সিলেটটুডে ডেস্ক | ১৭ ডিসেম্বর, ২০২১
সফররত ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ বলেছেন, একজন তরুণ হিসেবে বঙ্গবন্ধুর সাহসে আমি অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম। তার বজ্রকণ্ঠ লাখো মানুষের মত আমার মধ্যেও বিদ্যুত সঞ্চারিত করেছিল। আমি উপলব্ধি করেছিলাম, তার ভাষণে ছিল সেই সময়ের বাংলাদেশের সাত কোটি মানুষের আকাঙ্খার প্রতিফলন।
তিনি আরও বলেছেন, অত্যাচারী শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বাংলাদেশের বিজয়ে আমার প্রজন্মের লক্ষ লক্ষ ভারতীয়র মত, আমরাও উল্লসিত হয়েছিলাম; বাংলাদেশের জনগণের গভীর বিশ্বাস ও সাহসে অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম।
মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীর উৎসবে বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গী হয়ে বৃহস্পতিবার সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
রামনাথ কোবিন্দ বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের যে বন্ধুত্ব, তা দাঁড়িয়ে আছে অনন্য এক ভিত্তির ওপর, যা সংহত হয়েছিল ৫০ বছর আগে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে। সেই যুদ্ধে বাংলাদেশ আর ভারতের যারা বীর যোদ্ধা, বাংলাদেশের মাননীয় রাষ্ট্রপতিসহ তাদের কেউ কেউ আজ এই অনুষ্ঠানেও উপস্থিত, সেই আস্থা আর বন্ধুত্বের অগ্নিসাক্ষী তারা, যে আস্থা আর বন্ধুত্বের জোর থাকলে পাহাড়ও টলিয়ে দেওয়া যায়।
কোবিন্দ বলেন, ৫০ বছর আগে দক্ষিণ এশিয়ার আদর্শের মানচিত্র চিরতরে বদলে গিয়েছিল, জন্ম হয়েছিল বাংলাদেশ নামের এক গর্বিত দেশের। স্বাধীন বাংলাদেশের সেই স্বপ্ন অনুপ্রাণিত করেছিল লাখো মানুষকে। অবশ্য অবিশ্বাসী কেউ কেউ সেটা সম্ভব বলে বিশ্বাস করত না।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু যে বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা কেবল রাজনৈতিকভাবে মুক্ত একটি দেশ নয়, তা হবে সমতার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত সকলের দেশ। দুঃখজনকভাবে নিজের জীবদ্দশায় তিনি তা দেখে যেতে পারেননি। সেইসব স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি, যারা বঙ্গবন্ধু আর তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে হত্যা করেছিল, তারা এটা উপলব্ধি করতে পারেনি যে বুলেট আর সহিংসতা দিয়ে তার দর্শনকে ধ্বংস করা যাবে না, যে দর্শন তৈরি হয়েছে মানুষের স্বপ্নকে ধারণ করে।
কোবিন্দ বলেন, শেখ হাসিনা অসাধারণ সাহসিকতার সঙ্গে গুপ্তহত্যার চেষ্টা আর স্বৈরশাসন মোকাবিলা করেছেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে অগ্রসর হয়েছেন দৃঢ় প্রত্যয় আর বিদ্রোহী চেতনা নিয়ে, যে বিদ্রোহী চেতনার কথা কাজী নজরুল ইসলাম তার কবিতায় বলে গেছেন।
দুই দেশের সম্পর্ককে আরো এগিয়ে নেওয়ার ওপর জোর দিয়ে ভারতের রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, আমাদের অংশীদারিত্বের প্রথম ৫০ বছর কেটেছে কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে, যা আমাদের জনগণের মধ্যে বন্ধুত্বকে আরও গভীর করেছে। সেই সীমাকে আরও প্রসারিত করার সময় এসেছে।
আর তা বাস্তবে পরিণত করতে দুই দেশের ব্যবসায়ী, শিক্ষাবিদ এবং বিশেষ করে তরুণদের উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি কোবিন্দ।
ভারতের জনগণের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে শুভেচ্ছা জানিয়ে কোবিন্দ বলেন, প্রকৃতপক্ষে, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মত এমন মহাকাব্যিক ত্যাগের সাক্ষী মানব সভ্যতা খুব কমই হয়েছে। আপনাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম প্রতিটি ভারতীয়, বিশেষ করে আমার প্রজন্মের মানুষের হৃদয়ে একটি বিশেষ স্থান করে নিয়েছে।
আলোচনা শেষে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানা ভারতীয় রাষ্ট্রপতির হাতে তুলে দেন ‘মুজিব চিরন্তন’ শ্রদ্ধা স্মারক।
অনুষ্ঠানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বাংলা ও ইংরেজিতে প্রকাশিত দুটি স্মারকগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।