Sylhet Today 24 PRINT

জিপিএ-৫প্রাপ্তদের নিয়ে প্রতিবেদন : প্রশ্নবিদ্ধ শিক্ষার মান ও সাংবাদিকতার নৈতিকতা

নিজস্ব প্রতিবেদক |  ৩১ মে, ২০১৬

মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি)-তে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত কয়েকজন শিক্ষার্থীকে নিয়ে একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের এক প্রতিবেদনকে ঘিরে আলোচনা-সমালোচনায় মুখর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো। সে প্রতিবেদনে জিপিএ-৫প্রাপ্ত কয়েকজন শিক্ষার্থীকে সাংবাদিকের করা প্রশ্নের উত্তর সঠিকভাবে না আসায় অনেকেই শিক্ষার মান নিয়ে সমালোচনা, আবার একই সঙ্গে অনেকেই সাংবাদিকতার নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

মাছরাঙা টেলিভিশনে প্রচারিত এ প্রতিবেদনে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা জানে না 'এসএসসি' মানে কি। 'জিপিএ' মানে কি তাও জানে না।

প্রতিবেদনে সাংবাদিক জিপিএ-৫ প্রাপ্ত একজন শিক্ষার্থীকে প্রশ্ন করেন, আমি জিপিএ-৫ পেয়েছি- এই বাক্যের ইংরেজি কি? জবাবে এক শিক্ষার্থী বলে- 'আই এম জিপিএ-৫'। অপারেশন সার্চলাইট কি, এই প্রশ্নের জবাবে জিপিএ-৫ পাওয়া এক ছাত্রী বলে- 'অপারেশন করার সময় যে লাইট জ্বালায় সেটাই অপারেশন সার্চলাইট।'

ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যাওয়া এই প্রতিবেদনের ভিডিও ও স্ট্যাটাসে অনেকেই নিজেদের মতামত তোলে ধরে শিক্ষাব্যবস্থার করুণ চিত্রের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক সে বিষয়ে এভাবে প্রচার করতে পারেন কিনা সে প্রশ্নও তুলেছেন। অনেক বিশিষ্ট সাংবাদিক এই প্রতিবেদনে সাংবাদিকতার নৈতিকতা লঙ্ঘিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন।

কথাসাহিত্যিক ও কবি আনিসুল হক নিজের প্রতিক্রিয়ায় লিখেছেন, আমি এই রিপোর্টটা শেয়ার দিতে চাই নাই, কারণ শিক্ষার্থীদের চেনা যাচ্ছে, তাদের পরিচিতি গোপন করা গেলে ভালো হতো। আর হঠাৎ করে টেলিভিশন ক্যামেরার সামনে অনেকের মাথাই শূন্য হয়ে যায়। এটা খুবই স্বাভাবিক। তা সত্ত্বেও এই রিপোর্টটা আমাদের শিক্ষা-ব্যবস্থার ভয়াবহ অবস্থাই তুলে ধরছে। পরীক্ষার হলে অবজেক্টিভ টাইপ প্রশ্নগুলোর সঠিক উত্তর নাকি অনেক জায়গাতেই বলে দেয়া হয়। প্রশ্নপত্র ফেসবুকে ছড়ানোর অভিযোগও আছে।

আরও পড়ুন : ‘আইএম জিপিএ ফাইভ’

সাংবাদিক গোলাম মোর্তজা এ প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদকে সরাসরি দায়ি করে লিখেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একটি বিশাল গণসংবর্ধনার মধ্য দিয়ে এই রিপোর্টটি ''তথাকথিত সৎ'' নুরুল ইসলাম নাহিদকে 'উৎসর্গ ' করার প্রস্তাব করছি। প্রজন্ম ধ্বংসের রূপকার হিসেবে সে নিশ্চয়ই গিনেজ বুক অব রেকর্ডস-এ স্থান পাবে!

