Sylhet Today 24 PRINT

‘ডাবল স্ট্যান্ডার্ডধারী’ মিডিয়া আল জাজিরা

ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ |  ০৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

লিটার‍্যালিই বলছি, আমার ডান হাতের বৃদ্ধাঙুলি ব্যথা হয়ে গেছে; নিউজফিডে ভালোবাসার ইমো দিতে দিতে আমার আঙুল ব্যথায় প্রায় অবশ হয়ে গেছে! ফেসবুক তার টোটাল টাইমলাইনে এক তালে এক লয়ে এক সুরে এমন ভালোবাসা আর আবেগমাখানো প্রতিবাদ কখনো দেখেছে কি-না আমার জানা নেই; #We_are_the_PrimeMinister_Sheikh_Hasinas_Men. জেনে নিও হে বার্গম্যান; জেনে নিও হে আলজাজিরা; জেনে নিও বাকি সব- উই আর দ্য মেন অব শেখ হাসিনা। জান দেবো তবু শেখ হাসিনার প্রশ্নে একবিন্দু ছাড় দেবো না।

কভিড ডেডিকেটেড সার্জারি ইউনিটে ডিউটি করার পর নিজেই কভিড পজিটিভ হয়ে বেশ কিছুদিন যাবৎ মৃদু উপসর্গ নিয়ে বাসাতেই চিকিৎসা ও বিশ্রাম নিচ্ছি, ফেসবুকের সাথে বেশ কয়েকদিন যাবৎ মোটামুটি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। এর মধ্যে হঠাৎ করেই বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের খবর দেখে ফেসবুকে ঢুকে 'আল জাজিরা' নামক 'ডাবল স্ট্যান্ডার্ডধারী' (কেন 'ডাবল স্ট্যান্ডার্ডধারী' বললাম সে ব্যাখ্যা পরে দিচ্ছি) এক আন্তর্জাতিক মিডিয়ার প্রযোজনায় আর ডেভিড বার্গম্যানের পরিচালনায় একবিংশ শতাব্দীর মোস্ট ফাউল যে কল্পচিত্রটি দেখলাম তা এক কথায় 'ধান ভানতে শিবের গাজন'।

আপনাদের সবারই মনে হয় একমাত্র 'গরু'র রচনা মুখস্থ করা সেই ছাত্রের গল্পটি জানা আছে। ছাত্রটি শুধুমাত্র 'গরু'র রচনা মুখস্থ করে পরীক্ষা দিতে গিয়ে দেখলো পরীক্ষায় এসেছে 'নদী'র রচনা। কোন উপায়ান্তর না দেখে ছাত্রটি রচনা লেখা শুরু করলো এভাবে- আমাদের গ্রামের পাশে একটা নদী ছিলো, নদীর ধারে একটা গরু বাঁধা ছিলো, গরু খুব নিরীহ ও শান্ত গৃহপালিত প্রাণি, গরুর চারটি পা আছে... এই রচনার সাথে আমি 'আল জাজিরা'র এই কল্পচিত্রের কোন পার্থক্য খুঁজে পাইনি। সেনাপ্রধানের পরিবারকে জড়িয়ে সত্যমিথ্যা মিশিয়ে যে গুলতানি গল্প তৈরি করা হয়েছে সেখানে একেবারেই অনাবশ্যক এবং সম্পূর্ণ অনর্থকভাবে আমাদের প্রিয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে টেনে এনে তাকে ডিফেইম করার অবিরত ও নিরন্তর চেষ্টা করা হয়েছে। তাদের এই সুপরিকল্পিত কল্পচিত্রেও যে অসংখ্য ফাঁকফোকর আর মিথ্যা ও গুজবের বেসাতি আছে এবং মনগড়া প্লট আছে আশা করি বিভিন্ন দেশীয় গণমাধ্যমের চুলচেরা বিশ্লেষণে পাঠকরা তা ইতিমধ্যেই জেনে ফেলেছেন, তাই আমি আর সেদিকে যেতে চাই না। আমি বরং 'আল জাজিরা' নিয়ে দুটো কথা বলতে চাই।

