Sylhet Today 24 PRINT

‘নাহুবো’ গানে অনিমেষ বিলুপ্তপ্রায় হাজং ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করেছেন

লুৎফর হাসান |  ২০ মার্চ, ২০২৩

কোক স্টুডিও-বাংলার নাহুবো গানে অনিমেষ রায়। ছবি: সংগৃহীত

কোক স্টুডিওতে অনিমেষের গাওয়া ‘নাহুবো’ গানটা আমার ভালো লেগেছে। কোক স্টুডিওর সঙ্গে আমার কোথাও বিরোধ নাই, প্রেমও নাই। আমি ওই চ্যানেলের একজন সাবস্ক্রাইবার মাত্র।

নিরীক্ষামূলক নানান গান আমি বারবার শুনি। শুনতে ভালো লাগে। দুই একটা গান দেখতে ভালো লাগে নাই। শুনতে আপত্তি কখনই ছিল না। তো, বিভিন্ন জনের ফেসবুক পোস্টে দেখলাম অনিমেষের গাওয়া ‘নাহুবো’ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে অনেকেই কথা বলছেন। কিছুটা মর্মাহত হয়ে অনিমেষকেও দেখলাম বিরাট এক পোস্ট লিখেছে, এখন সেই পোস্ট পাচ্ছি না। অনিমেষ গান করেছে হাজং ভাষায়।

জাতিসংঘের এক গবেষণায় এসেছে, বিশ্বের কোথাও না কোথাও গড়ে প্রতি দুই সপ্তাহে একটি ভাষা মারা যায়। সেই বিলুপ্তির তালিকায় আছে হাজং ভাষাও। গারোপাহাড় অঞ্চলে বসবাসরত এই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষা, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রয়েছে।

তাদের এই হাজং ভাষার সঙ্গে অহমিয়া ও বাংলা ভাষার গভীর সংমিশ্রণ থাকলেও উচ্চারণগত ভিন্নতা আছে। কিন্তু কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই ভাষা চর্চার কোন সুযোগ না থাকায় শুধুই বাংলা ভাষায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ছেন তারা। ফলে হারিয়ে যাচ্ছে তাদের নিজস্ব ভাষাবৈচিত্র্য।

হাজংরা নামেমাত্র একটা জনগোষ্ঠী না। মানব সভ্যতায় এদের অবদান অনেক। প্রাচীন অতীতে তিব্বত থেকে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় স্থানান্তরিত হওয়া নৃগোষ্ঠী হাজংরা নানান সময়ে আমাদের ভূখণ্ডের হাতিখেদা বিদ্রোহ, বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন, টঙ্ক প্রথা ও জমিদার প্রথা বিরোধী আন্দোলনের সাথে সরাসরি যুক্ত ছিল।

অনিমেষ সেই গোষ্ঠীর প্রতিনিধি হয়ে বিলুপ্তপ্রায় ভাষাটা বাঁচিয়ে রাখার জন্য সামান্য কাজ করেছে, তা নিয়ে কেন বিতর্ক হচ্ছে আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে তা ধরা পড়ছে না। আমাদের মধ্যে কেউ যখন ফান করে একটা পোস্ট দেয়, পোস্টের বিষয় না বুঝেও অনেকে এসে সহমত জানিয়ে যায়। সেই সহমতের মিছিল এত বড় হয় আর কটাক্ষ এত নির্মম হয়, শিল্পীর দরজাতেই পৌঁছে যায়। ফলে সেই শিল্পী বিব্রত হয়, কষ্ট পায়।

অনিমেষ একটা চেষ্টা করেছে তার ভাষার পক্ষে। অপরাধ তো করে নাই। একটা গানের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে আপনি আমি কতটা লাভবান হব? দেশ ও জাতি কতটা উদ্ধার হবে? বরং আমরা যদি অনিমেষদের উৎসাহ দিই, বিলুপ্তপ্রায় অনেক সংস্কৃতিই তো আবার ফিরতে পারে।

অনিমেষ তো গানই গেয়েছে, কোনও ইভেন্টের ডাক দেয় নাই। তাকে উৎসাহ না দিতে পারেন, চুপ থাকা যায় তো। আমি কেন লিখলাম? কেননা, অনিমেষের দিকে তাকালেই মনে হয় শতভাগ গানপাগল একটা মানুষ সম্মুখে সৌরভ ছড়াচ্ছে। অনিমেষের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকুক।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.