Sylhet Today 24 PRINT

বাচ্চাগুলোকে আর অপমান না করলে হয় না!

জাহিদ নেওয়াজ খান |  ৩০ মে, ২০১৬

জিপিএ-৫ পাওয়া কয়েকজন শিক্ষার্থীকে নিয়ে করা একটি প্রতিবেদন ও এটি ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যাওয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাংবাদিক জাহিদ নেওয়াজ খান। নিজের ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে জাহিদ লিখেন, 'পাঠদানে ভুল পদ্ধতি এবং ভুল মানুষের কাছে শিক্ষা এবং  উপযুক্ত পরিবেশের অভাবে' শিক্ষার্থীরা যা জানার কথা তা জানছে না।

জিপিএ-ফাইভ খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় না। ধরে নিতে পারেন, পরীক্ষায় পাসের অন্য নাম জিপিএ-ফাইভ। একসময় যেটা ছিল থার্ড ডিভিশন এখন সেটাকে জিপিএ-ফাইভ বলা যায়। সুতরাং, জিপিএ-ফাইভ পেলেই আপনাকে সব জানতে হবে এমন না।

প্রতিবেদনকারী ওই টিভি সাংবাদিককে ইঙ্গীত করে জাহিদ নেওয়াজ লিখেন,  'আমরা সাংবাদিকতায় জিপিএ-ফাইভ পাওয়া সাংবাদিক, কিন্তু সাংবাদিকতার সহজপাঠ নেইনি'।

আরও পড়ুন : ‘আইএম জিপিএ ফাইভ’, ‘অপারেশন সার্চলাইট মানে- অপারেশনের সময় যে লাইট জ্বালায়’

জাহিদ নেওয়া খানের স্ট্যাটাসটি হুবুহু তুলে ধরা হলো-

তবে, গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ওই বয়সী একটা ছেলে বা মেয়ের যেসব বিষয় জানা উচিত সে সেটা জানছে কিনা। না জানার এক কারণ: পাঠদানে ভুল পদ্ধতি এবং ভুল মানুষের কাছে শিক্ষা। অন্য কারণ উপযুক্ত পরিবেশের অভাব।

যেমন: আমি জিপিএ-ফাইভ পেয়েছি বাক্যটি যখন একজন এসএসসি পাস ছেলে বা মেয়ে ইংরেজিতে বলতে পারে না তখন বুঝতে হবে তাকে সাধারণ ইংরেজি জ্ঞানও দেওয়া হয়নি। না দিয়েও এমন ব্যবস্থা রাখা হয়েছে যাতে সে জিপিএ-ফাইভ পায় অর্থাৎ পরীক্ষায় পাস করে যায়।

আর অন্য যে বিষয়গুলো তারা জানে না সেটা এ কারণে: তাদেরকে বোঝানো হয়নি যে, ওই বিষয়গুলো শুধু মুখস্থ করে পরীক্ষা দেওয়ার পর ভুলে যাওয়ার জন্য নয়, বরং আগামীর একজন নাগরিক হিসেবে সারাজীবনই মনে রাখার জন্য।

কিন্তু, তাদেরকে যখন বোঝানো হচ্ছে জিপিএ-ই জীবনের একমাত্র ধ্যান-জ্ঞান হওয়া উচিত তখন ছেলেমেয়েরা সবকিছুকে পাঠ্য মনে করে পরীক্ষার খাতায় বমি করে দিয়ে আর মনে রাখার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে না। এর অারেক কারণ পরিবার-সমাজ-শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কেউই তাদেরকে জীবনের কোন দর্শন ধরিয়ে দিচ্ছে না। শুধু জিপিএ-ফাইভ পেয়ে তথাকথিত প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পথে দেখিয়ে দিচ্ছে।

কিন্তু, এসএসসি পাস করা সব ছেলেমেয়েরই কি ওদের মতো একই অবস্থা? না, আমার তা মনে হয় না। আপনি বেছে বেছে এমন স্কুলে যেতে পারেন যেখানে শতভাগ ছেলেমেয়েই ওই প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে পারে। আবার এমন স্কুলেও যেতে পারেন যেখানে কেউই উত্তরগুলো দিতে পারবে না, আর আপনি সার্কাসের ক্লাউনের মতো তাদেরকে উপস্থাপন করতে পারেন।

আরও পড়ুন : জিপিএ ফাইভ এবং আমাদের সাংবাদিকতা

একই অবস্থানের কয়েকটি স্কুল বা জায়গায় যাওয়াটা আসলে র‌্যানডম স্যাম্পলিং এর মধ্যে পড়ে না। ভিন্ন বাস্তবতার ভিন্ন ভিন্ন স্কুল বা জায়গায় গিয়ে আপনি যখন ভিন্ন ভিন্ন অবস্থানের ছেলেমেয়েদেরকে ইন্টারভিউ করবেন তখন সেটা একটা সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরবে।

তারপরও ধরে নিচ্ছি, আমাদের এসএসসি পাস করা ছেলেমেয়েদের বেশিরভাগেরই এই অবস্থা। আর মাছরাঙ্গা টেলিভিশনে সেটাই তুলে ধরার একটা সৎ উদ্দেশ্য কাজ করেছে। কিন্তু, এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেভাবে ছেলেমেয়েগুলোকে অপদস্থ করা হচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে তারা একেকজন সার্কাসের ক্লাউন।

শুরু থেকেই পর্দায় ছেলেমেয়েগুলোর মুখ দেখে মনের ভেতর একটা খচর-মচর করছিল। এখন অনলাইনে বিষয়টার সঙ্গে মুখগুলোও ভাইরাল হতে দেখে ওদের পরিচিত মানুষগুলোর কাছে ওদের অপমানিত হতে হচ্ছে ভেবে কষ্ট পাচ্ছি। আমাদের ছেলেমেয়েদের সিংহভাগই যদি এরকম অবস্থার হয় তাহলে শুধু কয়েকজনকে গিনিপিগ বানিয়ে এমন অপমান কেন?

বিশেষ করে আমার সাংবাদিক বন্ধুদেরকে বলবো, এ বাচ্চাগুলোর কেউ যদি আমার-আপনার সন্তান কিংবা ভাই অথবা বোন হতো তাহলে নিশ্চয়ই আমরা এ প্রশ্ন করতাম: সাংবাদিকতার সাধারণ নীতিমালা অনুযায়ী তাদের সাক্ষাৎকার নেওয়ার আগে কি আমরা ঠিকঠাক অনুমতি নিয়েছিলাম? তাদের বয়স যেহেতু ১৮ বছরের কম, তাই সাক্ষাৎকার নেওয়ার আগে কি এ সাক্ষাৎকারের প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে সেটা আমরা বলেছিলাম?

যদি প্রতিক্রিয়ার বিষয়টা না বুঝিয়ে সাক্ষাৎকার নিয়ে থাকি তাহলে বলবো, আমরা সাংবাদিকতায় জিপিএ-ফাইভ পাওয়া সাংবাদিক, কিন্তু সাংবাদিকতার সহজপাঠ নেইনি।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.