Sylhet Today 24 PRINT

দাবি মেনে নিন, শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরান

এস এম নাদিম মাহমুদ |  ১৯ জানুয়ারী, ২০২২

প্রায় আট বছর আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে 'বর্ধিত ফি' বাতিলের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে হামলার ঘটনা ঘটেছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে অন্যতম সেই আন্দোলনে চোখের সামনে শিক্ষার্থীদের জখম হতে দেখেছি, হাসপাতালে বিছানায় কাতরাতে দেখেছিলাম। ওই আন্দোলনে যারা মার খেয়েছিল, সেই তাদেরকে মামলার আসামি হতে হয়েছে। ছয়টি মামলায় চারশোর বেশি শিক্ষার্থীকে আসামি করেছিল, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশ। ওই মামলা বছরের পর বছর ধরে চলে, হয়রানি করা হয় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবারকে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ঘটনার পরই দেখেছিলাম, সহস্রাধিক শিক্ষকের মধ্যে হাতেগোনা একডজন শিক্ষক শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ালেও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামী লীগ-বিএনপি ও জামায়াতপন্থি শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে একাট্টা হয়েছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে এসে, তারা তাদের নিপীড়িত সন্তানদের শাস্তি চেয়েছিল।

বহুদিন পর আজ শাবির ঘটনা দেখে সেই স্মৃতি চোখের সামনে ভেসে উঠলো। এখানেও একদল শিক্ষক তাদের শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে রাস্তায় নেমেছে। নির্যাতিত ছেলে-মেয়েদের পাশে না দাঁড়িয়ে তারাও মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। সেখানেও শিক্ষার্থীদের নামে মামলা করেছে পুলিশ। ঠিক একই কায়দায় সেখানে ছেলে-মেয়েদের ন্যায্য দাবির বিরুদ্ধে প্রশাসন ও শিক্ষকরা চড়াও হচ্ছে। রাবির ভুক্তভোগী ছেলে-মেয়েদের মত হয়তো তাদের মাথাও মামলা-হয়রানি চলবে।

আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যখন নিজেদের প্রয়োজন হয়েছে, তখনই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পুলিশকে লেলিয়ে দিয়েছে, ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনকে লেলিয়ে দিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করেছে। বিতর্কিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয়কে। ছাত্র-শিক্ষকদের মধ্যে সম্পর্কহানিও করছে গুটিকয়েক স্বার্থান্বেষী শিক্ষক।

নিজের সন্তানদের নামে নিন্দা করতে এদের মুখ আটকায় না, পুলিশকে দিয়ে পিটিয়েও এরা ক্ষান্ত হয় না। আমি তাদেরকে প্রকৃত শিক্ষক বলতে নারাজ। শিক্ষার্থীদের যারা শত্রু ভাবছে, ক্লাসে তারা কী করবে? রাস্তায় প্ল্যাকার্ড হাতে সন্তানদের শাস্তি দাবি করছে তারা কীভাবে শিক্ষক হতে পারেন? অথচ এইসব শিক্ষকদের ব্যানার নিয়ে রাস্তায় দাবি তোলা উচিত ছিল, কেন তার ছেলে-মেয়েদের মারধর করা হলো? কেন মামলা করা হলো? সহকর্মীর গবেষণাকর্ম চৌর্যবৃত্তি দেখার পরও এদের উচিত ছিল, সেই সহকর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া।

শাবির শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিন, তাদের দ্রুত ক্লাসে ফেরান। এমন মহান উপাচার্যের দরকার নেই, বরং তিনি ব্যবসা, বনানী, গুলশানের নর্থ ক্লাবগুলোকে সামলাক। মহামারির ধকল সহ্য করতে যারা দিশেহারা, সেখানে তারা আপনাদের অপকর্ম নিয়ে সোচ্চার হয়েছে, এটাই তো অনেক কিছু।

মাননীয় আচার্য দ্রুত বিষয়টি সমাধান করুন। মনে রাখবেন, শিক্ষার্থীরা রাষ্ট্রের শত্রু নয়, তারা তাদের পিতৃতুল্য শিক্ষকদেরও শত্রু নয়। এদের পাশে আমরা ছিলাম, থাকবো।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.