Sylhet Today 24 PRINT

অপরাধ রোধে যৌন হয়রানির বিষয় পাঠ্যসূচিতে আনা জরুরি

এস এম নাদিম মাহমুদ |  ১২ অক্টোবর, ২০২০

ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা ‘মৃত্যুদণ্ড’ করার পক্ষে সায় দিয়েছে সরকার। নিঃসন্দেহে গত কয়েক দশকের মধ্যে আইনপ্রণেতাদের করা আইনগুলোর মধ্যে এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আইন হবে।

নারীর প্রতি সহিংসতা কমাতে যে আইনটির প্রয়োজনীয়তা বছর পর বছর ধরে থাকলেও তা করা হয়নি। সর্বশেষ কয়েক হাজার নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে পাওয়া এই আইন হয়তো কিছুটা ধর্ষকদের মনে ভীতি তৈরি করবে, রেহাই পাবে নারীরা।

আইন যখন তৈরি হচ্ছে তখন আরও কিছু বিষয় আইনের মধ্যে সংযোজন জরুরি। কেবল মৃত্যুদণ্ড আইন দিয়ে সব অপরাধ রোধ করা সম্ভব নয়, তার জন্য প্রয়োজন জনসচেতনতা। আমরা বারবার বলে আসছি, যৌন হয়রানির বিষয়গুলো পাঠ্যসূচিতে নিয়ে আসা। ঠিক কী কী কারণে একজন নারী অ্যাবিউজ হন, তার চিত্র সমাজের কাছে তুলে ধরা। অফিস-আদালতে যৌন হয়রানির বিষয়ে নিয়মিত সেমিনারের আয়োজন করা।

আমাদের অনেকেই ধারনা রয়েছে ধর্ষণ মানে হলো নারীর সাথে জোরপূর্বক কামবাসনা সম্পন্ন করা। বিষয়টি কেবল এই ধারনার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না; অনেক শিক্ষিত মানুষই জানে না তার ঠিক কোন আচরণ একজন নারীর কাছে অস্বস্তিকর মনে হতে পারে, কোন অঙ্গ-ভঙ্গির জন্য সে মানসিকভাবে ক্ষতির শিকার হতে পারে, যেটাকে হয়রানির পর্যায়ে পড়ে।

আদালতের বাহিরে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ সেল বিশ্ববিদ্যালয়-অফিসে থাকা বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত। যেখানে নারী সেক্সুয়াল অ্যাবিউজের অভিযোগ দিতে পারে। পুরুষরাও যৌন হয়রানির শিকার হতে পারে, সেটাও মাথায় রাখা জরুরি।

ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত ধর্ষকদের হবে জামিন অযোগ্য ও দ্রুত বিচার আদালতে। বিচার সম্পন্ন হওয়ার আগে কোন ধর্ষকই জামিন পাবে না, এই মর্মে আইনের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।

ধর্ষণের ক্ষেত্রে ডিএনএ টেস্টের উদ্দেশ্য হল ধর্ষক শনাক্তকরণ। ধর্ষণ হয়েছে কি না তা দেখার জন্য প্রাথমিক সিমেন টেস্টই যথেষ্ট। ধর্ষককে চিহ্নিত করতে হলে সন্দেহভাজন ব্যক্তির শরীর থেকে দেহকোষ সংগ্রহ করা হয়। সাধারণত শতকরা ৭৫ ভাগ ভুক্তভোগীই জানেন তাকে কে ধর্ষণ করেছে, ৮০ ভাগ ধর্ষণই হয় পরিচিত জায়গায়। তাই ধর্ষককে সন্দেহভাজন হিসেবে ট্রিট করা হয় ভুক্তভোগীর জবানি থেকে। আদালতে আসল ব্যক্তিকে চিহ্নিত করার জন্যই দরকার এই ডিএনএ টেস্ট।

তাছাড়া, সাধারণত সিমেন ৭২ ঘণ্টা, ভ্যাজাইনা-রস ১২ ঘণ্টা থেকে ৭ দিন, নখ ২ দিন এবং চামড়া ৭ দিনের মধ্যে সংগ্রহ করতে হয়। এর মধ্যে কোনো অবস্থায় ধর্ষিতা গোসল করলে কিংবা শরীরের অংশ ধুয়ে ফেললে ধর্ষণের আলামত নষ্ট হয়ে যায়।

ভুক্তভোগীর সঠিক বিচার পাওয়ার জন্য তাই আলামত রক্ষা করা জরুরি। ‘ধর্ষণের আলামত’এর ফরেনসিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য পরীক্ষাগার বাড়ানো উচিত। ধর্ষণ মামলা হওয়ার পর ধর্ষককে শনাক্ত করতে ফরেনসিক ল্যাবরেটরির এইসব প্রতিবেদন যেন হয় পক্ষপাতহীন।

ধর্ষণের অভিযোগ যেমন ভুক্তভোগী করবে, সেটা প্রমাণ হবে আদালতে। আর যদি মিথ্যা অভিযোগ কারও প্রতি আনা হয় আর সেটি যদি প্রমাণিত হয়, তবে তার বিরুদ্ধেও কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা থাকতে হবে।

আর এইগুলো করতে পারলে, তবেই ধর্ষকদের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ফলপ্রসূ হবে, পশুদের হাত থেকে মুক্তি পাবে নারীরা।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.