Sylhet Today 24 PRINT

একজন মুসলমান হিসেবে কেনো আমি ঐ দানবদের দায় নেবো?

সোশ্যাল মিডিয়া ডেস্ক |  ০৭ জুলাই, ২০১৬

'জঙ্গিগোষ্ঠি ইসলামিক স্টেট (আইএস) রসুলের প্রচারিত ইসলাম না' বলে মন্তব্য করেছেন লেখক হাসান মোরশেদ। গুলশানে আইএস পরিচয়ে জঙ্গি হামলার প্রেক্ষাপটে ফেবুকে লেখা এক নোটে তিনি এমন মন্তব্য করেন। এদের প্রতিরোধের জন্য সরকারের পাশাপশি ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

হাসান মোরশেদ ফেসবুকে লিখেন-

চরম দুঃসময় মোকাবেলা করার প্রধান অস্ত্র হলো আশাবাদ। খড়কুটোর মতো এতোটুকু আশা আঁকড়ে ধরি। না, ঘাতকদের পরিবারগুলোর কেউই কোন রাখডাক করেননি। একজনের পিতা সারা পৃথিবীর কাছে ক্ষমা চেয়েছেন তার সন্তানের কৃতকর্মের জন্য। রাষ্ট্র কাঠামোর বাইরে আমাদের একটা সমাজ আছে, মুল্যবোধ আছে- ভরসা করতে চাই সে সমাজে ন্যুনতম শুভবোধটুকু এখনো অক্ষুন্ন আছে। খুনীদের প্রতি পক্ষপাতের মতো নির্লজ্জ হয়নি এখনো তাদের পরিবারগুলো- আমরা কেউ।

যে পিতা ক্ষমা চেয়েছেন তারা সেই প্রজন্ম যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছেন, দেখেছেন। আমাদের জাতিস্বত্বা পরিপূর্ণ হয়েছে, আমাদের রাষ্ট্র গড়ে উঠেছে যে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে তার ভিত্তিতে রয়েছে মানবিক আদর্শবাদ। সময় করতে পারলে কেউ দেখে নিতে পারেন ১০ এপ্রিল ১৯৭১ আমাদের নতুন রাষ্ট্রের ঘোষিত রূপরেখা- যেখানে মানুষে মানুষে সাম্য ও মানবিক মর্যাদার কথা আছে। শুধু গলাবাজি না, আমাদেরকে আসলেই ফিরে যেতে হবে সেই রূপরেখায়।

রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে যারা আছেন তাদেরকে 'অস্বীকারের লুকোচুরি' বন্ধ করতে হবে। হ্যাঁ, আমরা সংকটে পতিত, সংকট মোকাবেলা করতে হবে। আইসিস না জেএমবি সেই তথ্যে আমার কাজ নেই, আমি নিরাপত্তা চাই। আকাশবাতাসডন এর ফালতু গল্প শুনতে চাই না। জনগনের প্রতি সৎ থেকে সাহসের সাথে মোকাবেলা করতে হবে।

আমাদের যারা ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব আছেন, ব্যক্তি জীবনে যারা ধর্ম চর্চা করেন তাদেরকে ও 'অস্বীকারের লুকোচুরি' বাদ দিতে হবে। 'ইহা প্রকৃত ইসলাম নহে' এরকম আপ্ত বাক্য আর কতো আউড়ে যাবো আমরা। আজকে মসজিদে নববীতে বোমা হামলা হয়েছে, যে জায়গা মুসলমানদের দ্বিতীয় পবিত্রতম স্থান! একজন মুসলমান হিসেবে কেনো আমি ঐ দানবদের দায় নেবো, আমি নিজেও তো আক্রান্ত। কেনো বাংলাদেশে অন্য ধর্ম্বালম্বী আক্রান্ত হয়, কেনো বাগদাদে ঈদের বাজারে বোমা হামলা হয়, কেনো মসজিদে নববীতে বোমা- এগুলোর রাজনীতি ও ইতিহাস বুঝতে হবে। 'সব ইহুদী নাসারার ষড়যন্ত্র' বলে জপতে থাকলে না নিজে বাঁচা যাবে না ধর্ম রক্ষা হবে।

