Sylhet Today 24 PRINT

তারপরও রানা দাশগুপ্ত-পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায়কে গালাগালি কেনো?

সোশ্যাল মিডিয়া ডেস্ক |  ১৫ জুন, ২০১৬

হিন্দু নেতাদের দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন করার আগে দেখেন আপনি ওর দুঃখটা দূর করার চেষ্টা করেছেন কিনা, এমন মন্তব্য করেছেন আইনজীবী ইমতিয়াজ মাহমুদ। আজ (বুধবার) ফেসবুকে দেয়া এক স্ট্যাটাসে রানা দাসগুপ্ত আর পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায়কে গালাগালি করারও সমালোচনা করেন তিনি।

ফেসবুকে ইমতিয়াজ মাহমুদ লিখেন-

রানা দাসগুপ্ত আর পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায় তো বিষয়টা স্পষ্ট করেছেন। এরপরেও কেন ওঁদেরকে গালাগালি করছেন? দেখেন, রানা দাসগুপ্ত এখানে হিন্দু কমিউনিটির নেতা। পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায়ও পরিচিত ব্যাক্তি, জনপ্রিয় ব্যক্তি। এদের দুইজনের কারোই দেশপ্রেম নিয়ে বা বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য নিয়ে আমার মনে কোন সংশয় নাই। নানা বিষয়ে মতপার্থক্য থাকতে পারে। পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক ইয়ে তো সেরকম জানি না- সাধারণভাবে আওয়ামী লীগপন্থী এবং মুক্তিযোদ্ধা হিসাবেই জানি। কিন্তু রানা দাসগুপ্তের কথা জানি যে তিনি 'একটু বাম ধারা আবার আওয়ামী লীগের প্রতি একটু বেশী টান' এই ধরনের রাজনৈতিক মত পোষণ করেন। এদের এইসব রাজনৈতিক লাইনগুলি আমার পছন্দ না। কিন্তু তাই বলে ওদের দেশপ্রেম নিয়ে আমার মনে কোন সংশয় নাই।

কথা হচ্ছে ওঁরা কি বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতন বন্ধে নরেন্দ্র মোদীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন? ওঁরা দুজনেই বলেছেন যে ওঁরা সেরকম কিছু বলেন নাই। এরপর আর ওঁদেরকে গালাগালি করার কি আছে!

শোনেন, বাংলাদেশের হিন্দুদের উপর যে অত্যাচার হচ্ছে সেটা তো আর মিথ্যা কথা না। সেই অত্যাচারের মাত্রা যে বেড়েছে সেটাও তো মিথ্যা কথা না। বদরুদ্দিন উমর যে প্রবন্ধ লিখে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন যে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক অত্যাচার হচ্ছে না এটা তো একটা ফালতু কথা। বদরুদ্দিন উমরের প্রবন্ধটার একটা জবাব লিখেছে ফিরোজ আহমেদ। পড়ে দেখতে পারেন। উমরের প্রতি তো ফিরোজের খানিকটা ভক্তি আছে, সেটা অক্ষুণ্ণ রেখেই সে উমরের ভ্রান্তি দেখিয়েছে। ভাল লিখেছে। আমার কথা যদি বলেন, আমি মনে করি বদরুদ্দিন উমর এই প্রবন্ধে কোন ভুল করেননি, তিনি ইচ্ছা করেই মিথ্যাচার করেছেন। বদরুদ্দিন উমরের কথা বাদ দেন।

বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর অত্যাচার হয় এবং তার মাত্রা সম্প্রতি বেড়েছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের কমিউনিটি লিডারেরা যদি এটা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে থাকেন সেটাকে কি আপনি দোষের মনে করবেন? আমি করি না। আর সেই কারণে যদি ওঁরা আন্তর্জাতিকভাবে একটা জনমত তৈরি করতে চায়, সেটাকেও আমি মন্দ কিছু মনে করি না। এটা সকলেই করে। আমি সেই ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি, আমাদের এখানে যখনই কোন সাংবাদিক বা লেখকের উপর অত্যাচার হয়েছে অ্যামনেস্টি বা পেন বা এইধরনের অন্যান্য সংস্থাগুলি প্রতিবাদ করে। ওরা সরকারকে চিঠি লেখে। চাপ সৃষ্টি করার চেষ্টা করে। উদাহরণ চাইলে আমি আপনাকে সতেরটা উদাহরণ দিতে পারবো এক নিঃশ্বাসে।

