Sylhet Today 24 PRINT

হে দেশ এই অনাকাঙ্ক্ষিত সন্তানের ঘৃণা গ্রহণ কর

নিজস্ব প্রতিবেদক |  ২৭ মে, ২০২০

সিলেটের শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন সেন্টারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া চিকিৎসক এমএ মতিনের মেয়ে তার বাবার চিকিৎসা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সবিস্তার বর্ণনা করেছেন। তিনি বাবার চিকিৎসায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলার অভিযোগ এনেছেন।

গত শুক্রবার সিলেটে করোনার জন্যে নির্ধারিত চিকিৎসাকেন্দ্র শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে মারা যান ডা. এমএ মতিন। তিনি মৌলভীবাজারের সিভিল সার্জন হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। তাদের বর্তমান ঠিকানা সিলেট নগরীর শাহজালাল উপশহর। করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ওই চিকিৎসককে মধ্যরাতে নগরীর মানিকপীর গোরস্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দাফন করা হয়।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার রাতে ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে রাবেয়া বেগম তার বাবার চিকিৎসা নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে শামসুদ্দিন হাসপাতালে কর্তব্যরতদের অবহেলাকে দায়ী করেছেন। ডা. রাবেয়া বেগম নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ, সিলেটের গাইনী ও অবস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। তিনি লিখেন-

মার কলিজার টুকরা সব জায়গায় মধ্যমণি হতে চাইত, প্রাধান্য চাইত, শিরোনাম হতে চাইত। আব্বাগো, আল্লাহ রাহমানির রহিম বড়ই মেহেরবান। তোমাকে তিনিও বড় প্রাধান্য দিয়েছেন, পবিত্র রামাদানে, নাযাতের মহিমান্বিত বেজোড় রাতে তোমায় তিনি মেহমান হিসেবে কবুল করেছেন। আলহামদুলিল্লাহ! দুনিয়ায়ও তুমি শিরোনাম হয়ে গেলে।

সকাল সাতটা থেকে আটটার মধ্যে তোমাকে নিয়ে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গেলাম, কত আকুতি করলাম, ওরা নিলো না। রেফার করলো শামসুদ্দিন হাসপাতালে।

ইমারজেন্সিতে দাঁড়িয়ে রইলাম আধাঘণ্টা, তারপর ডাক্তার এলো, বন্ধ দরজার ওপাশ থেকে বলল এক নম্বর ওয়ার্ডে নিয়ে যান। শুধু এটুকু বলার জন্য আরও নীল হলো আমার বাবা। নিজে আমার সাথে আনা অ্যাম্বুলেন্সের কর্মীদের সাথে করে ট্রলি নিয়ে ছুটছি, কেউ বলে দেওয়ার, দেখিয়ে দেওয়ার নেই এক নম্বর কোনদিকে। উদভ্রান্তের মতো ছুটছে এক ডাক্তার বানানোর কারিগর তার ডাক্তার বাবাকে নিয়ে। যে বাবা আজীবন শুধু বিনা পয়সায় চিকিৎসা দিয়ে গেলো হাজার হাজার মানুষের, যে বাবা আজীবন হেলথ সেক্টরের অনিয়ম দূর করতে লড়েছে, সরকারি কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করতে আমাদেরকে ভুলে যেতো। না শুধু গরীবের না, সমাজের সব সুযোগসন্ধানীরা জানতো ডাক্তার মতিন পয়সা নেবেন না।

ট্রলি ঠেলছি, অক্সিজেন সিলিন্ডার অ্যাম্বুলেন্সে ফিক্সড, নীল গাঢ় হচ্ছিল...। ওয়ার্ডে পৌছুলাম, নোংরা বেডে আমার পারফেকসনিস্ট বাবাকে নিজে টেনেহিঁচড়ে নামালাম। বলা হলো- যান অক্সিজেন মাস্ক কিনে আনেন। নীল গাঢ়তর হচ্ছে। কতশত ডাক্তারকে ফোন দিলাম, কেউ ধরল না। তিন চার ঘণ্টা এভাবেই কাটলো। কোন ডাক্তার এলো না। শুধু অক্সিজেন দিয়ে বসে রইলাম।

তারপর ডাইরেক্টর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. ইউনূস সাহেবের কানে যখন ফোন গেলো তিনি খুব সহযোগিতা করলেন। তার নির্দেশেরও এক ঘণ্টা চলে যাবার পর এক ওয়ার্ডবয় এসে বলল রোগীকে আইসিইউতে নেবো, কিন্তু ট্রলি কে ঠেলবে? আমি বললাম আমি। আবার ছুটে চলছি। বেলা দুটোয় ডাক্তার এলেন। আমাকে বললেন- আইসিইউ বেড অকুপাইড, তবে আমি চাইলে একটা বিকল্প ব্যবস্থা হবে, কিন্তু রোগীর যে কন্ডিশন, তাতে লাভ হবে না। লাভ না হওয়ার কন্ডিশন তো তৈরি করলেন, anoxic organ damage তো করা শেষ।

আপনাদেরকে অনেক ধন্যবাদ, আমাকে এক শহীদ পিতার গর্বিত সন্তান বানানোর পথ সুগম করায় সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য। ধন্যবাদটা শুধু ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাহেবকে দেবো না!

বি. দ্র. বাবার সরকারি চাকরির কঠিনতর দায়িত্ব পালন, আপোষহীন নীতির জন্য বারবার অনাকাঙ্ক্ষিত বদলি, অল্প কয়েকটা টাকায় সংসার চালানো দেখে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে জয়েন করলাম। বিশটি বছর দেশের মানুষের জন্য কাজ করে আজ জানলাম আমি এ দেশের এক অনাকাঙ্ক্ষিত সন্তান। হে দেশ তোমার এই অনাকাঙ্ক্ষিত সন্তানের অসীম ঘৃণা গ্রহণ কর। আমার বাবার সকল বংশধর তোমাকে আজীবন ঘৃণা জানাবে।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.