Sylhet Today 24 PRINT

শাহপরান থানার ওসিকে বদলির দাবি মুক্তাদিরের

নিজস্ব প্রতিবেদক |  ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৮

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও তল্লাশির নামে অযথা হয়রানির অভিযোগ এনে সিলেট মেট্রোপলিটনের পুলিশের শাহপরান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আখতার হোসেনের দ্রুত বদলীর দাবি জানিয়েছেন সিলেট-১ আসনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির।

রোববার (১৬ ডিসেম্বর) সকালে সিলেট নগরীর ইলেকট্রিক সাপ্লাই এলাকায় ধানের শীষ প্রতীকের প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির এ দাবি জানান।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপার্সনের এ উপদেষ্টা বলেন, "আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সরকার দলীয় লোকজন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আমার নির্বাচনী কাজে নিয়মিত বাধা প্রদান করে যাচ্ছে। নেতা কর্মীদের নির্বিচারে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে ও বাসাবাড়িতে তল্লাশির নামে বিএনপি নেতাকর্মী ও তাদের স্বজনদের হয়রানী নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।"

এসময় তিনি শাহপরান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আখতার হোসেনের দ্রুত বদলীরও দাবী জানান।

বিএনপির এ প্রার্থী বলেন, "১০ ডিসেম্বর (সোমবার) প্রতীক বরাদ্দের পরেই ধানের শীষ প্রতীকের পক্ষে আনুষ্ঠানিক ভাবে আমরা নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা শুরু করি। সেদিন থেকেই সিলেটের প্রশাসন পরিকল্পিতভাবে আমার নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে বাধা দিচ্ছে। ইতোমধ্যে, নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনার জন্যে ইলেকট্রিক সাপ্লাই রোডস্থ নুরে আলা কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া নিয়ে আমরা প্রধান নির্বাচনী কার্যালয় স্থাপন করেছি। শুধুমাত্র আমাদের কাছে ভাড়া দেয়ার কারণে কমিউনিটি সেন্টার কর্তৃপক্ষকে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে নানা ভাবে হয়রানী করা হচ্ছে।"

তিনি আরো বলেন- "সিলেট মহানগরী ও সিলেট সদর উপজেলায় আমাদের গুরুত্বপূর্ণ নেতৃবৃন্দের বাড়ীতে দফায় দফায় তল্লাশি করা হচ্ছে। আমাদের নেতাকর্মীরা গ্রেপ্তার এড়াতে অন্যত্র রাত কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন। নেতাকর্মীদের বাড়ীতে না পেয়ে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আমাদের নেতাকর্মীর স্বজনদের সাথে চরম অসৌজন্য মূলক আচরণ করছে। অনেকের বসত ঘরের আসবাব পত্র তছনছ করা হচ্ছে। আমাদের নেতা কর্মীদেরকে সিলেট ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য হুমকি দেয়া হচ্ছে। এমনকি ৩০ তারিখের পর সিলেট আসার জন্য নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। এ অবস্থায় আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচন কতটুকু অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ হবে- তা নিয়ে জনমনে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে।" 

মুক্তাদির বলেন, "গত ১৩ ডিসেম্বর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ হজরত শাহজালাল (র.) মাজার জিয়ারতে আসলে সেখানে কর্তব্যরত পুলিশ আমাদের মাইকিং এ বাধা দেয় এবং আমাদের প্রচারণা মাইক এর সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। অথচ আমরা নির্বাচনী আচরণ বিধিমালা লঙ্ঘন করিনি। গত এক সপ্তাহে আমাদের অনেক নেতা কর্মীকে অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের কারো কারো বিরুদ্ধে পুরনো রাজনৈতিক মামলা থাকলেও তারা এসব মামলায় জামিনে রয়েছেন। কারো কারো বিরুদ্ধে নতুন করে গায়েবি মামলা দায়ের করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।"

এসময় তিনি নির্বাচনী আচরণবিধি সম্পর্ক বলেন, "সরকারী দলের প্রার্থী ও তার সমর্থকরা প্রতিনিয়ত নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে চলেছেন। তারা রঙ্গিন ব্যানার লাগিয়েছেন। দেয়ালে পোস্টার লাগিয়েছেন। কিন্তু, এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। অথচ, বিভিন্ন স্থানে ধানের শীষ প্রতীকের প্রচারণায় সরকারী দলের প্রার্থীর সমর্থক ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে। কোন কোন স্থানে প্রচারের মাইক নিয়ে এলাকায় প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছেনা। ধানের শীষ প্রতীকের পোস্টার লাগাতে বাধা দেয়া হচ্ছে এমনকি লাগানো পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে।"

তিনি বলেন, "একটি অবাধ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন প্রত্যাশা করে সিলেটবাসীর। কিন্তু, নির্বাচনের প্রচারণায় যেভাবে বাধা দেয়া হচ্ছে, তাতে নির্বাচন কমিশন ঘোষিত ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ সৃষ্টি তো দূরের কথা, নির্বাচনের স্বাভাবিক পরিবেশও সমুন্নত থাকছেনা।"

এসময় প্রশাসনের প্রতি হুশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, "যদি আমাদের প্রচারকাজে বাধা দান বন্ধ করা না হয়, প্রশাসন যদি নিরপেক্ষ আচরণ না করে, আমাদের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও হয়রানী বন্ধ করা না হয়, তাহলে আমরা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অপসারণের জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ দায়ের করতে বাধ্য হবো।"

এসময় সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, "জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে প্রকৃত সত্য তুলে ধরার মাধ্যমে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু করতে জাতির জাগ্রত বিবেক সাংবাদিকদের এগিয়ে আসতে হবে।"

সংবাদ সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের (ওসি) মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, জেলা বিএনপি সভাপতি আবুল কাহের চৌধুরী শামীম, মহানগর বিএনপি সভাপতি নাসিম হোসাইন।

এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক এডভোকেট নুরুল হক, মহানগর ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আজমল বখত চৌধুরী সাদেক, জেলার সাবেক সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আব্দুল গাফফার, ঐক্যফ্রন্ট নেতা এডভোকেট আনসার খান, পেশাজীবী নেতা বদরুদ্দোজা বদর, মহানগর সহ সভাপতি হুমায়ুন কবির শাহীন, এডভোকেট ফয়জুর রহমান জাহেদ, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সিলেটের সভাপতি এডভোকেট এটিএম ফয়েজ, মহানগর বিএনপির সহ সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, জেলা সহ সভাপতি শাহাজামাল নুরুল হুদা, মহানগর সহ সভাপতি এডভোকেট আতিকুর রহমান সাবু, আব্দুর রহিম, সিনিয়র আইনজীবী এডভোকেট আক্তার হোসেন খান, মহানগর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন চৌধুরী, জেলা যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশীদ মামুন প্রমুখ।

এছাড়া সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি, ২৩ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সিলেটের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.