আর বিদেশী সরকারগুলিও এইরকম অভ্যন্তরীণ বিষয়ে চাপ দেয় মাঝে মাঝে। সব সময় যে সঠিক কারণে দেয় তা না, কিন্তু আন্তর্জাতিকভাবে জনমত তৈরি করা সেটা কোন অন্যায় ব্যাপার না। আমাদের বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলি বিদেশের ছোট ছোট নেতা বা কর্মকর্তাদের কাছে কিরকম দেন দরবার করে সেটা তো আপনারা জানেনই। আমরাও বিদেশের ব্যাপারে নিন্দা প্রতিবাদ এইসব করি। এইটা সবসময় সেরকম অন্যায় না।

মালয়েশিয়ার একটা উদাহরণ দিই। বেশীদিন আগের কথা না ২০০৭ সনের কথা।

আপনারা তো জানেনই যে মালয়েশিয়ায় একটা বেশ বড় ভারতীয় বংশোদ্ভূত জনগোষ্ঠী আছে। বেশিরভাগই দক্ষিনি তামিল, তবে অ-তামিলও আছে। এরা তো কয়েক প্রজন্ম ধরে মালয়েশিয়ারই মানুষ হয়ে গেছে আরকি। এরা মালয়েশিয়ায় সংখ্যালঘু। এদের উপরও জাতিগত অত্যাচার নির্যাতন হয়। কয়েকবার দাঙ্গা হাঙ্গামাও হয়েছে, অনেক তামিল মালয়েশিয়ান মারাও গেছে। ২০০৭ সনে এরকম হাজারে হাজার ভারতীয় বংশোদ্ভূত মালয়েশিয়ান মানুষ কুয়ালালামপুর শহরে ব্রিটিশ দূতাবাস ঘেরাও করেছিল। ওদের দাবী কি? ওদের দাবী ছিল ব্রিটিশ সরকার যেন মালয়েশিয়ার বিরুদ্ধে জাতিগত নিপীড়নের অভিযোগটি জাতিসংঘে উত্থাপন করে।

বুঝেন ব্যাপারটা! একদল মালয়েশিয়ান মানুষ নিজের দেশের বিরুদ্ধে জাতিসংঘে অভিযোগ তোলার জন্যে ভিনদেশিদের কাছে দাবী জানাচ্ছে।

প্রেক্ষাপট ইত্যাদির ভিন্নতা আছে। তবু এই উদাহরণ কেন দিলাম? মানুষ যখন নিপীড়নে অস্থির হয়ে যায় তখন দিশেহারা হয়ে নানারকম কাজ করে। আপনি সংখ্যাগুরুর অবস্থান থেকে হয়তো বুঝতে পারবেন না কেন ওরা এইরকম ডেস্পারেট পদক্ষেপ নেয়। এজন্যে সংখ্যালঘু কমিউনিটির নেতাদেরকে গালি দেওয়ার আগে ওদের দুঃখটা বুঝার চেষ্টা করা জরুরী। কোণঠাসা মানুষ লাথিও মারে।

হিন্দু নেতাদের দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন করার আগে দেখেন আপনি ওর দুঃখটা দূর করার চেষ্টা করেছেন কিনা।

সম্প্রতি ভারতের রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম পিটিআই এর সূত্রে ভারতের অন্যতম শীর্ষ স্থানীয় সংবাদপত্র দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এই বিষয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশ  করে। সেখানে বলা হয়, বাংলাদেশের হিন্দুদের সুরক্ষার জন্য রানা দাশগুপ্ত ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

এই খবর বাংলাদেশের কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশের পর রানা দাশগুপ্তের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ এনেছেন অনেকে। তাকে বিচারের মুখোমুখি করারও দাবি ওঠেছে। তবে রানা-পিযুষ দু'জনেই বলেছেন, তারা এমন কোনো কথা বলেননি। ভারতীয় মিডিয়া তাদের বক্তব্য বিকৃত করেছে।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.