Sylhet Today 24 PRINT

ব্যারিস্টার সুমনকে নিয়ে যে প্রশ্ন, যে উত্তর...

সুদীপ্ত সুজয় |  ২৯ মার্চ, ২০২৪

ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। ছবি: সংগৃহীত

ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনকে নিয়ে একটা আলাপ শুনি মাঝে মাঝে। আলাপের বিষয় হলো সুমন ভাই অসাম্প্রদায়িক নন। বিশেষ করে কিছু হিন্দু বন্ধু অথবা ফেসবুক আইডি থেকে এসব পোস্ট ও কমেন্ট দেখি। তাদের দাবি সুমন ভাই যেহেতু সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে লাইভ করেন না, তিনি সাম্প্রদায়িক। আবার অনেকে ভাবে তিনি আল্লাহর নাম নিয়ে ভিডিও করেন, হজ-ওমরাহ করেন তাহলে তিনি কীভাবে অসাম্প্রদায়িক হন?

প্রথমত ব্যারিস্টার সুমনের একটা ভিশন আছে। তার কাজের একটা প্যাটার্ন আছে। তাকে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে আমি নিজে বলতে শুনেছি, 'আমি সব বিষয় নিয়ে লাইভ করি না, ভিডিও দিই না। আমি আমার জায়গা থেকে এমন বিষয় চুজ করি যেগুলো অন্যরা পিক করে না, মিডিয়ায় আসে না, আড়ালে পড়ে থাকে।' এরপর আর কোনো কথা থাকে না। কারণ সংখ্যালঘু নির্যাতন দেশের সবচেয়ে আলোচিত ইস্যুগুলোর একটি। এটি নিয়ে দেশি ও আন্তর্জাতিক মিডিয়া সরগরম থাকে সবসময়। এই ইস্যুতে ওনার লাইভ করার দরকার মনে হয়নি, তাই করেননি। যেদিন মনে হবে ইস্যুটা আলোচিত হচ্ছে না সেদিন হয়তো করবেন। না করলেও কোনো সমস্যা নেই। কারণ লাইভ করা না-করা দিয়ে কারও অসাম্প্রদায়িকতা প্রমাণ হয় না। অসাম্প্রদায়িকতা আচরণ থেকে প্রমাণ হয়। ভিন্নধর্মের লোকদের আপনি কোন দৃষ্টিতে দেখবেন, তাদের সাথে কেমন আচরণ করবেন সেগুলো বিবেচ্য বিষয়।

ব্যারিস্টার সুমন যে নির্বাচনী আসন থেকে পাশ করেছেন সেখানে ২৪টার মতো চা বাগান আছে। সে সব বাগানের শ্রমিকরা সারাজীবন নৌকায় ভোট দিয়েছে। একজন মন্ত্রী ও লিগের প্রভাবশালী বড় নেতার বিরুদ্ধে নির্বাচন করেছেন তিনি। তবু ভূমিধস বিজয় অর্জন করেছেন। এই যে চা বাগানের এত এত ভোটার, যারা প্রায় সবাই সংখ্যালঘু, তারা কেন একজন হেভিওয়েট মন্ত্রী ও তাদের বাপ-দাদার ঐতিহ্য নৌকা ছেড়ে সুমনকে ভোট দিলো? তারা কি জানে না সুমন সাম্প্রদায়িক নাকি অসাম্প্রদায়িক? চুনারুঘাটের হিন্দু কমিউনিটির লোকজনের অনেকের সাথে আমার কথা হয়। তারা তো সুমন বলতে অজ্ঞান। সুমনের মতো মানুষ হয় না, এরকমই মন্তব্য। খেয়াল করুন, তারা কিন্তু কেউ বলে না সুমনের মতো নেতা হয় না, মুসলমান হয় না। তারা বলে 'মানুষ হয় না।'

ব্যারিস্টার সুমনের অসাম্প্রদায়িকতার আরেকটা উদাহরণ দিই। দুই বছর আগে এক রমজানে এক ধর্মান্ধ পুলিশ সদস্য টিপ পরা নিয়ে নারীকে হেনস্তা করেছিল মনে আছে? সেই পুলিশ গ্রেপ্তারের পর সুমন ভাইয়ের কাছে ওনার স্ত্রী একাধিকবার দেখা করেছেন জামিন করানোর জন্য। সেটা তিনি করেননি। বারবার ফিরিয়ে দিয়েছেন। একজন ধর্মান্ধ লোক, যার পক্ষে দেশের কোটি কোটি তৌহিদি জনতা, তার মামলা নেননি তিনি। বরং এই মামলা না নেয়ায় ওনার বিরুদ্ধে কনটেন্ট বানিয়ে ইলিয়াস, পিনাকি, কনক গং ধর্মান্ধদের লেলিয়ে দেয়। অনেকদিন এর রেশ ছিল। ওনাকে খুব বাজেভাবে ট্রল করেছে ধর্মান্ধগোষ্ঠী। ওনাকে তারা এখনও শত্রুই মনে করে। বিভিন্ন কমেন্টে দেখি এখনও। আর আপনারা জিগির তুলেন তিনি সাম্প্রদায়িক? কী চমৎকার!

