Sylhet Today 24 PRINT

রম্য : বাংলা একাডেমিতে বব ডিলান ফেলোশিপ

মাসকাওয়াথ আহসান |  ২৪ অক্টোবর, ২০১৬

অনেক চেষ্টা করেও নোবেল কমিটির সদস্যরা সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী বব ডিলানের সঙ্গে যোগাযোগে ব্যর্থ হন। ববের ম্যানেজার জানায়, উনি সুরের স্বর্গের প্রকোষ্ঠে ঢুকেছেন। অনেকবার কড়া নেড়েও লাভ হয়নি। উনি কিছুতেই দরজা খুলছেন না।

নোবেল কমিটি খুবই বিব্রত বোধ করে। নোবেল সাহিত্য পুরস্কারের একজন জুরি আক্ষেপ করে বলেন, কয়েক বছর ধরে এতোসব দুর্বোধ্য ট্র্যাশ লেখা জমা পড়ছে; তাই আমরা ভাবলাম বব ডিলানের গীতিকবিতাগুলোকে পুরস্কৃত করলে; তরুণ লেখকেরা বুঝবে সৃজনশীলতা কাঠিন্যতে থাকে না; থাকে সহজাত প্রকাশে; যেসব শব্দমালা বুকের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে অনায়াসে; অথচ তা কী অবলীলায় মানুষের মুক্তির কথা বলে। অথচ উনি দরজাই খুলছেন না।

ববের ম্যানেজার অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে ববের সুরের স্বর্গ প্রকোষ্ঠে প্রবেশ করে। আকুতি জানায়, কিছু একটা বলুন; হ্যাঁ কিংবা না।

বব দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, আমি এ পুরস্কারের যোগ্য নই।

--কে বললো আপনাকে!

--আমি বসে বসে ফেসবুকে দেখলাম। পৃথিবীর অন্য সব দেশের মানুষেরা মেনে নিলেও বাংলাদেশের অনেক লেখক আমার এই পুরস্কার প্রাপ্তি মেনে নেবে না।

--ঠিকই মেনে নেবে। আপনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য গান গেয়েছেন। ওখানকার প্রধানমন্ত্রীকে বললেই ধমক দিয়ে এদের থামিয়ে দিতে পারবেন। এরা দেখবেন তখন সুড়সুড় করে আপনার প্রশস্তি গাইছে।

--না না; ওভাবে হয়না; হৃদয় জিততে না পারলে শিল্পী শান্তি পায়না।

--তাহলে কী করা যায় বব!

--পুরস্কারের অর্থ বাংলাদেশের সাহিত্য একাডেমিতে উপহার হিসেবে পাঠিয়ে দিতে বলো। বিশিষ্ট লেখকদের মাঝে বিতরণ করা হোক।

--আপনার যারা সমালোচনা করলো; তাদেরকে উপহার দিতে চাইছেন!

--একাডেমি মুচলেকা নিয়ে নেবে এই বিশিষ্ট লেখকেরা আর লেখালেখির ভারী বর্ষণ ঘটাবে না। এর পরের বার যিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পাবেন; উনি বেঁচে যাবেন।

ববের ম্যানেজার নোবেল কমিটিকে ববের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেয়। নোবেল কমিটি ভাবে, বাংলাদেশ তো এখন স্বর্ণখনি; উন্নয়নের চূড়ান্ত শিখরে; ওখানে তো আর টাকা-পয়সা দরকার নেই। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য পদ প্রদান ছাড়া বাংলাদেশকে আর ছোট-খাট উপহার দেয়ার কী প্রয়োজন আছে।

তবুও ববের ইচ্ছা অনুসারে নোবেল কমিটির প্রদেয় অর্থ গ্রহণে মন্ত্রণালয়ের ছয়জন কর্মকর্তা বাংলাদেশ থেকে স্টকহোমে যান। অবশ্য তাদের যাতায়াত ও অন্যান্য খরচ নোবেল কমিটিকে বহন করতে হয়।

এরপর বাংলা একাডেমির কাঁধে দায়িত্ব পড়ে বিশিষ্ট লেখক খুঁজে খুঁজে ববের নোবেল পুরস্কারের টাকা বিতরণের ও মুচলেকা নেবার যে তারা লেখালেখিতে ক্ষ্যামা দেবে। অনেক তো হলো।

বাংলা একাডেমির একজন কর্মকর্তা বলেন, বিশিষ্ট লেখকেরা তো প্রায় সবাই একে একে চলে যাচ্ছেন। এখন বিশিষ্ট লেখক কোথায় পাই!

