Sylhet Today 24 PRINT

তোমার মা কি কাঁথা বানায় তোমাদের দেশে?

সোশ্যাল মিডিয়া ডেস্ক |  ০৬ জুলাই, ২০১৬

গুলশান হামলার ঘটনায় নিজের কিছু বিচ্ছিন্ন ভাবনা ফেসবুকে তুলে ধরেছের লেখক ও অনলাইন এক্টিভিস্ট আরিফ জেবতিক। এতে তিনি লিখেছেন, 'কোথাও আদৌ কিছু বদলেছে কী এ রক্তস্রোতে? ঈদের বাজারের ঝলমলে বাতি কি নিভেছে এক সেকেন্ডের জন্য? একটা শোকসভায় কি মানুষের সংখ্যা পেরুল পঞ্চাশের উপরে?'

মঙ্গলবার ফেসবুকে আরিফ জেবতিক লিখেন-

আমি জানি এই মানসিক অবস্থায় আমার লেখালেখি করা উচিত নয়, কথা বলা উচিত নয়। আমি মাত্রা হারাই, কর্কশ হয়ে উঠি। নিজেকে সামাল দিতে, এই নিদারুন-করুণ ডিপ্রেশন থেকে নিজেকে বের করে আনতে আমার আরো কিছু সময় দেয়া প্রয়োজন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিজের সঙ্গে নিজে কথা বলা ছাড়া কীভাবেই বেঁচে থাকব?

#
আমার এক বন্ধু মফস্বলের কলেজে গণিত পড়ায়। আমাদের সকলের জন্য তাঁর বড্ড মায়া। প্রায়ই ফোন করে ঘ্যানঘ্যান করে, 'তোর এসব নিয়ে কথা বলার দরকার কী? খামোখা এসেব জড়াস কেন?'। সেদিন ফোন করেছে সকালে। আমি আধো ঘুম আধো জেগে ফোন ধরেছি। ধরেই নিয়েছি যে একই কথা বলবে। কিন্তু আজকে তাঁর কণ্ঠে অন্যসুর। 'আমি কী করব বল? আমার তো এসব ছাত্রদের নিয়েই কারবার। সারাদিন ঘরের দরজা খোলা, কত ছেলেমেয়ে প্রাইভেট পড়তে আসে আশেপাশের কলেজ থেকে। ব্যাগ নিয়ে ঢুকে যদি কুপিয়ে যায়, কীভাবে কী করব আমি?' -তাঁর কণ্ঠে রাজ্যের উদ্বেগ। ধাম করে মনে পড়ে যায়, আমার এই বন্ধুটি ধর্মে হিন্দু। প্রতি শুক্রবার জুমার আগে আমার দেশে এখন নিয়ম করে হিন্দু কোপানো শুরু হয়েছে, আমার বন্ধু এখন কোথা যাবে, কার কাছে যাবে?
#
আমি যখন প্রথম বাবা হলাম, আমার স্ত্রী যখন সাতমাসের অন্তস্বত্তা, সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়ে যায়। কী আনন্দের একেকটা দিন! রুটিন চেকাপে গিয়ে বাচ্চার হৃদপিণ্ডের শব্দ শোনতাম আলট্রা সাউন্ড মেশিনে। নিজেদের মতো ঘুরে বেড়াতাম। একদিন বউয়ের এক ছোটবোন কলিগ জরুরিভাবে খবর দিল, আমরা দুজন দৌঁড়ে গেলাম ওদের বাসায়। গিয়ে দেখি সারপ্রাইজড বেবি শাওয়ার! সবাই মিলে হইহই করছে।

আমার আম্মা রাজ্যের সব কাপড়চোপড় মেলে দিয়ে অনাগত নাতনির জন্য কাঁথা বানাচ্ছেন। সেই কাঁথাগুলোর এমন সব জটিল নকশি ডিজাইন, বাকি দুইমাসে কাঁথা সেলাই শেষ হবে বলে মনে হচ্ছিল না।

আহা, সেই ভিনদেশী তরুণি, তোমাকে যখন কুপিয়ে কুপিয়ে খুন করছিল সেই অমানুষগুলো, তখন তোমার পেটের সেই অনাগত সন্তানটিকে স্পর্শ করার আকাংখা নিয়ে বেঁচে থাকা তুমি কী ভাবছিলে? আজ কী ভাবছে তোমার প্রেমিক? তোমার মা কি কাঁথা বানায় তোমাদের দেশে?
#
কোথাও আদৌ কিছু বদলেছে কী এ রক্তস্রোতে? ঈদের বাজারের ঝলমলে বাতি কি নিভেছে এক সেকেন্ডের জন্য? একটা শোকসভায় কি মানুষের সংখ্যা পেরুল পঞ্চাশের উপরে? একটা রেস্তোরা কর্মীকে পিটিয়ে জঙ্গী বানিয়ে হাসপাতালে পাঠানোর আগে কি একটা পুলিশ এক মুহুর্তের বিরতি নিল? সারারাত আশা আর অপেক্ষায় বসে থাকা মানুষগুলো ভোর ৬টার আগে কি জেনেছিল একটু পরেই অপারেশন হবে, কিন্তু তাঁরা সেটি দেখার জন্য বেঁচে থাকবে না।

# এইসব বিচ্ছিন্ন চিন্তাগুলো কুরেকুরে খায়। তবে মৃত্যুর ভয় আর ভাবায় না।
একটা জম্বিদেশে হেঁটে চলে বেড়ানো আমি আরেক জম্বি।
যাদের সঙ্গে এই জনপদে বেঁচে থাকি তাঁদের সঙ্গে বেঁচে থাকায় না থাকায় কী আসে যায়।
আমার জীবনই বা কী, আর মৃত্যুই বা কী!

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.