Sylhet Today 24 PRINT

তীব্র রোদে পুড়ে গেলেও বৈশাখে বৃষ্টি চায় না কৃষক

সুফি সুফিয়ান |  ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

আমরা বৃষ্টি চাইতাম চৈত্র মাসে। এক দিকে প্রচণ্ড রোদ অন্যদিকে নিদান। তখন ধানফুল ফুটে। সবুজ ধানের পেটে আসে দুধচাল। পোক্ত হতে বৃষ্টি-কুয়াশা লাগে। নয়তো চিটায় ভরে যায়। কৃষকমনে দুঃখ ভকলায় মাড়ের মতো।

আমরা তখন বৃষ্টির গান গাইতাম। দিনে গাইতো ছোটরা, রাতে বড়রা। প্রতি ঘরের সামনে গিয়ে দলবেঁধে গান গান করতো বড়রা; আল্লা মেঘ দে পানি দে...।

ঘর থেকে বের হয়ে গৃহবধূ চাল-নুন-তেল মরিচ দিত। সঙ্গে এক বোল পানির ঝাপটা। ব্যাপারটা যতটা না প্রার্থনা, ততটাই বিনোদন। ঘরে ঘরে ধর্না দিয়ে যত টাকা বা চাল পেত, জড়ো করে সবাই শিরনি করে খেতো। এটা ছিল পিকনিকের মতো!

গ্রামের মুরব্বিরা ‘হিরালি’ ধরে প্রার্থনা করাত ওই সময়য়েই। যাতে হাওরের হিল (শিলাবৃষ্টি) এলাকায় দিয়ে দেয়। আবার গ্রামের ক্ষতি যাতে না হয় সে জন্যও চতুর্দিকে সীমানা নির্ধারণ করে দেওয়া হতো। চিকনাবাঁশের কৌঠায় তাবিজ বেঁধে। এগুলো কাজ দিত কি না জানি না। আমরা তখন আমাদের বিশ্বাসের মতোই সরল ছিলাম।

আমরা কখনই বৈশাখে মেঘ (বৃষ্টি) চাইতাম না। তীব্র রোদে পুড়ে গেলেও না। রাতে অল্প বৃষ্টি হলে আমাদের আপত্তি থাকত না। বেশি মেঘ মানেই বিড়ম্বনা। পানি জমে নিচু জমি ডুবে যায়। পাহাড়ি ঢল নামলে বাঁধ ফুঁড়ে তলিয়ে যাবার ভয় থাকে। ধান না-শুকালে ঘেরা দিয়ে দেয়। ঘেরা মানে ধানের পেট ফুঁড়ে শিকড় বের হওয়া। এতে ধান নষ্ট হয়ে যায়।

খড় পচে গেলে কৃষক ধানের মতোই কষ্ট পায় কারণ বছরের অর্ধেকের চেয়ে বেশি সময় গবাদি পশু এইসব খড় খেয়ে বাঁচে। ঘরে শুকিয়ে না-তুলতে পারলে চোখে আইন্ধার দেখে কৃষক। আমরা তাই বৃষ্টি চাইতাম না এ সময়।

সুফি সুফিয়ান: গীতিকার, নাট্যকার।

 

হিরালি: অসময়ে ঝড়বৃষ্টি ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে ফসল রক্ষা করার জন্য হাওরের কৃষকেরা তন্ত্রসাধকদের আমন্ত্রণ জানিয়ে নিয়ে আসতেন। এই তন্ত্রসাধকেরা ‘হিরাল’ ও ‘হিরালি’ নামে পরিচিত। তারা এসে মন্ত্রপাঠ করে ঝড়বৃষ্টি থামানোর জন্য চেষ্টা করতেন। লোকায়ত বিশ্বাস থেকে আগেকার মানুষজন এমন আচার পালন করতেন।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.