আমাদের অনেকেরই জানা আছে, এই শতকের শুরুতে উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় সিএনএন ও বিবিসির মতো বিখ্যাত মিডিয়ার বিতর্কিত ও তথাকথিত 'এমবেডেড জার্নালিজম'র সম্পূর্ণ বিপরীতে গিয়ে যুদ্ধমাঠের প্রকৃত খবর তুলে এনে সারাবিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়ে এই 'আল জাজিরা'র উত্থান হয়েছিলো সেদিন। সেসময় পশ্চিমা পরাশক্তির বিপরীতে প্রায় সারা বিশ্বের সাধারণ মানুষের কাছে বস্তুনিষ্ঠ খবরের আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছিলো এই 'আল জাজিরা'। কিন্তু এর পরিচালনা পর্ষদে কী হলো জানি না অত্যন্ত দুঃখজনকভাবে আমরা দেখলাম সেই 'আল জাজিরা' ধীরে ধীরে তার চেহারা চরিত্র বদলাতে বদলাতে একসময় পুরো ইউটার্ন নিয়ে নিলো। এমবেডেড জার্নালিজমের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যে 'আল জাজিরা' একসময় সারাবিশ্বে পরিচিতি পেয়েছিলো সেই 'আল জাজিরা' নিজেই আজ তথাকথিত এমবেডেড জার্নালিজমের স্মারক, সেই 'আল জাজিরা' নিজেই আজ ফরমায়েশি জার্নালিজমের আঁতুড়ঘর, সেই 'আল জাজিরা' নিজেই আজ উসকানিমূলক জার্নালিজমের বাতিঘর। একারণেই বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে 'আল জাজিরা'কে আজ তার এই ইউটার্নের মাশুলও দিতে হচ্ছে। শুধুমাত্র উসকানিমূলক ও ফরমায়েশি জার্নালিজমের কারণেই কয়েকটি মুসলিম দেশসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে নিষিদ্ধ হয়েছে এই 'আল জাজিরা'।

শুরুতে 'আল জাজিরা'র 'ডাবল স্ট্যান্ডার্ড' পলিসি নিয়ে যে বলেছিলাম সেটা নিয়ে কিছু বলে লেখা শেষ করি। 'আল জাজিরা' যেমন ইংরেজি ভাষায় প্রচারিত হয় তেমনি আরবি ভাষাভাষীদের জন্য আরবিতেও প্রচারিত হয়। তো এই দু'ভাষায় তাদের সম্পাদকীয় নীতি পুরোই দুরকম। আরবি ভাষায় প্রচারিত অংশে মুসলিম বিশ্বকে খুশি রাখতে যেমন ইসরায়েলকে 'ইহুদি নাসারা' গালি দিয়ে শাপশাপান্ত করে সংবাদ প্রচার করে তেমনি বহুবিবাহসহ বিভিন্ন ইসলামী বিধিবিধানকে মহীয়ান করে সংবাদ প্রচার করে। আবার একেবারে ঠিক ইউটার্ন নিয়ে ইংরেজি ভাষায় প্রচারিত অংশে তারা যেমন পাশ্চাত্য জীবনযাত্রার সাথে মানিয়ে ও ইসরায়েলের সাথে মাখামাখি করে খবর প্রচার করে তেমনি বহুবিবাহ বা এরকম আরও বহু ইসলামী বিধিবিধান নিয়ে চরম কটাক্ষ করতে বিন্দুমাত্রও দ্বিধা করে না। এরকম 'ডাবল স্ট্যান্ডার্ড' চরিত্র যে মিডিয়ার সেই মিডিয়ার প্রযোজিত কল্পচিত্র কতটুকু ফাউল হতে পারে তা তো সহজেই অনুমেয়।

সেই 'ডাবল স্ট্যাণ্ডার্ডধারী' মিডিয়াই যখন আমার দেশ ও প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কুৎসা রটিয়ে একজন সাধারণ নাগরিকেরও সরল বিশ্বাসে চিড় ধরানোর চেষ্টা করে তখন স্বাভাবিকভাবেই তারা এর প্রতিবাদে শামিল হবে, এটাইতো স্বাভাবিক। এটাই দেখেছি আজ সারাদিন সারা মিডিয়ার সকল খবরে, ফেসবুকের সকল নিউজফিড জুড়ে। এটাই আমাদের আশা জাগাতে অনুপ্রেরণা যোগায়।

প্রিয় নেত্রী, যতদিন তোমার হাতে দেশ, পথ হারাবে না বাংলাদেশ। আমরা তোমারই লোক। জান দেবো তবু তোমার প্রশ্নে কোন ছাড় দেবো না। জান দেবো তবু প্রিয় বাংলাদেশকে পথ হারাতে দেবো না।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.