Sylhet Today 24 PRINT

‘ফুলদির দেয়া ৩০০ টাকা আজও আমার ডায়েরির ভেতর যতন করে রাখা’

সোশ্যাল মিডিয়া ডেস্ক  |  ০৭ জুন, ২০১৬

আজ মঙ্গলবার (৭ জুন)  সকালে সিলেট নগরীতে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন স্কুল শিক্ষিকা সুমিতা দাস ও তাঁর স্বামী স্কলার্সহোম কলেজের প্রশাসনিক কর্মকর্তা অরিজিৎ  রায়। গুরুতর আহত হয়ে তাদের স্কুল পড়ুয়া মেয়ে অরুণিমা রায় স্নেহা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

আরও পড়ুন- বাবা-মা নেই, এখনো জানে না স্নেহা

নিহত সুমিতা দাস সিলেটের সংস্কৃতিকর্মী  দেবজ্যোতি দেবুর জ্যাঠাত বোন। বোন ও বোন জামাই'র মৃত্যুতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আবেগঘন প্রতিক্রিয়া জানান দেবু। কয়েক বছর আগে বোনের দেয়া উপহার জমিয়ে রাখার স্মৃতিচারণ করেন তিনি। লেখালেখির বিষয়ে বোনজামাই অরিজিৎ রায়ের উৎসাহ দেয়ার কথাও উল্লেখ করেন দেবু।   


দেবজ্যোতি দেবু লিখেছেন:

এস.এস.সি পাশ করার পর ফুলদি (আমার জ্যাঠাতো বোন) আমাকে খুশি হয়ে ৩০০ টাকা দিয়েছিল। বলেছিল একটা শার্ট কিনে নিস। আজ ১৬ বছর যাবত ঐ টাকাটা আমার ডায়রির ভিতরে যত্ন করে রাখা। অনেক কষ্টের মাঝেও টাকাগুলোতে হাত দেই নি। বোনের আদর করে দেয়া উপহার খরচ করার সাহস হয়নি আজো। আমার বোনগুলোকে আমি কতোটা ভালোবাসি সেটা শুধুই আমি জানি। আর কেউ জানে না কারণ কোনদিন কারো সামনে তা প্রকাশ করিনি। গতবছর ভাই ফোঁটা দিয়ে ফুলদি বলেছিল, যমের দুয়ারে কাঁটা দিয়ে নাকি আমার আয়ু বাড়িয়েছে।

গত মাস দুয়েক আগে অরিজিৎ দা (ফুলদির স্বামী) আমাকে বলেছিল "লিখালিখি সবাই পারে না। তোমার লিখা ভাল লাগে। তোমার চিন্তা আমার খুব পছন্দ হয়। কোনদিন লিখা আর ঐ চিন্তাটা ছেড়ো না। সবার এই গুণ থাকে না। আমারও নেই।" অরিজিৎ দা'কে কখনো বোনের জামাই হিসেবে দেখি নি। দেখেছি নিজের বড় ভাইয়ের মত। প্রায় সময় দেখা হলেই এই একটা বিষয় নিয়েই কথা হতো। সবাই বলতো আমাকে নাকি দাদা আস্কারা দিয়ে আমার মাথা আরো নষ্ট করে দিচ্ছেন। দাদা হাসতেন। আমাকে বলতেন "সাবধানে লিখো। এসব লিখা বুঝার মত জ্ঞান এই দেশের মানুষের এখনো হয়নি। সাবধানে থেকো।"

ওদের ছোট্ট একটা মেয়ে আছে। আদর করে নাম রেখেছে 'স্নেহা'। বাবার সাথে খুব বেশিই সখ্যতা ছিল স্নেহার। বাবা ছাড়া কোনকিছু বুঝে না। ওরা বাবা মানুষটাই যে এমন। উনাকে ভালোবাসবে না এমন পরিচিত জন মনে হয় খুব কমই আছে।

সুমিতা দি (ফুলদি) আর অরিজিৎ দা একে অপরকে অসম্ভব ভালোবাসতেন। কোনদিন উনাদের ঝগড়া হতে দেখিনি। জীবনে অনেক তিরস্কার পেয়েছিলেন অনেকের কাছ থেকে। কিন্তু কোনদিন হাল ছাড়েন নি। একে অন্যের সঙ্গ ছাড়েন নি। এমনকি আজ পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবার সময়ও দু'জন একসাথেই চলে গেলেন। জীবনে-মরণে সাথি হয়েই রইলেন। স্নেহা এখন ইমার্জেন্সিতে। গুরুতর আহত। জ্ঞান ফিরলেই চারদিকে বাবাকে খোঁজে। পায় না। জানি না ওর মনের ভিতর কি চলছে! এইটুকু জানি, ওর বাবাকে ও আর কোনদিন দেখবে না।

পাথুরে ঈশ্বরে বিশ্বাসী দম্পতির একমাত্র সন্তান আজ ঐ ঈশ্বরের করুণাতেই অনাথ। যমের দুয়ারে কাঁটা দিয়ে ভাইয়ের আয়ু বাড়ানো বোনটির আয়ুই যম কেড়ে নিল।

অরিজিৎ দা + ফুলদি, তোমাদের অনেক ভালোবাসি। কোনদিন তোমাদের সামনে বলা হয় নি। আজ বলছি। হয়তো এই বলাটা তোমরা জানতে পারবে না। আমি এক ফোঁটাও কাঁদতে পারিনি জানো? স্নেহার ওমন অবস্থা দেখেও চোখে পানি আসেনি। হয়তো আমি কাঁদতে জানি না। হয়তো আমি অনুভূতি প্রকাশ করতে পারিনা। হয়তো ভালোবাসা প্রকাশের ক্ষমতা আমার নেই।

আরও পড়ুন- সিলেটে সড়ক দুর্ঘটনায় স্কলার্সহোমের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও তাঁর স্ত্রী নিহত


টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.