Sylhet Today 24 PRINT

ইডেনে বাংলাদেশ দর্শক সমর্থন পায় নি বলে আমাদের কিছু যায় আসে না

সোশ্যাল মিডিয়া ডেস্ক |  ১৭ মার্চ, ২০১৬

কলকাতার ইডেন গার্ডেনে বাংলাদেশ-পাকিস্তানের মধ্যকার ম্যাচে অধিকাংশ দর্শক পাকিস্তানকে সমর্থন দিয়েছে, এতে আমাদের কী এসে যায় বলে মন্তব্য করেছেন লেখক, ব্লগার ফরিদ আহমেদ।

বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে ফরিদ আহমেদ লিখেন, কেন বাংলাদেশ সমর্থন পায় নি দর্শকদের, সেই বিশ্লেষণে বিস্তারিত যাবার আমার ইচ্ছা নেই। ভারতীয়রা যাকে খুশি তাকে তাদের সমর্থন দিক। এটা তাদের অধিকার এবং স্বাধীনতা। এতে আমাদের কী এসে যায়?

তিনি আরও লিখেন, শুধু মনে রাখবেন, আপনার প্রতিবেশী যখন আপনার প্রতি ঈর্ষান্বিত হবে, ক্ষোভ দেখাবে, অতীত সাহায্যের খোঁটা দেবে পলে পলে, আপনার শত্রু যখন আপনার বিরুদ্ধে গলা ফাটাবে, কুৎসা রটাবে, অপমান করার চেষ্টা করবে সামান্য সুযোগেই, দমে যাবেন না একটুও। বুঝবেন যে, সঠিক পথেই আছেন আপনি। এর চেয়ে বেশি হইচই করার দরকার নেই কোনো।

ফরিদ আহমেদের ফেসবুক পোস্টের বিস্তারিত-

ইডেনে বাংলাদেশ-পাকিস্তান ম্যাচে অধিকাংশ দর্শক পাকিস্তানের সমর্থনে গলা ফাটানোতে আজকে সারাদিন ফেসবুক সয়লাব। নানাজনে নানা ব্যাখ্যা দিচ্ছে। কেউ বলছে ওরা উর্দুভাষী মুসলমান। থাকে কোলকাতায় কিন্তু হৃদয় পড়ে থাকে পাকিস্তানে। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচেও এরা পাকিস্তানকে সাপোর্ট করে।

কেউ আবার বলছে, বাংলাদেশিদের প্রবল ভারত-বিদ্বেষের পাল্টা হিসাবে ভারতীয়রাও বাংলাদেশ বিদ্বেষীর ভূমিকায় নেমেছে। কোনো কোনো বাংলাদেশি এটাতে বিশ্বাস রেখে নিজের দেশের লোকদের কর্মকাণ্ডের নানা সমালোচনা করছেন। আমরা খারাপ দেখেই নাকি ওরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে আমাদের দিক থেকে। আমরা ভালো হলে, ওরা ঠিকই আমাদের সমর্থন দিতো, এটাই তাঁদের যুক্তি।

ইডেনে ভারতীয় দর্শকদের সমর্থন বাংলাদেশের পক্ষে যাবে, এই ধারণা বা আশা যাঁরা করেছিলেন, তাঁদের মূল যুক্তি ছিল যে, কোলকাতা আমাদের মতোই বাংলাভাষী, আমাদের মতোই ভাত-মাছ খাওয়া বাঙালি। কিন্তু একটা জিনিস সবার মাথা থেকে বের হয়ে গিয়েছে যে, পশ্চিম বঙ্গের বেশির ভাগ বাঙালিই এখন বাঙালির চেয়ে অনেক বেশি ভারতীয়। শুধুমাত্র বাংলায় কথা বলে বলেই বাংলাদেশকে সমর্থন করবে তাঁরা, এটা অতি সরল ধরনের আশা মাত্র। পশ্চিম বঙ্গের বেশিরভাগ বাঙালির চোখে এখন বাংলাদেশ একটা বিদেশি মুসলমান রাষ্ট্র ছাড়া আর কিছু না। ওখানে বাংলাদেশ নিয়ে আবেগ আছে শুধুমাত্র পূর্ব বাংলা থেকে যাওয়া মানুষদের মধ্যেই। তাও সবার না। যাঁরা বাংলাদেশ ছেড়েছেন বাধ্য হয়ে, সাম্প্রদায়িকভাবে অত্যাচারিত হয়ে, নির্যাতিত হয়ে, তাঁদের সবার মধ্যে বাংলাদেশের প্রতি ভালবাসা থাকার কথা না। সেটা আশা করাটাও সমীচীন নয়।

কেন বাংলাদেশ সমর্থন পায় নি দর্শকদের, সেই বিশ্লেষণে বিস্তারিত যাবার আমার ইচ্ছা নেই। ভারতীয়রা যাকে খুশি তাকে তাদের সমর্থন দিক। এটা তাদের অধিকার এবং স্বাধীনতা। এতে আমাদের কী এসে যায়? আমি শুধু একটা কথা বলার জন্য এই লেখাটা লিখছি। জাতীয়তাভিত্তিক রাষ্ট্রখচিত এই বিশ্বে অন্য কোনো দেশ কখনই আপনার একান্ত আপন নয়। মুখে মুখে বন্ধু মানেই বন্ধু নয়। রাষ্ট্রের বন্ধুত্ব হচ্ছে কূটনৈতিক বন্ধুত্ব। এখানে আপনি আসলেই একা। বাংলাদেশকেও একাই পথ চলতে হবে। কারো প্রতি অহেতুক বিদ্বেষের প্রয়োজন নেই আমাদের, আবার নিজের দেশকে চাবুকপেটা করে অন্য কোনো দেশের জন্য গলে যাবার মতো হীনমন্যতাকেও প্রশ্রয় দেবার দরকার নেই। এটা আমাদের দেশ, একে একটা শক্ত অবস্থানে নিয়ে যেতে হবে আমাদের নিজেদের পরিশ্রমের মাধ্যমেই।

শুধু মনে রাখবেন, আপনার প্রতিবেশী যখন আপনার প্রতি ঈর্ষান্বিত হবে, ক্ষোভ দেখাবে, অতীত সাহায্যের খোঁটা দেবে পলে পলে, আপনার শত্রু যখন আপনার বিরুদ্ধে গলা ফাটাবে, কুৎসা রটাবে, অপমান করার চেষ্টা করবে সামান্য সুযোগেই, দমে যাবেন না একটুও। বুঝবেন যে, সঠিক পথেই আছেন আপনি। এর চেয়ে বেশি হইচই করার দরকার নেই কোনো।

দৌড় প্রতিযোগিতার শেষ ফিতা সবার আগে স্পর্শ করে নীরবে ছূটে চলা কচ্ছপই।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.