সাংবাদিক আশরাফুজ্জামান তুহিন লিখেন, সৃজনশীল নামে যা আমরা এনেছি তা আমাদেরকে মানুষ থেকে অমানুষে পরিণত করছে। ঐশীর মত একেকজন দানবীয় শক্তি তৈরি করছে।

ব্লগার মাহমুদুল হক মুন্সী লিখেছেন, আমি শিক্ষা ব্যবস্থার অবনতি দেখি অই রিপোর্টারের বাচ্চাগুলির মুখ দেখানোতে। আমি শঙ্কিত, বাচ্চাগুলি সামাজিকভাবে যেভাবে নিগৃহীত হবে সারা জীবনভর, তাতে তারা আদৌ সুস্থ মানুষ হিসেবে বেড়ে উঠতে পারবে কিনা। আমি ঐ রিপোর্টারের শিক্ষাগত ও নৈতিক শিক্ষা দেখে বুঝেছি, সমাজ ভুল পথে চলছে, যেখানে জলজ্যান্ত এক দামড়া সাংবাদিকের নৈতিক শিক্ষার প্রতি প্রশ্ন তোলার চেয়ে কতগুলি বাচ্চাকে সারা দেশের সামনে হিউমিলিয়েট করাকে আমরা হাততালি দিয়ে সেলিব্রেট করছি।

সাংবাদিক সাইফুল হাসান লিখেছেন, 'যে রিপোর্টটি ভাইরাল হয়েছে, কনটেন্ট অনুযায়ী খুবই ভালো হয়তো, কিন্তু দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা হয়নি। এই বাচ্চাগুলোকে সারাজীবনের জন্য সমাজে ভিকটিম বানিয়ে দেয়া হলো। এই বাচ্চা ও তাদের বাবা-মা, পরিবার-সমাজে, বন্ধু মহলে ছোট হবে। এটা খুউব দ্বায়িত্বহীন ব্যাপার হয়েছে।'
 
সাংবাদিক শংকর মৈত্র লিখেছেন, 'জিপিএ- ৫ প্রাপ্তদের নিয়ে একটি টেলিভিশন চ্যানেলে যে রিপোর্ট প্রচার হয়েছে আমি এ ধরণের রিপোর্টের পক্ষে। শিক্ষাক্ষেত্রে যে অধঃপতন হয়েছে তা তুলে ধরা যেতেই পারে। অনুসন্ধান করে সংবাদ পরিবেশন করাই সাংবাদিকের দায়িত্ব। কিন্তু রিপোর্টে বালক বালিকাদের যে ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তা গুরুতর অপরাধ ও অনৈতিক। সমাজে,পরিবারে সর্বত্র তাদের হেয় করা হয়েছে। কাউকে হেয় করা, অপদস্থ করার অধিকার কোনো সংবাদ মাধ্যমের নেই। এটা মানহানিকর ও ফৌজদারি অপরাধ। সাংবাদিকতার কোনো নৈতিকতাতেও এ রিপোর্ট পড়ে না। রিপোর্টারের উচিত ছিলো ছেলে মেয়েগুলোকে ডার্ক করে দেয়া। যাতে কেউ তাদের চিনতে না পারে।'

মাছরাঙা টেলিভিশনটির প্রতিবেদনটিতে মোট ১৩ জন জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সাক্ষাতকার নেওয়া হয়। কেউই বলতে পারেনি এসএসসি ও জিপিএ-এর পূর্ণ রূপ।

এই শিক্ষার্থীরা জানে না, শহীদ মিনার কিংবা জাতীয় স্মৃতিসৌধ কোথায়, অপারেশন সার্চ লাইট কি, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস কবে তাও জানে না এরা।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস কবে জানতে চাইলে- একজন বলে, ১৭ আগস্ট। আরেকজন বলে, ১০ ডিসেম্বর।

রণসঙ্গীত কে রচনা করেছেন, এর জবাবে দু'জন বলে, 'পারি না'। একজন বলে, 'রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর'।  আর বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা হিসেব বলে, কাজী নজরুল ইসলামের নাম।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.