Sylhet Today 24 PRINT

মুসা ইব্রাহীমের ‘এভারেস্ট ও বাংলা চ্যানেল: কেনো আমি চুপ থাকি’ প্রসঙ্গে

মীর শামছুল আলম বাবু |  ০৩ জুলাই, ২০১৭

মুসা’র “এভারেস্ট ও বাংলা চ্যানেল: কেনো আমি ‘চুপ’ থাকি?” প্রসঙ্গে আমার কথা –

মুসা এখন আমার ফেসবুকের ফ্রেন্ড লিস্টে নেই, তাই ওর লেখা সরাসরি আমি দেখিনি, ভায়া হয়ে দেখলাম। লেখায় অনেককে নিয়ে অনেক কথা আছে। আমি আমাদের পর্বতারোহণ শুরুর সময় থেকে সমস্ত কিছু সংরক্ষণ করেছি, তাই সব কথার সঠিক জবাব দালিলিক প্রমাণসহ আমার কাছে আছে, তবুও অন্য সবার জবাব দেওয়া আমার উচিৎ না।

অনেকেই আমাকে মুসা’র ‘এভারেস্ট জয়’ নিয়ে প্রশ্ন করেন, আমি উত্তর এরকম দেই –

“আপনারা জানতে চান মুসা ‘এমএ পাশ’ (‘এভারেস্ট জয়’) করেছে কিনা? আমি যেহেতু নিজে ওর সাথে বা আলাদা করে ‘এমএ পরীক্ষা’ দেইনি, তাই এটা নিয়ে জানলেও বলতে চাই না। কিন্তু আমি ওর সাথে 'পি.এস.সি', 'জে.এস.সি', 'এস.এস.সি' – ইত্যাদি পরীক্ষা দিয়েছি – সেই অভিজ্ঞতা থেকে শুধু এতটুকু বলতে পারি মুসা সে সব পরীক্ষা নকল করে পাশ করেছে।“

সব নিয়ে বলতে গেলে অনেক লিখতে হবে, তাই শুধুমাত্র আমার নাম উল্লেখ করে যে কথাগুলো মুসা বলেছেন বা আমি যে বিষয়গুলোর সাথে সংশ্লিষ্ট সেগুলোর কয়েকটা নিয়ে লিখলাম -

১) ‘বিএমটিসি’ থেকে আমার বের হয়ে আসার কারণ মুসা একবার লিখলেন – ‘সজল জার্মানি থেকে এসেই বের করে দিলেন’ - আবার লিখলেন – ‘এ সময় ইনাম আল হক ফ্রে পর্বতের সঙ্গী হিসাবে হয় বাবু, নয়তো সজলকে বেছে নেয়ার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। পরিস্থিতি বিবেচনায় সজলকে এই পর্বতাভিযানের সঙ্গী নির্বাচন করেছিলাম।‘ কোনটা সত্য? যে কোন একটা হলেও অন্যটা মিথ্যা নয় কি? আসল কারণ এর কোনটাই নয়।

২) ‘ফ্রে পিক’ (১৯২২২ ফুট, মে ২০০৬) অভিযান নিয়ে মুসা অনেক কথাই লিখেছে, আমি তার উত্তরে শুধু কয়েকটি প্রশ্ন করতে চাই –

ক) মুসা ফেসবুকের এই লেখায় লিখেছেন যে ‘নিডুপ ভুটিয়া’ দলনেতা ছিলেন? তাহলে মুসা কেন ফটো এ্যালবামে নিজেকে দলনেতা লিখেছেন? দেখুন মুসা’র ফটো এ্যালবামের স্ক্যান কপি ও মুসার ওয়েব সাইটের স্ক্রিণশট – ছবি ১ ও ২।

খ) মুসা তার বই ‘পাহাড় চূড়ার হাতছানি – কেওক্রাডং থেকে এভারেস্ট’ এর পাতা ১৮০ তে লিখেছিলেন – ‘ফ্রে পিক’এর চুড়ায় কাঁপতে কাঁপতে পতাকা আইসএক্সে লাগিয়ে ছবি তুলেছে। যদি সত্যিই সেরকম ছবি মুসা তুলে থাকেন – তাহলে পারলে বা থাকলে তা প্রকাশ করুন। বইয়ের লেখাটার স্ক্যান কপি দেখুন ছবি ৩।