আল্লাহর নাম, নামাজ, রোজা, হজের কথায় আসি। কেউ তার ধর্ম পালন করলে সে অসাম্প্রদায়িক হতে পারবে না এই আলাপ কই পাইলেন? তাহলে তো উপমহাদেশে অসাম্প্রদায়িক মানুষের সংখ্যা ০০০০১%ও হবে না। আপনারাই তো ফেসবুকে এসে অসাম্প্রদায়িকতা মারান, আবার দেখি বারো মাসে তেরো দুগুণে ছাব্বিশ পার্বণও বিপুল উৎসাহের সাথে পালন করেন। এমনকি হিন্দু নাস্তিক যারা, সারাদিন অন্যধর্মের বিপক্ষে লেখালেখি করে, তারাও দেখি ধর্মের কুসংস্কারগুলোও বাদ দেয় না। সব পালন করে। অসাম্প্রদায়িকতার সংজ্ঞা কী? নিজের ধর্মকে গালাগালি করে অন্য ধর্মের উৎসবে শরিক হওয়া? এই সংজ্ঞা আবার শুধু সংখ্যাগরিষ্ঠের জন্য প্রযোজ্য, তাদের জন্য নয়। অথচ নিজের ধর্ম পালন করেও অসাম্প্রদায়িক হওয়া যায়, যদি তার মধ্যে গোঁড়ামি ও কুসংস্কারগুলো না থাকে।

ব্যারিস্টার সুমন কতটা অসাম্প্রদায়িক সেটা জানতে হলে শুরুতে তার ভিন্নধর্মী বন্ধুদের কাছে যেতে হবে। তারপর যেতে হবে তার ভিন্নধর্মী পাড়া-প্রতিবেশীদের কাছে। তারপর যেতে হবে তার এলাকায় সংখ্যালঘু ভোটারদের কাছে। তারপর সিদ্ধান্ত নিতে হবে তিনি সাম্প্রদায়িক কী না। সুমনকে কাছ থেকে জীবনেও দেখেনি, তার এলাকায় যায়নি, বাস করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আর ফেসবুকে এসে রায় দিয়ে দেয় অমুক অসাম্প্রদায়িক, তমুক মৌলবাদী। ফেসবুকের এই এক সমস্যা। সরকার সস্তায় ইন্টারনেট দিয়েছে, আমরাও অ্যাকাউন্ট খুলে যার বিরুদ্ধে ইচ্ছে তার বিরুদ্ধে লেখালেখি করি। ভাবিনি আমরা তার সম্পর্কে কতটা জানি।

আর প্রগতিশীলদের মধ্যে সমস্যা হলো, যেখানে সমস্যা সেখানে হাত দেয় না। আমি নিজেও প্রগতিশীল দাবি করি। হয়তো আমিও এমন। নইলে আমাদের পুরো ক্রিকেট দল ভরে গেছে সালাফি আহলে হাদিসের জঙ্গিতে, সেটা নিয়ে মাথাব্যথা নাই, প্রতিবাদ, আন্দোলন কিছুই নাই। উলটো খেলা এলেই দাঁত ক্যালিয়ে টিভির সামনে বসে পড়ি। আর একজন অসাম্প্রদায়িক মানুষকেও নিজস্বার্থে সাম্প্রদায়িক বানাতে উঠেপড়ে লেগে যাই। এজন্যই আহমদ ছফা বলেছিলেন, “যারা মৌলবাদী তারা শতকরা একশো ভাগ মৌলবাদী। কিন্তু যারা প্রগতিশীল বলে দাবি করে থাকেন, তাদের কেউ কেউ দশভাগ প্রগতিশীল, পঞ্চাশ ভাগ সুবিধাবাদী, পনেরো ভাগ কাপুরুষ, পাঁচ ভাগ একেবারে জড়বুদ্ধিসম্পন্ন।”

  • সুদীপ্ত সুজয়: অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.