Sylhet Today 24 PRINT

সকলেরই অশ্রুসজল চোখ, তাই প্রধানমন্ত্রীরও জানা হয় না কিছু!

মাসকাওয়াথ আহসান |  ২৯ নভেম্বর, ২০১৬

প্রত্যাশা করা গিয়েছিলো ফুলবাড়িয়া কলেজের শিক্ষক আজাদ হত্যাকাণ্ড নিয়ে যথাযথ প্রতিবাদ হবে। কাগজে-কলমে যেহেতু শিক্ষার হার বেড়েছে; বেশ কিছু লোক শিক্ষিত লোক সেজে ঘোরাফেরা করে; চশমাও পরে; কাজেই একটি স-মেরুদণ্ড নাগরিক সমাজের উত্থান প্রত্যাশা করা গিয়েছিলো।

কিন্তু সে প্রত্যাশা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। শিক্ষক আজাদ হত্যায় শিক্ষক সমাজের কোন সামষ্টিক কণ্ঠস্বর খুঁজে পাওয়া গেলো না। অর্থাৎ একজন শিক্ষক খুন হয়ে গেলে সমাজের কিছু এসে যায় না।

আপাত: শিক্ষিত সমাজটির বেশী বাদ-প্রতিবাদ লক্ষ্য করা যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমানের যান্ত্রিক ত্রুটি ও এ সংক্রান্ত ষড়যন্ত্রসূত্র আলোচনা আর কেঁদে আকুল হওয়ার মাঝে। আমি খুবই নিশ্চিত প্রধানমন্ত্রীর সন্তানদ্বয়ও এতো অশ্রুপাত করেনি যত অশ্রুপাত করেছে কথিত শিক্ষিত সমাজটি। যারা বাংলাদেশ বিমানে ভ্রমণ করেছেন নিয়মিত; তাদের জানা রয়েছে; বিমানের সার্ভিস সম্পর্কে। প্রধানমন্ত্রী নিজেও সে সম্পর্কে অবগত। রাষ্ট্রীয় কাজের প্রতি পদে পদে দুর্নীতি হলে; রাষ্ট্র-কাঠামোর নানা জায়গায় যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা যায়; নাট-বল্টু খোলা থাকে। তারই একটি প্রতীকী চিত্রকল্প প্রধানমন্ত্রী প্রত্যক্ষ করলেন এই বিমানযাত্রায়।

দেশবাসী সে সময় দেখলো ফুলবাড়িয়ায় রাষ্ট্রযন্ত্রের নাট-বল্টু খুলে নিলো পুলিশ একজন শিক্ষক ও একজন পথচারী হত্যা করে। বিভিন্ন সরকারের সময় খুনে বাহিনী হিসেবে পুলিশকে লেলিয়ে দেয়া হয়; মানবতাবিরোধী অপরাধ করে পুলিশ ক্রমশ: ঘৃণ্য হয়ে ওঠে; আলোর অলক্ষ্যে থেকে যায় এ হত্যার হুকুমদাতারা। আর এইসব হত্যাকাণ্ডের হুকুমদাতারা নিঃসন্দেহে রাষ্ট্রের ক্ষমতা-কাঠামো থেকে আসে; তাই ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রীকেই ইতিহাস দায়ী করে এরকম মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য। প্রধানমন্ত্রী সে সম্পর্কে অবগত।

এর মাঝে আমরা দেখলাম, রাষ্ট্রের নাট-বল্টু খুলে নিতে এক মেয়র তার দপ্তরটিকে যেন দায়েশের কাজী অফিস বানিয়েছে, যেখানে এক অসহায় পরিবারকে হামলা করে এক তরুণীকে ধরে নিয়ে গিয়ে জোর করে এক দলীয় কর্মীর সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দেয়া হয়েছে। এরা অবশ্য এখনো প্রকাশ্যে দায়েশ কর্মী নয়; ক্ষমতাসীন সরকারের লোক। প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ খবরটি পৌঁছেছে কীনা তা অজানা।

রাষ্ট্রের আরো নাট-বল্টু খুলে যেতে দেখলাম, মেয়েকে উত্যক্ত করার প্রতিবাদ করায় উত্যক্তকারীরা মেয়েটির বাবার দুই পা কেটে দিলো। রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের নাট-বল্টু খুলে নেবার দৃশ্য আমরা প্রায়শই দেখি। এবার দেখলাম দুটি স্বর্ণের দোকান দেখিয়ে দুর্নীতির সুযোগে বিপুল পরিমাণ ঋণ নিয়ে এক টোকাই "চৌধুরী" নাম নিয়েছে। প্রতিটি ভিক্ষুকপুত্রেরই চৌধুরী হওয়াটাই জীবনের একমাত্র স্বপ্ন । হতে পারলে চৌধুরী হয়ে চুলে জেল দিয়ে হাল-ফ্যাশানের পোশাক পরে ঘুরে; না হতে পারলে চৌধুরীদের গালি দেয়।

মনোজগতে চৌধুরী হবার আকাঙ্ক্ষায় সমাজে প্রতিবাদের ঋজু মনোভঙ্গি লোপ পায়। সবাই ভয়ে ভয়ে থাকে; রাষ্ট্রের সমালোচনা করলে যদি চৌধুরী হতে না পারি। সুতরাং যা হচ্ছে হোক।শিক্ষক হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে কে কবে চৌধুরী হয়েছে। বরং প্রধানমন্ত্রীর প্রাণনাশের অপচেষ্টার বিরুদ্ধে আন্তরিক আস্ফালন করলে চৌধুরী হবার সম্ভাবনাটা অন্তত: বেঁচে থাকে।

এসব কারণে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে রাষ্ট্রের ভূমি বাস্তবতা জানা কঠিন হয়ে পড়ে। সবাই গিয়েই অশ্রুসজল চোখে উনার বিমানটির নাট-বল্টু খুলে নেয়ার সমালোচনা করলে; প্রধানমন্ত্রীর আর জানা হয় না; রাষ্ট্রের নাট-বল্টু কোথায় কীভাবে খোলা হয়েছে!

          • মাসকাওয়াথ আহসান : সাহিত্যিক, সাংবাদিক।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.