Sylhet Today 24 PRINT

এথনিক আইডেন্টিটি আর রাষ্ট্রীয় শপথ দুই বিষয়

আরিফ জেবতিক |  ৩০ নভেম্বর, ২০১৭

নাজানিন জাগারি রেটক্লিফ একজন ব্রিটিশ-ইরানি, যিনি ইরানে তাঁর পরিবারকে মিট করতে গিয়ে এয়ারপোর্টে ইরানি সরকার কর্তৃক এরেস্ট হন এবং ‘ষড়যন্ত্র’ এর দায়ে তাঁকে ইরানি সরকার ৫ বছরের জেল দিয়েছে। যেহেতু নাজানিন ব্রিটিশ এমপি টিউলিপের নির্বাচনী এলাকায়, তাই তাঁর মুক্তির জন্য লোকাল এমপি হিসেবে টিউলিপ চেষ্টা চরিত্তি, আন্দোলন-যোগাযোগ ইত্যাদি করবেন- এটাই স্বাভাবিক।

কিন্তু সেখানে গিয়ে টিউলিপকে 'আপনে বাংলাদেশে ফোন করলেই মীর কাশেমের ছেলে মুক্তি পায়' এই ধরনের রিমার্ক করাটা উদ্দেশ্য প্রণোদিত নিশ্চিত।

মীর কাশেমের ছেলে ব্রিটিশ নাগরিক নয়, তার প্রতি কোনো ব্রিটিশ এমপির কোনো দায়দায়িত্ব নেই, তার মুক্তি পাওয়া না পাওয়ায় ব্রিটেনের কোনো এমপির ভোট বাড়েও না কমেও না, তাই ব্রিটিশ এমপি এটা নিয়ে আগ্রহ দেখাবে না, এটাই স্বাভাবিক।

টিউলিপের খালা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বটে, তাই বলে টিউলিপের ফোনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। টিউলিপের ফোনে তাঁদের পারিবারিক কোনো ইস্যুতে কাজ হতে পারে, কিন্তু বাংলাদেশের সরকার চলে তার নিজস্ব রাজনীতি দিয়ে, সেখানে টিউলিপের ফোনে রাজাকারের ছেলে মুক্তি পাবে না, এটা ডেভিড বার্গম্যান সহ সকলেরই জানা।

তারপরও টিউলিপকে মিডিয়ায় বিব্রত করার উদ্দেশ্য হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে যেভাবেই হোক ক্ষতিগ্রস্ত করার একটা চেষ্টা। জামায়াতিরা সর্বদাই এই কাজ করে যাবে, এটি করার মতো আর্থিক এবং সাংগঠনিক সামর্থ্য তাদের আছে।

সাংবাদিকদের সামনে টিউলিপ যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন, সেটি একজন সিজনড পলিটিশিয়ান করবে না। টিউলিপ এগুলো না শিখলে তাঁর ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

আর যারা টিউলিপ বলেছেন 'আমি বাংলাদেশি না'-এইটা শুনে মরাকান্না জুড়েছেন সেটি তাঁদের নিজস্ব বিভ্রান্তি মাত্র।

এথনিক আইডেন্টিটি একটি বিষয়, কিন্তু রাষ্ট্রীয় শপথ আরেক বিষয়। যারা ভিনদেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন, তাঁরা সেই দেশের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করেন। রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনের সময় সেই শপথ থেকে সরে আসা একটি অনৈতিক বিষয়। একারণেই ব্রিটিশ হাইকমিশনার হিসেবে আনোয়ার চৌধুরী এদেশে এলে আমরা আহ্লাদিত হতেই পারি, কিন্তু দায়িত্ব পালনে তিনি শেষ পর্যন্ত একজন ব্রিটিশ হিসেবেই ব্রিটেনের স্বার্থ এদেশে দেখে গেছেন এবং ওয়ান ইলেভেনের পেছনের কুশীলব হিসেবে অন্য ব্রিটিশ দূত যা করতেন, তার চাইতে কম করেন নি।

টিউলিপের খালা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, এটি তাঁর পারিবারিক বিষয়, তাঁর রাজনৈতিক বিষয় না। তাঁর খালা তাঁকে ব্রিটেনের এমপি বানান নি, ব্রিটিশ নাগরিকরা বানিয়েছে।

এটা ঠিক যে, টিউলিপ বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্রী। কিন্তু এটাও সত্যি যে তিনি একজন ব্রিটিশ রাজনীতিবিদ।

তাঁর এই দুই সত্ত্বার মাঝে সবসময়ই দূরত্ব থাকবে, এই দূরত্ব বুঝতে না পারলে সেটা আমাদের সমস্যা, কোনো ব্রিটিশ পার্লামেন্টারিয়ানের না।

  • আরিফ জেবতিক: সাংবাদিক, অনলাইন এক্টিভিস্ট।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.