‘ফ্রে পিক’ চুড়ায় মুসার কথিত পুরো ছবিটি দেখুন, সেই সাথে মুল ছবিটি, যেটা ‘ক্রপ’ করে মুসা তার বইয়ের ১৫৬ পাতায় ছাপিয়েছে – দুটো ছবি দেখলেই বুঝবেন কেন ‘ক্রপ’ করা হয়েছে। এটা চূড়া নয় বরং অনেক নিচের ঢাল। অভিযানের সব ছবির মুল কপি আমার কাছে আছে।

গ) মুসা তার বইতে এবং ব্যক্তিগতভাবে সব সময় ‘ফ্রে পিক অভিযান’ বলেছেন, যারা সেটাকে সে সময় ‘কোর্স’র অংশ বলতেন তাদের বিরোধিতা করেছেন – আজ তাহলে কেন ‘ফ্রে পিক’ এর প্রমাণ হিসেবে এইচ.এম.আই ‘এডভান্স কোর্স’এর সনদ দেখাচ্ছেন? দেখুন সনদটি –

ঘ) এই সনদে দেখা যাচ্ছে ‘গ্রেড’এর জায়গায় লেখা ‘Qualified’ লেখা, তাহলে মুসা’র লিখিত বইতে উনি কেন বার বার ‘A গ্রেড’ পেয়েছিলেন বলে লিখেছিলেন?

২) ‘লাংসিসারি অভিযান’ (২১,০৮১ ফুট, নভেম্বর ডিসেম্বর ২০০৮) নিয়ে মুসা লেখার জবাবে বলতে চাই –

ক) মুসা লিখেছে – “বিশেষ করে মীর শামসুল আলম বাবু (আমি) এই অর্থ পরিশোধে পুরোপুরি অপারগতা প্রকাশ করলেন।“ এর উত্তর তো মুসার বইয়ের ২১৫ নং পাতাতেই আছে – দেখুন স্ক্যান কপি ছবি –৭

সঙ্গত কারণেই আমি ‘ডেসটিনি ২০০০’ কর্তৃক স্পন্সরকৃত এই অভিযান পরবর্তী সময়ে অতিরিক্ত অর্থ দিতে অস্বীকার করেছি।

অবশ্য মুসা কেন আমার নামে এই অভিযোগ করছেন তার প্রমাণও আছে, মুসা চেয়েছিলেন ‘লাংসিসারি সামিট’ না হলেও আমি যেন ভিডিওতে সামিট দেখাই – মুসা নিজেই ফেসবুকের এই লেখায় লিখেছে - “তাকে (আমাকে) ডকুমেন্টারিটা ‘রিটাচ’ করতে অনুরোধ করায় তিনি আর সেই অনুরোধ রাখলেন না।“

সেই রিটাচটা হল - ইউটিউবে মুসার বন্ধুদের দেওয়া আমার বক্তব্যের ভিডিওটা যা মুসা ডকুমেন্টারিতে লাগাতে বলেছিলেন।

খ) মুসা লিখেছেন – তার পরবর্তী অভিযান ‘অন্নপূর্ণা ফোর’ এ আমাকে নেয়া হয়নি দেখে আমি ‘লাংসিসারি জয় হয়নি বলে গল্প ফেঁদেছি’ – ‘লাংসিসারি’ অভিযানের প্রতারণা নিয়ে আমার লেখা ছাপার অক্ষরে প্রথম প্রকাশ হয় ‘মাসিক পর্যটন বিচিত্রা’য় ‘এপ্রিল ২০০৯’ সংখ্যায় (যেটা আমি হাতে লিখে, ফ্রেস করে সম্পাদক ‘মহিউদ্দিন হেলাল’কে দিয়েছিলাম জানুয়ারি ২০০৯এ) - আর ‘অন্নপূর্ণা ফোর’ অভিযানে মুসা’রা রওনা দেয় মে মাসের শেষ সপ্তাহে। বোঝাই যায় ‘আঙ্গুর ফল টক নয়’।