আরেক কর্মকর্তা একটা লেখক তালিকা নিয়ে বসে বলেন, সত্যিই তাই, স্বর্ণযুগের অবসান ঘটেছে। এখন ইমিটেশান যুগ চলছে।

এমন সময় একটা ফোন আসে, হ্যালো ভাই, টাকা বিতরণ করে আর লেখালেখি না করার মুচলেকা নেবার সময় শুধু যেন ক্ষমতাসীন দলের তৈলকার লেখকদের বিবেচনা না করেন। সরকারের প্রতিপক্ষের তৈলকার লেখকদের নামও রাখবেন। নইলে বিপদ। অন্তত: এই ব্যাপারটা নির্দলীয় হোক।

বাংলা একাডেমির এক কর্মকর্তা বলেন, এবার সত্যিই একটা পরিচ্ছন্ন বইমেলা করা যাবে। এতো গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচনের মড়কও থাকবে না; পাঠকেরও সুবিধা হবে বেছে বই কিনতে।

ফেসবুকে যারা বব ডিলানের সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তি নোবেল কমিটির বিচিত্র পরিহাস বলে সমালোচনার নরকের দরজার মাথা ঠুকেছে তাদের তালিকা প্রণীত হয়। সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে যারা লেখালেখি করে বাংলা সাহিত্যের পৌনে বারোটা বাজিয়ে ফেলেছে তাদের নামও ঢুকিয়ে দেয়া হয়। এর নাম দেয়া হয়, বব ডিলানের নোবেল সাহিত্য পুরস্কারের অর্থায়নে “লেখক সোনালী করমর্দন ও বাংলা সাহিত্য সুরক্ষা প্রকল্প।“

টাকার অংকটা বড়; তাছাড়া লেখালেখির গোল্ডেন হ্যান্ডশেক মুচলেকায় “নোবেল” শব্দটি থাকছে। ফলে বেশীরভাগ লেখকই রাজি হয়ে যায়। ব্যাপারটাকে বন্ধুমহলে তারা বব ডিলান ফেলোশিপ বলে চালিয়ে দেয়। কেউ কেউ একটু অভিমানী হয়, আর লেখালেখি করবো না; তাই কী হয়!

অভিমানীদের স্ত্রীরা কষে ধমক দেয়, চুপ করে গিয়ে মুচলেকা দিয়ে টাকা নিয়া আসবা। অনেক হইছে আজাইরা লেখালেখি।

রাতারাতি ঢাকা শহরে গড়ে ওঠে বেশ কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। বব ক্যাফে, জাস্ট লাইক আ ওম্যান বুটিক হাউজ, ডিলান কাবাব, স্বর্গের দরজায় কড়া নাড়া হার্ডওয়্যার, হেভি রেইন স্পা এন্ড পার্লার, দুরন্ত ডিলান সিটিং সার্ভিস বাস, রোলিং স্টোন মোজাইকস, ব্লোয়িং ইন দ্য উইন্ড সীসা বার, ফর এভার ইয়াং হারবাল, আন্ডার দ্য রেড স্কাই সিনে কমপ্লেক্স, টাইম আউট অফ মাইন্ড হলিডে ইন ইত্যাদি।

প্রত্যেকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের লোগোর মাঝে নোবেল পদকের লোগো এমব্যুশ করা।

  • মাসকাওয়াথ আহসান : সাহিত্যিক, সাংবাদিক।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.