Sylhet Today 24 PRINT

গরীবের আর্তনাদ: রঙ্গমঞ্চ এবং জীবন মঞ্চে

হুমায়ুন কবির জুয়েল |  ১২ মার্চ, ২০১৬

হতদরিদ্র দু'টো পরিবার তাঁর-একটি সংসার অন্যটি যাত্রাদল। প্রাণপুরুষ তিনি। ভাটি বাংলার কিংবদন্তি অভিনেতা, নির্দেশক। প্রায় চল্লিশের অধিক পালা লিখেছেন, ছাপার অক্ষরে দেখা হয়নি কোনদিন! সেখানেও দারিদ্রের আর্তনাদ।

নান্দিক নাট্যদলের ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত ৫দিন ব্যাপী নাট্যোৎসবের শেষ রজনী ১১মার্চ ২০১৬ তে ছিল তাঁর দল ভাটি বাংলা নাট্যগোষ্ঠীর পরিবেশনায় যাত্রাপালা গরীবের আর্তনাদ। এ সুবাদে বিনয়ী, মৃদুভাষী লোকটার সাথে পরিচয়-আলাপ। আলো নিয়ে, মঞ্চ নিয়ে কথা হলো, আগ্রহ নিয়ে কাজ শুরু করলাম। মিলনায়তন ভর্তি দর্শক-তরুণ নাট্যকর্মীদের কৌতুহল-যাত্রা কেমন করে হয়? হারিয়ে যাওয়া শিল্প আগে কখনো দেখা হয়নি তাদের।



বয়সে যাঁরা একটু কিংবা বেশ প্রবীণ তাঁরা এসেছেন অনেকদিন পর আবার যাত্রা দেখবেন বলে। অনেকেই এসেছেন নিবারণ বাবু এবং তাঁর অভিনয় দেখার জন্যে। শুরু হলো যাত্রাপালা। পাত্র-পাত্রী মঞ্চে আসছেন, অর্জিত হচ্ছে নতুন নতুন অভিজ্ঞতা। হল জুড়ে তরঙ্গায়িত হাততালির সম্মিলিত ধ্বণি! নিবারণ চন্দ্র দাস এলেন তাঁর প্রতীকী রূপে-দরিদ্র বাবার চরিত্রে। একেবারে সার্থক রূপায়ন-যেমন অভিনয় তেমন গলার আওয়াজ! তবে কোথায় জানি একটি খটকা লাগছিলো, গ্রিনরুমে খোঁজ নিয়ে জানলাম, শরীর খারাপ লাগছে। নিজে হোমিওপ্যাথি ডাক্তার, জানালেন তেমন কিছু নয় গ্যাসের সমস্যা, ঠিক হয়ে যাবে। ঔষধ  খেলেন। মঞ্চে তখন যাত্রাপালা মধ্যগগণে আর সবার অজান্তে নিবারণ বাবু চলে গেলেন জীবনের শেষ লগণে। তারই সৃষ্টিকর্ম উপভোগে মগ্ন দর্শক জানলো না ন'টা কুড়ি মিনিটে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে হাসপাতালে সম্ভবত তার আগেই তিনি চলে গেছেন না ফেরার দেশে। ডাক্তার কেবল জানালেন সেই কথা-যা আমরা শুনতে চাইনি!

এর আগে ৯.৩০ মিনিটে যাত্রাপালা বন্ধ করে জানানো হলো তাঁর অসুস্থতার খবর। স্তম্ভিত দর্শক দাঁড়িয়ে সমবেদনা জানালো, যার যার মতো প্রার্থনা করলো। হতদরিদ্র যাত্রাশিল্পী নিবারণ বাবুর শেষযাত্রায় এইটুকুই প্রাপ্তি। ভাগ্যবান নিবারণ চন্দ্র দাস অন্তত: এটুকু পেলেন, অনেকের ভাগ্যে তাও জোটে না। যদিও অপাত্রে পূর্ণ হয় অনেক কিছুই। গ্রামেন চিতায় জ্বলবে তাঁর নশ্বর দেহ আর তাঁরই সৃষ্ট যাত্রাপালা "গরীবের আর্তনাদ" রঙ্গমঞ্চ ছাড়িয়ে নব রূপে মঞ্চস্থ হবে তাঁর দুই সংসারে।

আমরা আবারো নতুন করে উপভোগ করবো "গরীবের আর্তনাদ"। নবরূপে মঞ্চায়নের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। মৃত পিতার পাশে ক্রন্দনরত ছোট্ট শিশুর কণ্ঠে ইতিমধ্যেই উচ্চারিত হয়ে গেছে নতুন সংলাপ-"তোমরা নিজেরা আনন্দ পাওয়ার লাগি আমার বাবারে মারি ফালাইছো"!

হুমায়ুন কবির জুয়েল : নাট্যকর্মী, সাংস্কৃতিক সংগঠক।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.