Sylhet Today 24 PRINT

লুসি হেলেনের জন্যে ৩৮ হাজার টাকা

আরিফ জেবতিক |  ০৬ জানুয়ারী, ২০১৮

কুড়ি বছরের তরুণি লুসি হেলেন ক্যাথলিক চার্চের নান হয়ে এদেশে এসেছিলেন সেই ১৯৫০ সালে। তখন কে ভেবেছিল তিনি আর কখনোই ফিরে যাবেন না নিজের দেশে।

এই দরিদ্র, দীনহীন দেশের মানুষকে বড্ড ভালোবেসেছিলেন এই বৃটিশ তরুণি। একবছর, দুবছর করে শেষ পর্যন্ত এই মাটিতেই রয়ে গেলেন কুড়িটা বছর। তারপর এলো এমাটির সবচাইতে রক্তাক্ত সময়-১৯৭১।

ব্রিটেনে থাকা পরিবারের সদস্যরা মাথা কুটলেন, বললেন, 'এইবেলা ফিরে আসো।'
কিন্তু এদেশের সেই চরম দুঃখমাখা দিনে লুসি আমাদেরকে ছেড়ে গেলেন না, যেতে পারলেন না। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যোগ দিলেন যশোরের ফাতেমা হাসপাতলে। যুদ্ধের সেই দিনগুলোতে যখন ডাক্তার-নার্সের সংকট, লুসি সেবিকা হলেন নির্যাতিত মানুষের, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের গোপন চিকিৎসার। লন্ডনে চিঠি লিখলেন বারবার তাঁর সব পরিচিতজনকে, তুলে ধরলেন পূর্ববাংলায় পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংস নির্যাতনের খবর। জনমত গঠনে তাঁদেরকে আবেদন করলেন বারবার।

তারপর? একদিন এ দেশ স্বাধীন হলো।

পূর্বপাকিস্তানের পরিচয়কে ফুৎকার দিয়ে রক্তে ভেজা বাংলাদেশের সবুজ পতাকা পতপত করে উড়তে থাকল মুক্ত আকাশে।

সিস্টার লুসি ফিরে গেলেন বরিশালের চার্চে।

এদেশকে লুসি দিয়েছেন তাঁর যৌবন, তাঁর পৌঢ়ত্ব, তাঁর গোটা জীবন।
এ মাটিতে কাটিয়েছেন ৭৭টি বছর। একশ'র কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন এখন।
বড় সাধ তাঁর এই দেশের নাগরিক হয়ে এমাটিতে শয্যা নেবেন।

কিন্তু তাঁর নাগরিকত্বের আবেদন বারবার প্রত্যাখ্যান করছে আমাদের রাষ্ট্র। তিনি নাগরিক হতে পারছেন না এদেশের।

এই বৃদ্ধাকে প্রতিবছর ৩৮ হাজার টাকা জমা দিয়ে তাঁর ভিসা রিনিউ করতে হচ্ছে। জীবন সায়াহ্নে দাঁড়ানো এই চির সন্যাসী বৃদ্ধার জন্য ৩৮ হাজার টাকা জোগাড় করাটাও বড্ড কষ্টের হয়ে দাঁড়িয়েছে।

লুসির গল্প শুনে আমি ঝিম মেরে আছি। পাশ্চাত্যের সব সোনার দেশেও নাগরিকত্ব এমন মহার্ঘ বস্তু নয়। কত অগামগা এদেশ থেকে গিয়ে কয়েকবছর পরেই বাগিয়ে নিচ্ছে নাগরিকত্বের কার্ড।

অথচ ৭৭ বছর এদেশের সেবা করে কাটিয়ে দেয়া এক বৃদ্ধার নাগরিকত্ব দিচ্ছে না আমার স্বদেশ!

যদি ৩৮ হাজার টাকার লোভে এই দেশ লুসির নাগরিকত্বের আবেদন বারবার প্রত্যাখ্যান করে, আমি বেঁচে থাকলে সেই ৩৮ হাজার টাকা লুসির বাকি জীবনকাল প্রতিবছর পরিশোধ করে দেব, এই প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।

আমি জানি না এই নাগরিকত্বের বিষয়টি কারা সিদ্ধান্ত দেন। কার দরজায় ধরনা দিলে আমি লুসির জন্য এই নাগরিকত্বটুকু এনে দিতে পারব।
আমাকে কেউ বলে দিন।

আমি সেই দরজায় হত্যে দিয়ে পড়ে থাকব।

আমার এই দেশটি বড় মমতা গো, এই দেশটি বড় দয়াদ্র গো,
লুসি হেলেনের নাগরিকত্ব প্রত্যাখ্যান করে আমার এই দেশটিকে অকৃতজ্ঞ হিসেবে হিসেবে কালি লাগিয়েন না গো আপনারা।

(লেখাটি ফেসবুক থেকে সংগৃহিত)
আরিফ জেবতিক: লেখক, অনলাইন এক্টিভিস্ট

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.