।

লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে ইকুয়েডরেই প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। সেটাও ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে। এরপর দেশটি জাতীয় স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থার ঘোষণা দেয়।

দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী জুয়ান কার্লোস জেভালোস বিবিসিকে বলেন, "বিশ্বে যা চলছে আমরা তা অস্বীকার করতে পারি না, বিষয়টি গুরুতর। তবে আমাদের এটা বোঝাতে হবে যে এই মহাদেশে আমরাই কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে এগিয়ে আছি।"

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.