ও হ্যাঁ আর একটা কথা - ‘লাংসিসারি’ অভিযানের প্রতারণার কথা মুসা’র প্রিয় ‘প্রথম আলো’র ৩০ মে ২০০৯ সংখ্যাতে প্রকাশিত আমার লেখায় আছে।

গ) লাংসিসারি অভিযানের সামিট নিয়ে আমি মুসাকে একটা চ্যালেঞ্জ দেই –
মুসা আপনার কথা মত - আপনি ২০,৭০০ ফুট উঁচু লাংসিসারি পর্বত জয় করেছেন এবং জয়ের সনদ আপনার কাছে আছে (এমনকি আমারটাও নাকি আপনার কাছে আছে), যদি সাহস থাকে বা পারেন - তো সেটার একটা ‘নন ফটোশপ’ স্ক্যান কপি দেখান – সব প্রমাণ হয়ে যাবে।

আমার বিষয় না হওয়ায় –
‘বাংলা চ্যানেল’ আবিষ্কারের সময় হামিদ ভাইয়ের সাথে আমিও কয়েকবার থাকলেও এবং মুসা নৌকায় উঠেছিলেন তা স্বীকার করে নিলেও সাঁতার নিয়ে কিছু বলছি না, মুসা’র ‘যায় যায় দিন’ সময়ের সহকর্মী এবং বিশ্বরেকর্ড (?) করা ‘অন্নপূর্ণা ফোর’ অভিযানের ফিচার লেখক ‘দেবব্রত মুখোপাধ্যায়’কে টাকা দিয়ে লেখানো নিয়েও কিছু বলছি না, বলছি না - ‘চুলু ওয়েস্ট’ নিয়ে আমার ধরে দেওয়া প্রতারণার সময়েও বিজয়ের সমর্থনে (প্রথম আলো’তে সহ) মুসা’র চারটি লেখা প্রকাশ করার কথা, বলছি না – ইন্টারনেটে ‘মুসা’র তিনটি জন্ম তারিখ ও সাল’-এর প্রমাণ থাকার কথা।

বলছি না – মুসা’র সত্যিকারের চাকুরী জীবন শুরু হওয়া জামাতের পত্রিকা ‘নয়া দিগন্ত’র কথা।

বলছি না - কেন এত বিখ্যাত পত্রিকা থাকতে ‘ভোরের ডাক’ এর মত একটা পত্রিকা এভারেস্ট নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করতে যাবে? - ঐ সাংবাদিক কখনই তিব্বত যান নি (মুসা এখানেও মিথ্যা বলছেন) –

বলছি না ঐ সাংবাদিকের লেখায় আছে ‘মুসার এভারেস্ট অভিযানের প্রধান শেরপা ছিলেন – ‘কৈলাশ তামাং’, (তাহলে তার চাচা ‘সোম বাহাদুর তামাং’ কি ছিলেন? যিনি নাকি এভারেস্টে না চড়েও এভারেস্টকে হাতের তালুর মত চিনতেন)

– এসব না লিখে বরং সর্বশেষ এক লোকের একটা কথা দিয়েই শেষ করি – উনি কয়েকদিন আগে আমাকে বলছিলেন –
মিথ্যা বলতে বলতে ‘মুসা’ তার অভিযানগুলোকে এই পর্যায়ে নিয়ে গেছে যে – এখন যদি স্বয়ং ‘জর্জ এভারেস্ট’ এসে ‘এডমন্ড হিলারি’, ‘তেঞ্জিং নরগে’, ‘জর্জ ম্যালোরী’ ও ‘জন হান্ট’ কে সাক্ষী মেনে ঘোষণা করেন যে মুসা এভারেস্ট জয় করেছে তাও আমি বিশ্বাস করবো না..................।

[লেখা ফেসবুক থেকে]

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.