Sylhet Today 24 PRINT

একাত্তরে শহীদ ‘সহস্র’ লিখে তোপের মুখে ডাকসুর মুক্তিযুদ্ধ সম্পাদক

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫

বিজয়ের মাস উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদের (ডাকসু) শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ডাকসুর মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক ফাতিমা তাসনিম জুমার নিজের ফেসবুক একটি পোস্ট দেন। এতে তিনি শহীদের সংখ্যা ‘সহস্র’ লেখেন। পোস্ট ঘিরে নানা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

শহীদের সংখ্যাকে কমিয়ে দেখানোকে ‘ইনসিকিউরিটি’ মন্তব্য করেছেন ডাকসুর গবেষণা সম্পাদক সানজিদা আহমেদ তন্বী। জাতীয় ছাত্রশক্তিও বিবৃতিতে এটির প্রতিবাদ জানিয়েছে।

গত সোমবার মুক্তিযুদ্ধ সম্পাদক ফাতিমা তাসনিম জুমা ফেসবুকে নিজের আইডিতে ওই পোস্ট করেন। আজ বুধবার রাতে গবেষণা সম্পাদক সানজিদা আহমেদ আরেকটি পোস্টে সমালোচনা করেন।

ফাতিমা তাসনিম জুমা ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট থেকে নির্বাচিত, অন্যদিকে সানজিদা আহমেদ স্বতন্ত্রভাবে জয়ী হয়েছেন।

‘মহান বিজয় দিবস; শহীদদের জানাই গভীর শ্রদ্ধা’ লেখা ডাকসুর একটি ফটোকার্ড পোস্ট করে ফাতিমা তাসনিম লেখেন, ‘দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের সূচনা হয়। সহস্র শহিদের রক্ত, সহস্র বোনের সম্মানের বিনিময়ে অর্জিত হলো বহুল কাঙ্ক্ষিত স্বাধীন সার্বভৌম ভূখণ্ড। আমাদের শহিদেরা আমাদের দিয়ে গেলেন একটুকরো লাল সবুজের পতাকা, নতুন নিজস্ব একান্ত ভূমি, দেশ, জাতীয়তা।’

বিষয়টিকে ইঙ্গিত করে ডাকসুর গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক সানজিদা আহমেদ তন্বী ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। তিনি লেখেন, ‘এই ভূখণ্ডে আমাদের জাতীয় জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা লাভ। নিজেদের রক্ষার এই জনযুদ্ধে ৩০ লক্ষ মানুষ শহীদ হয়েছেন, ২ লক্ষ মা-বোন পাকবাহিনী ও তাদের দোসরদের দ্বারা পাশবিক নির্যাতনের শিকার হন। এই সংখ্যা কিছুটা কম-বেশি হতে পারে। কিন্তু এই সংখ্যা কমিয়ে দেখাতে চাওয়া বা এটি নিয়ে ক্রমাগত কচলাকচলি করা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ব্যক্তির ইনসিকিউরিটির প্রকাশ।’

তিনি আরও লেখেন, “মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারে ‘অত সিরিয়াসও না’ ধারণা ঢুকিয়ে দিয়ে নিজের বা নিজেদের মতাদর্শিক লোকজনের তখনকার অবস্থানকে জাস্টিফাই করার চেষ্টা। মুক্তিযুদ্ধ বা জুলাই কারও সম্পত্তি না। কিন্তু যা ঘটেছে সেটাকে এমনভাবেই দেখা উচিৎ; যাতে সেটার মর্যাদাহানি না হয়!”

এর আগে মঙ্গলবার জাতীয় ছাত্রশক্তির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়ক স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘ডাকসুর মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনবিষয়ক সম্পাদক তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া একটি পোস্টে তথ্য বিকৃতি লক্ষ্য করেছি। যেখানে তিনি মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যাকে ‘সহস্র’ বলে চিত্রিত করেছেন, যা স্পষ্টত শহীদের সংখ্যার বিকৃতি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধ সম্পাদক ফাতিমা তাসনীম বলেন, ‘এটা কথার কথা লিখেছি। এখানে আমি না ধরেন যে ৩০ লক্ষকে খারিজ করেছি। ৩০ লক্ষকে আমি খারিজও করি নাই, গ্রহণও করি নাই- এরকম একটা অবস্থা।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি সহস্র লিখেছি অনেক বুঝাতে... আমাদের অগণিত মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে, সেটা বোঝাতে লিখেছি। কেউ যদি ত্রিশ লক্ষ বলতে চায়, সেটাও বলুক, কেউ যদি তিন লক্ষ বলতে চায়, সেটাও বলুক আমার কোনো সমস্যা নাই।’

অগণিত বুঝাতে ‘লক্ষ’ না লিখে ‘সহস্র’ লেখার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এখানে আমার যেটা ফ্লোতে এসেছে, সেটাই আমি লিখেছি।’

মুক্তিযুদ্ধ সম্পাদক বলেন, ‘আসল সংখ্যা বের করার জন্য আমি মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ে গিয়ে দাবি জানিয়ে এসেছি। উপদেষ্টা নিজেও ত্রিশ লক্ষকে খারিজ করেন। তবে আমি খারিজপন্থিও না, গ্রহণপন্থিও না।’

মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে সংশয় আছে জানিয়ে ডাকসুর এই মুক্তিযুদ্ধ সম্পাদক বলেন, ‘এটা ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং করে বের করার ব্যাপার। আমি কেন বলবো এটা ত্রিশ লক্ষ না তিন লক্ষ, যে ব্যাপারে সংশয় আছে। আমি সেটা খুঁজে বের করব, আমি সেই খুঁজে বের করার পথে আছি।’

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
✉ sylhettoday24@gmail.com ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.