হ্যাঁ, কোরান শরীফে যুদ্ধের বর্ণনা আছে, বিধর্মীদের হত্যার নির্দেশ আছে কিন্তু এগুলো যে যুদ্ধকালীন সময়ের বর্ননা, রসুল ও তাঁর সাহাবীরা বারবার আক্রান্ত হবার পর নিজেদের রক্ষা করার যুদ্ধকালীন নির্দেশ- এগুলো সবসময়ের জন্য প্রযোজ্য না, সেটা কেনো একদল বর্বর চাপা দিয়ে রাখে? কেনো রসুলের বিদায় হজ্জ্বের ভাষনের নির্দেশ এরা পালন করে না, কেনো মদীনা সনদ কে গুরুত্ব দেয় না? রসুলের নেতৃত্বে মদীনায় মুসলমান, ইহুদী, খ্রীষ্টানরা সবাই শান্তিপূর্নভাবে বাস করেছেন- কেউ শান্তিচুক্তি ভংগ করলে তার ব্যক্তিগত শাস্তি হয়েছে। তিনি বলে গিয়েছেন কোন ব্যক্তির দায় তার গোত্রের উপর চাপানো যাবে না।

যদি আমেরিকা বা পাশ্চাত্য মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করেও তার দায় কোনভাবেই সকল পশ্চিমা নাগরিকের না। ইরাক যুদ্ধের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় প্রতিবাদ হয়েছে খোদ আমেরিকায়- এসব তথ্য চেপে রেখে কারা নিজেদের খুনী মানসিকতার সংগী করছে আমাদের? ১৪০০ বছর আগে গোত্রে গোত্রে যুদ্ধ হতো, আজকের দিনে রাষ্ট্রের সকল নাগরিক রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে না।

আইসিস ও সৌদী রাজতন্ত্র রসুলের প্রচারিত ইসলাম না, তাদের ফিলোসফার আব্দুল ওয়াহাবের ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে চায় যেখানে কোন প্রাণ নেই- শুধু খুন আর নিষ্ঠুরতা। তাদের কাছে রসুলের চেয়ে ওয়াহাব বড় বলেই মদীনা সনদ ও বিদায় হজ্জ্বের মানবিক আহ্বানগুলোকে তারা বাস্তবায়িত করে না। সৌদিতে গেলে দেখা যায় সেখানে রসুল ও তার পরিবার এবং সাহাবীদের কোন উল্লেখযোগ্য স্মৃতি তার‍্য রাখেনি সব ধ্বংস করে দিয়েছে। রসুলের স্মৃতি বিজড়িত মক্কা নগরীকে ভেংগে গুঁড়িয়ে দিয়ে শপিং মল বানিয়েছে। ওয়াহাবীজম এ কবর জিয়ারত নিষিদ্ধ এমনকি নবীজির কবর ও। রাষ্ট্র ক্ষমতায় আছে বলে সৌদি রাজবংশ সরাসরি অতো কঠোর হতে পারে না, আইসিস এর সাথে তাদের দ্বন্ধ এখানেই। দুপক্ষই ওয়াহাবের আদর্শের সন্তান কিন্তু আইসিস, সউদদের সহী মনে করে না- এরা নবীজির রওজাও গুঁড়িয়ে দিতে চায়।

মুসলমান হিসেবে এইসব তথ্য জানা জরুরী আমাদের জন্য। ২০ জন মানুষ, গর্ভবতী নারীকে জবাই করেছে যে পশুরা- বাগদাদে ঈদের বাজারে তারাই বোমা হামলা করেছে, তারাই বোমা মেরেছে মসজিদে নববীতে। শান্তির ধর্মের অনুসারী বলে যদি নিজেকে সত্যই দাবী করি তাহলে নবীজির মদীনা সনদ আর বিদায় হজ্জ্বের ভাষনকে গুরুত্ব দেবেন নাকি 'ইহুদী নাসারাদের ষড়যন্ত্র' জপে জপে খুনীদের- নবীজি নয় ওয়াহাবের অনুসারীদের পক্ষ নেবেন সেই সিদ্ধান্ত কিন্তু আপনার।

মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ হারবে না, নবীজির মানবিক দৃষ্টান্তগুলোও ফুরোবে না- কিন্তু অস্বীকৃতি আর অজ্ঞতার কারনে আপনি হেরে যাচ্ছেন কিনা সেটা বুঝে নিতে হবে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রত্যেক মুসলমানকে এবং রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে যারা আছেন তাদের সকলকে।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.