Sylhet Today 24 PRINT

চারপাশে অথৈ পানি; ঘরের চালার ওপরে ক্ষুধার্ত পরিবার

সোশ্যাল মিডিয়া ডেস্ক |  ০৩ আগস্ট, ২০১৬

দেশের অনেক জায়গা বন্যায় প্লাবিত। এমন অবস্থায় ত্রাণ বিতরণ, ফটোসেশন, দাতা-নেতা-বন্যার্ত মানুষের একই দৃশ্য; অনেকটা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা রীতি নিয়ে ফেসবুকে লিখেছেন সাহিত্যিক ও সাংবাদিক মাসকাওয়াথ আহসান।

মাসকাওয়াথ আহসান লিখেন,  ঘুরে ফিরে একই ছবি স্মৃতিতে হানা দেয়; চারপাশে থৈ থৈ পানি; ঘরের চালার ওপরে শুকনো মুখে একটি পরিবার; যারা পানি সাঁতরে ত্রাণের পোটলা নিতে এসেছিলো। তখন তারা হেসেছিলো। ভাবা যায় গলা পর্যন্ত পানিতে দাঁড়িয়ে একজন বানভাসি মানুষ হাসছে; একটু মুড়ি-গুড় পেয়ে!

তিনি লিখেন,

চারপাশে অথৈ পানি; ঘরের চালার ওপরে ক্ষুধার্ত পরিবার
বুঝতে শেখার পর থেকে বন্যায় ডুবে যাওয়া জনপদ দেখছি। নদী ভাঙ্গনের মানুষ দেখছি। এক একটা বন্যা বেশ কিছু সম্পন্ন গৃহস্থের ভূমি খেয়ে নিচ্ছে; নিঃস্ব কৃষককে অনিশ্চয়তার ভেলায় ভেসে ঢাকা মেট্রোপলিটনে রিক্সা চালাতে দেখছি। একদা সুখী পায়ে আলতা পরা কৃষকবধু মানুষের বাসায় ছুটা "বুয়া"-র কাজ করছে। তাকে বন্যার ত্রাণ সামগ্রী চুরি করা লোকজনের "বেগম" সাহেবার ধমক খেতে দেখছি। বন্যায় ভেসে আসা নতুন রিক্সাচালকটিকে কারণ অকারণে পুলিশের লাঠির বাড়ি খেতে দেখছি।

টেলিভিশনে সেই একই বন্যার কাভারেজ। একই ফুটেজে চালিয়ে দেয়া যায় দশকের পর দশক। কারণ বানভাসি মানুষ মানেই চারপাশে অথৈ পানি; ঘরের চালার ওপরে ক্ষুধার্ত পরিবার; শুকনো মুখ; অনিশ্চয়তা; ভেসে যাওয়া অতীতের আহাজারি।

ত্রাণ বিতরণের দৃশ্যগুলোও একই; হাতারা নেতার হাতে ত্রাণের ছোট্ট একটা প্যাকেট এগিয়ে দিচ্ছে; নেতা দুখী দুখী চেহারা করে ত্রাণ বিতরণ করছে। পানির মধ্যে সাঁতার কেটে মানুষ আসে; কিছুক্ষণের জন্য আনন্দে ভাসে। টেলিভিশনের কাভারেজের জন্য যথেষ্ট ফুটেজ জমা হয়ে গেলে নেতা বিদায় নেয়।

সাংবাদিক ফিরে ফিরে এসে কাঁপা কাঁপা গলায় বন্যার্তদের বেদনার টুকরো গল্প ফুটেজের মন্তাজের সঙ্গে মেলায়; ত্রাণ বিতরণের দৃশ্যে যে নেতার চেহারায় কষ্টের অভিব্যক্তি বেশী ভালো হয়; তার জন্য থাকে প্রধানমন্ত্রীর অস্কার পুরস্কার।

তারপর সবাই ভুলে যায় ত্রাণ বিতরণের সময় ফেলে আসা বন্যার্তদের। নদী ভাঙ্গনের মানুষেরা উদ্বাস্তু হয়; প্রতিবছর ঠিকানা হারায় অসংখ্য মানুষ। সে ঠিকানা তারা আর খুঁজে পায়না। তারা বস্তিবাসী হয়। আমরা বিরক্ত হই; এই বস্তিগুলো ঢাকার সৌন্দর্যহানি করেছে। বন্যায় ভেসে আসা অনিশ্চয়তার লখিন্দরের ভেলাটি আমৃত্যু ভাসতে থাকে। ঘুরে ফিরে একই ছবি স্মৃতিতে হানা দেয়; চারপাশে থৈ থৈ পানি; ঘরের চালার ওপরে শুকনো মুখে একটি পরিবার; যারা পানি সাঁতরে ত্রাণের পোটলা নিতে এসেছিলো। তখন তারা হেসেছিলো। ভাবা যায় গলা পর্যন্ত পানিতে দাঁড়িয়ে একজন বানভাসি মানুষ হাসছে; একটু মুড়ি-গুড় পেয়ে!

জিডিপি গ্রোথ বাড়ে; ব্যাংক রিসার্ভ রেকর্ড মাত্রা স্পর্শ করে; মুখ ঢেকে যায় উন্নয়নের বিজ্ঞাপনে। কিন্তু বন্যার ঐ দৃশ্যগুলো আর সরে না।

বানভাসি কোন মেয়ে সেলাই কন্যা হয়ে রানাপ্লাজায় চাপা পড়ে মরে যাবার সময় নূপুর পরা পা দেখিয়ে যায় আমাদের এইসব উন্নয়ন থিয়েটারগুলোকে। নূপুর যেন এক ভুল সমাজ আর রাষ্ট্রব্যবস্থার শেকল। আর অপরিবর্তনীয় নিয়তির কৃষ্ণগহ্বরে উপায়হীন প্রান্তজনের বসবাস।

চারপাশে থৈ থৈ পানি; ঘরের চালার ওপরে শুকনো মুখে ত্রাণের অপেক্ষায় একটি পরিবার।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.