Sylhet Today 24 PRINT

অশ্লীলতা-নোংরামি না, গঠনমূলক সমালোচনা চাই

সুপ্রীতি ধর |  ১৪ আগস্ট, ২০১৭

ভেবেছিলাম এ নিয়ে কিছুই বলবো না। মনের মধ্যে ঘুরপাক খায় অনেক কথা, নিজে নিজে সাজাইও পুরো একটা লেখা, কিন্তু তা আর বের করি না। কারণ যারা গালিগালাজের সংস্কৃতি নিয়ে বড় হয়েছে বা চলছে, তাদের সাথে আমার ঠিক যায় না। 'যায় না' শব্দটিই জোর দিয়ে বলছি। আমি তাদের কাছ থেকে দশ হাত দূরে থাকি।

আজ যারা আমাকে, উইমেন চ্যাপ্টারকে, পোর্টালটির লেখকদের লক্ষ্য করে নোংরামি করছে, অশ্লীল শব্দগুলোর কোনটাই বাদ দিচ্ছে না বলতে, তাদের জন্য আমার করুণা ছাড়া আর কিছুই নেই। আমি তাদের সাথে কাদায় নামতে পারবো না, ছোঁড়াছুড়ি তো দূর অস্ত। আমি নিজে গালি দিতে পারি না, শুনতেও পারি না। এক পক্ষ-অন্য পক্ষ-অনেক পক্ষ আমাকে ট্যাগ করছে তাদের সেইসব লেখায়, যেখানে আমিই তাদের মূল টার্গেট। আমার স্ট্যান্ড বা অবস্থান তারা জানতে চায়। আরে বাবা, আমিও কী একটা হনুরে, আমার আবার স্ট্যান্ড!

তবে আমি জানি, আমি কী করছি, আমি বিশ্বাস করি আমার কাজে, কাজে ভুলভাল থাকে, তাও শুধরে নেবার অবকাশ আছে। কিন্তু যারা হেয় করে কথা বলছেন, যারা নারী অধিকার আন্দোলনের মতো একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে ট্রল করার জন্য রীতিমতো পেইজ খুলে বসেছেন, এটা তাদের ইচ্ছা-স্বাধীনতা। করুক। এতে তাদের মানসিক-সামাজিক দৈন্যই প্রকাশ পায়। তাই বলে আমাকেও তাদের কাতারে নামিয়ে আনতে হবে কেন? সেইজন্যই কোনও উত্তর আমি এ যাবত দেইনি। আর দেবোও না।

আমি ২০১৩ সালের গণজাগরণের সময় উইমেন চ্যাপ্টারটি তৈরি করেছিলাম হেফাজতের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে গিয়ে, যদিও অনেক আগে থেকেই মনে মনে বারুদের মতো ফুঁসছিলাম বিভিন্ন অবিচারের বিরুদ্ধে। হেফাজতের উত্থান কাজটি ত্বরান্বিত করে দেয়। কিন্তু তখনও বুঝিনি, কেবল হেফাজতই আমাদের বিরোধী হবে না, ডান-বাম-মোল্লা-পুরোহিতরাও যে নারাজ হবে, সত্যিই ভাবনায় আসেনি তখন। এখন এসেছে। অসুবিধা নেই। তার মানে আমরা মেয়েরা মানে উইমেন চ্যাপ্টারে বা পরবর্তী সময়ে যারা অন্য পোর্টালগুলোতেও একই দাবি নিয়ে লিখছেন, তারা সঠিক পথেই আছেন।

একটা সিস্টেমকে চ্যালেঞ্জ করা চাট্টিখানি কথা না। বাধা আসবে। বলা যায়, আমরা সবে প্রাথমিক বাধা সামাল দিচ্ছি। আরও বড় বাধা মোকাবিলার জন্য চোখ-কান খোলা রাখতে হবে। কারও নাম নিয়ে তাদেরকে মাথায় তুলতে চাই না। আমাদেরকে চ্যালেঞ্জ করার জন্যই কিছু পেইড এজেন্ট বিভিন্ন নামে মাঠে নেমেছে। নামুক। আমরা কি প্রস্তুত নই? আমরা আমাদের লেখা চালিয়ে যাবো। এটাই হোক আমাদের প্রত্যয়। তাছাড়া যারা এটা করছে, তারা আসলে মূলশত্রু নয়, তারা প্রতিবন্ধক মাত্র। আমাদের মূলশত্রু হচ্ছে সিস্টেম বা পুরুষতন্ত্র। সেই সিস্টেমের মূলে আঘাত করতে হবে। মাঠে-ময়দানে দীর্ঘদিন ধরেই এ ব্যাপারে কাজ চলছে। চলুক। লেখার একটা জায়গা ফাঁকা ছিল, আমি সেই কাজটি শুরু করেছি। ভবিষ্যতে আরও অনেকেই এগিয়ে আসবে, এরই মধ্যে আসছেও। কাজেই যারা আজ চিৎকার করছে, তারা করুক। একসময় গলা শুকিয়ে আসবে তাদের। সেই দিনটির অপেক্ষায় রইলাম।

