Sylhet Today 24 PRINT

‘মুখ ঢেকে যায় সেন্টিমেন্টে’

সোশ্যাল মিডিয়া ডেস্ক |  ৩০ এপ্রিল, ২০১৬

পৃথিবীর যে কোন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি কোর্স কীভাবে পরিচালিত হবে তা সম্পূর্ণ নির্ভর করে করে ঐ কোর্সটির শিক্ষকের ওপর বলে মন্তব্য করেছেন সাংবাদিক ও সাহিত্যিক মাসকাওয়াথ আহসান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আজিজুর রহমানের বিরুদ্ধে ফেসবুকে প্রাণনাশকের হুমকির প্রেক্ষিতে এ শিক্ষকের এক ফেসবুক স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট শেয়ার করে মাসকাওয়াথ আহসান অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে তাঁর যুক্তি উপস্থাপন করে লিখেন, একজন শিক্ষক শ্রেণীকক্ষে যখন পড়ান তখন তাকে প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কেবল ডিগ্রি দেয়না; ভবিষ্যত সমাজের দক্ষ কর্মী ও নেতা তৈরী করে। ছাত্র-ছাত্রীর পারফরমেন্স যাচাই-এর জন্য এবং প্রত্যেকের শেখার অগ্রগতি যাচাই-এর প্রথম শর্ত হচ্ছে তার চেহারাটি চেনা।

মাসকাওয়াথ আহসানের ফেসবুক পোস্টের বিস্তারিত-

পৃথিবীর যে কোন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি কোর্স কীভাবে পরিচালিত হবে তা সম্পূর্ণ নির্ভর করে করে ঐ কোর্সটির শিক্ষকের ওপর। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ বা বহিরাগত কারো নাক গলানোর সুযোগ নেই। একজন শিক্ষক শ্রেণীকক্ষে যখন পড়ান তখন তাকে প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কেবল ডিগ্রি দেয়না; ভবিষ্যত সমাজের দক্ষ কর্মী ও নেতা তৈরী করে। ছাত্র-ছাত্রীর পারফরমেন্স যাচাই-এর জন্য এবং প্রত্যেকের শেখার অগ্রগতি যাচাই-এর প্রথম শর্ত হচ্ছে তার চেহারাটি চেনা।

একজন ছাত্র ট্রাউজার, লুঙ্গি যাই পরুক কিংবা একজন ছাত্রী শার্ট পরলো বা বোরখা পরলো কীনা সেটা কোন শিক্ষকই নির্ধারণ করেন না; কারণ সেটা ইচ্ছার স্বাধীনতা। কিন্তু প্রত্যেকটি ছাত্র-ছাত্রীর মুখমন্ডল দেখা যেতে হবে। মুখোশ পরা ছাত্র বা মুখ ঢেকে রাখা ছাত্রীকে শ্রেণীকক্ষে রাখা অযৌক্তিক। এতে কার্যকর যোগাযোগ স্থাপিত হচ্ছে না। আর অপরিচিত মানুষকে শ্রেণী কক্ষে বসিয়ে রাখার ঝুঁকিও রয়েছে বিদ্যমান বৈশ্বিক বাস্তবতায়; যেখানে জননিরাপত্তা ঝুঁকির সম্মুখীন।

মিশরের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে মুখ ঢাকা একজন ছাত্রীকে একটি কোর্সের শিক্ষক পাঠদানে অস্বীকৃতি জানালে বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ শিক্ষকের সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানায়। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় পাকিস্তানের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদানকালে এরকম মুখ ঢাকা কয়েকজন ছাত্রীকে ক্লাসে পাঠদান পরীক্ষামূলকভাবে অব্যাহত রাখার পর মিডটার্ম পরীক্ষার খাতায় লক্ষ্য করা যায় অন্যান্যদের চেয়ে তাদের উত্তর অপেক্ষাকৃত দুর্বল। অথচ ভর্তি পরীক্ষায় কাছাকাছি মেধার ছাত্র-ছাত্রীরা উত্তীর্ণ হয়েছিলো। মিডটার্মের ফলাফলের পর ঐ মুখ ঢাকা ছাত্রীদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করার পর তারা যোগাযোগের বাধার সঙ্গে কম শেখার সংযোগটি বুঝতে পারে। এই মুখ ঢেকে রাখা ছাত্রীরা যখন অন্যদের মত মুখ স্পষ্ট রেখে ক্লাসে অংশ নিতে শুরু করলো; প্রতিটি আলোচনায়, এসাইনমেন্ট প্রেসেন্টেশানে এবং বিতর্কে তারা অভাবনীয় সাফল্য দেখাতে সক্ষম হলো। সেই অবগুন্ঠিত ছাত্রীদের একজনই শেষ পর্যন্ত ঐ কোর্সে শীর্ষ ফলাফল করলো। এমন কী সে বিশ্ববিদ্যালয়ের কালচারাল সোসাইটির মহাসচিব নির্বাচিত হলো ভোটে জয়ী হয়ে।

অথচ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সেরা বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অত্যন্ত অভিজ্ঞ শিক্ষক কার্যকর যোগাযোগের জন্য ছাত্রীকে মুখমন্ডল অনাবৃত রাখতে বলায় কতিপয় কট্টরপন্থী সুযোগ পেয়ে শ্রদ্ধেয় শিক্ষককে নানাভাবে অপমানিত করতে চেষ্টা করছে। গত বছরের একটি ঘটনা অনুকূল পরিবেশে হঠাত সামনে এনে তারা হিজাবানুভূতির জিকির তুলে তাকে ধর্মীয় সেন্টিমেন্টের সঙ্গে ঘুটা দিয়ে অন্ধকারের থাবা বাড়িয়েছে প্রাচ্যের অক্সফোর্ডের দিকে। কবে কবে এরা মিশর কিংবা পাকিস্তানের মত কট্টরপন্থী সমাজের চেয়েও অধিক কট্টরপন্থী হবার তাকদ সংগ্রহ করেছে তা বোঝা দায়। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এরকম একটি অন্ধকার যুগীয় প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবে এতো নিশ্চিত।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.