Sylhet Today 24 PRINT

সরকার চাইলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব

দেব প্রসাদ দেবু |  ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৬

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে একটা প্রশান্তি এবং আত্মতৃপ্তি দৃশ্যমান সরকার দলীয়দের মধ্যে। সেটা হবারই কথা। কেননা প্রথমত নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে, দ্বিতীয়ত নৌকা জয়ী হয়েছে, তৃতীয়ত 'বাঘ-মহিষে' এক ঘাটে জল খেয়েছে।

আমার ব্যক্তিগত অনুভূতি হচ্ছে আইভি বিজয়ী হওয়ায় আমি আপাত খুশি। কারণ 'নেত্রী' বলে দেয়ার পরও আইভি গা ভাসিয়ে 'বড় ভাইয়ের' প্রতি তেলতেলে বিহেভ করেনি, তিনি যেমন মানুষ, তেমন আচরণই করেছেন। এর আগে আমরা দেখেছি আ. লীগের প্রার্থীর বিপরীতে দাঁড়িয়েও উনি বিজয়ি হয়েছিলেন। ফলে ব্যক্তি জনপ্রিয়তা বা ইমেজ ওনার যথেষ্ট শক্তিশালী। নগর উন্নয়নে কাজও করেছেন বেশ; অন্তত তাই শুনেছি বা জানি।

বিএনপি এই নির্বাচনে অংশ নিয়েছে ইতিবাচক ভাবে এবং প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত ইতিবাচক ভাবেই সমস্ত কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। আমি ভুল হতে পারি, কিন্তু কেন যেনো মনে হয় বিএনপি হয়তো ভেবেছিলো শেষপর্যন্ত শামীম ওসমান-আইভি একঘাটে জল খাবে না। সেই লক্ষণ আমরা শুরুতে দেখেছিও। তৃণমূল থেকে পাঠানো প্রার্থী তালিকায় আইভির নাম ছিলো না মেয়র হিসেবে। কিন্তু সভানেত্রী বা দলের নীতিনির্ধারণী ফোরাম সেটি উলটে আইভিকেই মনোনয়ন দিয়েছে এবং তৃণমূল সমর্থিত সম্ভাব্য প্রার্থীকে জেলা পরিষদে 'জায়গা করে দিয়ে' পুরস্কৃত করেছে। সভানেত্রীর কঠোর অবস্থানের ফলে কোন বিদ্রোহী প্রার্থীর আবির্ভাব ঘটেনি কিংবা রিভার্স গেম খেলার চেষ্টাও বড় ভাই করেনি। কিন্তু দেশের সব সংসদীয় আসনে এমনটা হবে না। সভানেত্রীও এতোটা রিজিট থাকবেন না, বিদ্রোহীরাও পুরস্কৃত হয়ে চেপে যাবেন না। ফলে জাতীয় নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ মডেল কাজ করবে না। কেননা আওয়ামী লীগ এতো বড় এবং প্রাচীন রাজনৈতিক দল হলেও ব্যক্তি ইমেজগত দিক থেকে ৩০০ আইভি খুঁজে পাওয়া যাবে না, এমনকি ১৫১ জনও না। তাই বদি, জয়নাল হাজারী, কিংবা রাজাকার সংশ্লিষ্টরাও মনোনয়ন পাবেন।

নারায়ণগঞ্জ দেখে আ. লীগ সমর্থকরা তৃপ্তির ঢেকুর তুলছেন এই ভেবে যে- চারিদিকে যে শুনি আ. লীগের জনপ্রিয়তায় ধস নেমেছে, সেটা প্রোপাগান্ডা 'প্রমাণিত' হয়েছে। তাই যদি ভাবেন তবে 'যুদ্ধাপরাধীর দোসর বিএনপি'র অস্তিত্ব দেশে থাকবে না'- স্বপ্নেরও করুণ বৈপরীত্য দৃশ্যমান নারায়ণগঞ্জতেই। আইভির মতো জনপ্রিয় এবং নেত্রীর নির্দেশে অফ যাওয়া বড় ভাইকে পাশে পাবার পরেও ধানের শীষের ভোট নেহাত কম নয়। ফলে দিবা-স্বপ্ন না দেখাই ভালো।

আবার মন থেকে এই দিবা স্বপ্ন দেখতে পারে না বলেই কিন্তু নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন, নির্বাচনকালীন সরকার এসব নিয়ে অস্বস্তি কাজ করে ক্ষমতাসীনদের মধ্যে। হয় মেন্যুপুলেশন। নিয়োগ পান আস্থাভাজন ব্যক্তি।

তবে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন এবং অন্যান্য সমসাময়িক নির্বাচনগুলো এটা প্রমাণ করেছে যে, সরকার চাইলে ঠুঠো জগন্নাথ সিইসি'র অধীনেও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব, আর না চাইলে স্বয়ং ফেরেশতাও বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করতে পারবেন না। কথা হচ্ছে সরকারের 'চাওয়া' নামক বিড়ালটার গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে?

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.