Sylhet Today 24 PRINT

ফের প্রশ্নবিদ্ধ গণমাধ্যমের ভূমিকা

বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ ইস্যু

একুশ তাপাদার  |  ২৬ জুন, ২০১৬

মাহমুদা খানম মিতু হত্যায় তাঁর স্বামী এসপি বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ ইস্যুতে কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কোনো সূত্র উল্লেখ না করেই বাবুল আক্তারকে স্ত্রী হত্যার সাথে সম্পৃক্ত ও পরকীয়ার কারণেই মিতুকে হত্যা করা হয় বলে শনিবার একাধিক মিডিয়া সংবাদ প্রকাশ করে।

পরবর্তীতে বাবুল আক্তার ডিবি কার্যালয় থেকে বেরিয়ে আসার পর অবশ্য এসব সংবাদ প্রত্যাহার করে নেয় তারা। তবে একটি আলোচিত ও স্পর্শকাতর ইস্যুতে নিশ্চিত না হয়ে এমন সংবাদ প্রকাশ করায় মিডিয়ার ভূমিকা ও নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে।

শনিবার দিনভর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচিত হয়েছে মিডিয়ার এসব 'গালগল্প'।

এরআগে সম্প্রতি এসএসসি উত্তীর্ণ কয়েকজন শিক্ষার্থীদের সাক্ষাতকারভিত্তিক একটি টেলিভিশনের প্রতিবেদন ব্যাপক সমালোচিত হয়।

শনিবার বাবুল আক্তার ও তাঁর স্ত্রী মিতু ইস্যুতে কয়েকটি মিডিয়ার প্রচারিত খবরকে কেন্দ্র করে সংবাদ মাধ্যমের বস্তুনিষ্ঠতা ও দায়িত্বশীলতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। প্রশ্ন তুলেছেন বিভিন্ন শ্রেণী পেশার  মানুষ। এমনকি অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকও দিনভর সমালোচনায় ছিলেন এসব সংবাদের।

শনিবার দুপুরে  কয়েকটি অনলাইন গণমাধ্যমে কোন সূত্রের নাম উল্লেখ না করে একটি বিস্ফোরক খবর বের হয়। "বাবুল আক্তারই তার স্ত্রী হত্যার ছক কষেছেন!"  এমন শিরোনামের খবর মুহূর্তেই মধ্যেই অনলাইনে ভাইরাল হয়ে পড়ে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু হয় তোলপাড়। বাবুল আক্তারকে 'হিরো' থেকে 'জিরো' বানান অনেকে। কেউ কেউ এর পেছনে খুঁজে পান ষড়যন্ত্র। তবে এসব আলোচনা-সমালোচনা চলাকালীন সময়েই বাসায় ফিরে আসেন এসপি বাবুল আক্তার। নিজেই সাংবাদিকদের বলেন, তিনি আটক বা গ্রেপ্তার হননি বরং স্ত্রী হত্যার রহস্য উদঘাটনে পুলিশকে সহায়তা করতে আলোচনা করেছেন।

বাবুল আক্তার ফিরে আসার সাথে সাথে বদলে যায় সংশ্লিষ্ট অনলাইনের প্রচার করা খবর। তবে খবর বদলে দেয়ার কোন ব্যাখ্যাও সংবাদমাধ্যমগুলো দেয়নি।

খ্যাতিমান টেলিভিশন সাংবাদিক জ.ই মামুন এ ব্যাপারে ফেসবুকে লেখেন, "আমাদের সাংবাদিকতা চমক সৃষ্টি এবং জনপ্রিয়তার বিচারে যতটা এগিয়ে; দায়িত্ববোধ, বস্তুনিষ্ঠটা এবং সততার বিচারে ততটাই পিছিয়ে।"

একাত্তর টিভির সংবাদ বিভাগের পরিচালক  সৈয়দ ইশতিয়াক রেজাও একই প্রশ্ন তোলে বলেন, "বাবুল আখতার বিষয়ে Kite flying journalism বা ঘুড়ি ওড়ানো সাংবাদিকতা দেখছি"।
 
সাপ্তাহিক সম্পাদক গোলাম মোর্তোজা এসব সংবাদের সমালোচনা করে ফেসবুকে লিখেছেন 'যাহা খাওয়াইবে তাহাই খাইবেন, এর নাম গল্পবাদিকতা, সাংবাদিকতা নয়। গল্পবাদিকতার হাত থেকে বাবুল আখতারকে রক্ষা করা দরকার, তার চেয়ে বেশি দরকার সাংবাদিকতা পেশাটাকে বাঁচানো।'

রিপোর্টিংয়ের ক্ষেত্রে করণীয় প্রসঙ্গে সাংবাদিক মাসকাওয়াথ আহসান সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, 'দায়িত্বশীল কেউ কথা বললে রিপোর্টার নিজের রক্ষাকবচ হিসেবে রেকর্ড করে নিতে পারে; চ্যালেঞ্জ হলে যাতে ব্যবহার করা যায়; আর দায়িত্বশীল কেউ কথা না বললে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষাতকার রেকর্ড করে রেখে প্রতিবেদন উপস্থাপন করতে পারে। যে তথ্যগুলো প্রতিবেদনে দেয়া হচ্ছে তার সঙ্গে সম্পর্কিত ব্যক্তিদের উদ্ধৃতি থাকলে; দায়িত্বশীলের উদ্ধৃতি না হলেও চলে। কারণ দায়িত্বশীলরা নিজেরাই যখন অপরাধী তখন তার উদ্ধৃতি পেলে ভালো; না পেলেও অসুবিধা নেই। খবর প্রকাশ তো বন্ধ থাকতে পারেনা দায়িত্বশীলের উদ্ধৃতির অপেক্ষায়। দায়িত্বশীলেরা তথ্য দিতে বাধ্য; কারণ অফিশিয়াল সিক্রেসি এ্যাক্ট নামের বৃটিশ আমলের আইন আর চালু নেই। প্রজাতন্ত্রে তথ্য জানার অধিকার মিডিয়া ও জনগণের প্রাধিকার।'

এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. কাবেরী গায়েন সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, প্রথমে আমি অবাক হচ্ছি, কোন কেস চলাকালে রিমান্ডে নেয়ার পরে অভিযুক্ত ব্যক্তি কী কথা বলেন তা কেবল দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি ছাড়া কেউ জানার কথা না। এটা গোপনীয় বিষয়। সেই বিষয়টি কীভাবে সাংবাদিকদের কাছে যায়? কাজেই বোঝা যাচ্ছে পুলিশের যেসব ব্যক্তি এই তথ্য পাচার করেন, তাদের ন্যুনতম প্রফেশনাল এথিক্স নেই। এইসব পুলিশ কর্মকর্তাকে জবাবদিহিতায় আনা দরকার।

“কাজেই পুলিশ এবং সাংবাদিক- দুই পক্ষই নীতিবহির্ভূত কাজ করছেন। দায়িত্বহীন কাজ করছেন। দুই পক্ষকেই জবাবদিহিতায় আনা দরকার প্রফেশনাল কারণেই।”

উল্লেখ্য, চট্টগ্রামের এসপি বাবুল আক্তারের পরিবারের বরাত দিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর বের হয়, শুক্রবার (২৪ জুন)  মধ্যরাতে শ্বশুরের বাসা থেকে গোয়েন্দা পুলিশ তাকে তোলে নিয়ে গেছে।

পুলিশের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কিছু জানানো না হলেও সকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল জানান, "কয়েকজন আসামীর মুখোমুখি করে বাবুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে"।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.