Sylhet Today 24 PRINT

কতটা পিছিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা এতটা এগিয়ে গেছি!

আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল |  ১২ নভেম্বর, ২০১৬

আমরা কারা? আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠের দাবিদাররা প্রকৃতপক্ষে রিফুজি। আমাদের পূর্বপুরুষেরা জীবিকার সন্ধানে এই সোনার বঙ্গদেশে আশ্রয় নিয়েছিল। এ অঞ্চলের প্রকৃত অধিবাসী আদিবাসীরা। জনগোষ্ঠীর অপর অংশটি ছিল হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। তারা আমাদের মতো বেদুইন-রিফুজিদের উদারভাবে গ্রহণ করেছে। চাইলে হয়তো আমাদের তাড়িয়ে দিতে পারতো।

আমাদের বড় অংশ ধর্মান্তরিত মুসলিম। কেউ চাকরির জন্য, কেউ বর্ণ-বৈষম্যের কারণে, কেউ কর মওকুফের সুবিধা পেতে, কেউ বিবাহসূত্রে, কেউ শাসকদের সাথে তাল মেলাতে ইসলাম গ্রহণ করেছে। [সম্রাট আকবরকে সেজদা করা দ্বীন-এ-এলাহী ধর্মাবলম্বীদের অস্তিত্ব এখনও ভারতে আছে।]

ধর্মীয় লেবাস পরিবর্তন হলেও পূর্বসূরিদের প্রথা কিন্তু আমরা ছাড়িনি। মন্দিরের পরিবর্তে মানতের স্থান হয়েছে মাজার, পণ্ডিত-পুরোহিতের স্থান নিয়েছে পীরেরা, ধুপ হয়েছে আগরবাতি, ধ্যান হয়েছে মোরাকাবা, প্রসাদ হয়েছে তবারুক, শ্রাদ্ধ হয়েছে কুলখানি-চল্লিশা ... এমন অনেক প্রথাই আমরা গ্রহণ করেছি যার সাথে ইসলামের সম্পর্ক নেই।

সাধারণ শিক্ষার কথা যদি বলি - এ অঞ্চলের মুসলিমরা শিক্ষিত হয়েছে হিন্দু শিক্ষকদের কাছ থেকে।

ভারত ভাগের সময় এদেশে মুসলিম ও হিন্দুদের জনসংখ্যার অনুপাত ছিল ৬০:৪০। নোয়াখালীতে দাঙ্গার আগে ভ্রাতৃত্ব ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কে ধর্ম কোনও প্রভাব ফেলেনি। এমনকি ১৯৭৫ পর্যন্ত পাকি-শাসক ও তাদের মদদপুষ্ট সুশীলদের সাম্প্রদায়িক ইন্ধন সত্ত্বেও বৈরি সম্পর্ক সৃষ্টি হয়নি বা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

৭৫ পরবর্তীতে প্রথম শুরু হয় আদিবাসীদের এলাকা দখল। পাকিস্তানী শাসকেরা যে অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাঙালিকে সাম্প্রদায়িক বানাতে পারেনি, সেই বাঙালির মাঝে পাকিস্তানের অনুসারীরা সফলভাবে সাম্প্রদায়িকতার বীজ বপন করতে পেরেছে এবং মাত্র ৪০ বছরে তা ফলবান বৃক্ষে পরিণত হয়েছে।

যাদের লোকালয়ে রিফুজি হিসেবে এসেছি, সেই তাদের প্রতি সম্মান দূরে থাক, অমানুষ ও অকৃতজ্ঞের মতো আদিবাসীদের আশ্রয়টুকু কেড়ে নিতে দ্বিধা করছি না! হিন্দু-বৌদ্ধদের প্রথা গ্রহণ করেছি, গ্রহণ করিনি ভ্রাতৃত্ব! নিজেকে ধর্মপ্রাণ প্রমাণ করতে কি অবলীলায় মনুষ্যত্ব ত্যাগ করছি!

আমরা কি সেই বাঙালি কোনও অপরাজনীতি যাদের বোধ ও বিবেক কেড়ে নিতে পারেনি?

আর কত বার প্রমাণ করবো - আমরা অকৃতজ্ঞ, আমরা বর্বর, আমরা পাষণ্ড! কত বার বিশ্বকে বলবো - আমাদের মাঝে মানবিক গুণাবলী বিলুপ্ত হচ্ছে! আমাদের সন্তানরা বিশ্বে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে পরিচয় দিতে লজ্জা পাবে না তো!

ধর্ম যদি মানুষের জন্য হয়, যেখানে মনুষ্যত্ব থাকে না সেখানে ধর্ম থাকে কি করে?

কতটা পিছিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা এতটা এগিয়ে গেছি!

  • আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল : সাবেক ছাত্রনেতা ও তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.