উইমেন চ্যাপ্টারকে একটা প্ল্যাটফর্ম হিসেবে গড়তে চেয়েছিলাম। সেটা সে নিজেই গড়ে উঠেছে। এখানে আমার অবদান তেমন না। লেখকরাই এটাকে গড়ে তুলেছে, এবং নিত্য নতুন মেয়েদের লেখক বানানোর পথ তৈরি করে দিয়েছে, অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। শুধু মেয়েদেরই না, অনেক পুরুষ বন্ধুদেরও টেনে এনেছে এই প্ল্যাটফর্মে। আমি সুপ্রীতি এটার প্রতিষ্ঠাতা, সম্পাদক। এইটুকুই। আমাকে আর উইমেন চ্যাপ্টারকে গুলিয়ে ফেলা ঠিক কাজ হবে না।

প্ল্যাটফর্ম সবার, মত-ভিন্নমত সব ধরনের লেখা ছাপা হয় এখানে। প্রতিটা লেখার নিচে এটাও লেখা আছে যে, লেখার দায় লেখকের, সম্পাদকের না। কাজেই আমার মত কখনও উইমেন চ্যাপ্টারের মত নয়, আবার উইমেন চ্যাপ্টারের সব লেখাই 'আমার মত' না। এটা মনে রাখতে হবে সবাইকে।

ব্যক্তি সুপ্রীতির সাথে অনেকের রাগ-অনুরাগ, বিরোধ-মিল-মহব্বত থাকতেই পারে, এটাই স্বাভাবিক, এর সাথে পোর্টালের কোনও যোগ নেই। যদিও একাই চালাই পোর্টালটি, একা হাতেই সব লেখা আপ হয়, সব লেখার সাথে আমিও একমত পোষণ করি না, কিন্তু ছাপাই। কারণ পাঠকের অধিকার আছে সবরকম লেখা পড়ার। এখন কোনও লেখা পছন্দ না হলে , বা পছন্দ হলে আমার ওপর হামলে পড়ারও কোনও কারণ নেই, আবার আমার পিঠ চাপড়ানোরও প্রয়োজন নেই।

কাজেই বলছিলাম কী, আমার কোনও মতামত বা অবস্থান দিয়ে পোর্টালকে বিচার করবেন না। পোর্টাল নারীবাদ নিয়ে কথা বলে, নারী অধিকার নিয়ে কথা বলে, অসাম্প্রদায়িকতা নিয়ে কথা বলে, সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে কথা বলে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলে।

এই কাজটুকু আমাদেরকে আমাদের মতই করতে দিন, মেয়েরা এখন একটা জায়গা পেয়েছে লেখার, লিখতে দিন তাদের। আখেরে নারী-পুরুষ সবারই মঙ্গল হবে এতে, এইটুকু জোর দিয়ে বলতেই পারি। লেখার সমালোচনা করুন, গঠনমূলক সমালোচনা, যুক্তি দিয়ে, যুক্তি খণ্ডন করে। কিন্তু গালিগালাজ কেন? তাছাড়া অন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ রয়ে গেছে জীবনে, সেগুলোও তো করতে হবে। তাই নয় কী!

আসুন, শত্রুতা নয়, গালিগালাজ নয়, একে-অন্যের পাশে দাঁড়াই। আর হ্যাঁ, বার বার বলা হয় কথাটা, আমিও বলি, পুরুষতন্ত্র বলতেই আপনারা পুরুষরা নিজেদের ঘাড়ে টেনে নেবেন না। পুরুষতন্ত্র একটা সিস্টেম, যার শিকার নারী-পুরুষ উভয়ই। সবাই সেই তন্ত্রের বিরুদ্ধে কথা বলুন। জীবনটা সবারই সুন্দর হবে তখন।

  • সুপ্রীতি ধর: সম্পাদক, উইমেন চ্যাপ্টার।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.