Sylhet Today 24 PRINT

শ্রীদেবীর দেহসৌন্দর্য যতটা ব্যবহার হয়েছে, প্রতিভা ততটা নয়

ড. কাবেরী গায়েন |  ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

আজ বোম্বে চলচ্চিত্রের বিখ্যাত অভিনেতা শ্রীদেবী মারা গেছেন। ফেসবুকে অনেকের দেয়ালে এই খবর শুনে এক-আধটা ছবি, বিশেষ করে যেগুলোর উল্লেখ করা আছে, টেনে টেনে দেখার চেষ্টা করলাম। অনেক আগে একটা ছবি দেখেছিলাম 'জুদাই'; ভালো লেগেছিলো। সেটা খানিক দেখলাম। খুব নামকরা 'সাদমান' দেখলাম প্রায় পুরোটা।

খুব মন খারাপ হলো দেখে। তিনি নিঃসন্দেহে শ্রীময়ী এবং অভিনয়প্রতিভাও ছিলো, অথচ খুব বেশি বাণিজ্যিক ছবিতে অভিনয় করার জন্য তার দেহসৌন্দর্যকে যতোটা ব্যবহার করা হয়েছে, তার অভিনয় প্রতিভাকে তেমন নয়। তবে আমি বিচলিত অন্য কারণে, হিন্দি সিনেমার নামে এসব কী দেখলাম! যৌনতা, ভাঁড়ামো, উদ্ভট কাহিনী, উদ্ভট অভিনয়। ন্যাকা প্রেম আর কাঁচা পাগলামি।

আমাদের বাসায় টেলিভিশন এসেছে অনেক দেরিতে, আর ভিসিআর-ভিসিপি না থাকার কারণে এসব দেখতে হয়নি তাৎক্ষণিকতার চাপে পড়ে। পরে যখন কিছু হিন্দি ছবি দেখা হয়েছে, তখন নেহাতই হাতে গুনে। জেনেবুঝে। বাছাই করা। রেখার বেশ কিছু মনে রাখার মতো অভিনয় আছে। উমরাওজান আমি হাজারবার দেখতে আগ্রহী। এমনকি সিলসিলা দেখতেও এক পায়ে খাড়া। তাঁর আগের যুগে মধুবালা, মীনা কুমারী, ওয়াহিদা রেহমান, সায়রা বানু, জয়া ভাদুড়িরা তো খুবই পরিণত। পরের সময়ের মাধুরীও কিছু চরিত্র ভালোই করেছেন । মনীষা কৈরালা বেঁচে থাকবেন লাভস্টোরি ১৯৪২, বোম্বে, দিল সে, খামোসীর মত ছবিতে অভিনয়ের জন্য । কিন্তু শ্রীদেবীর চোখ দেখে মনে হলো নাগিন থেকে তিনি বের হতে পারেননি বা তাকে বের করা হয়নি। একবার যে যে-ভূমিকায় দর্শকপ্রিয়তা পান, সংস্কৃতি-ইন্ডাস্ট্রি তাকে দিয়ে সেটাই করাতে থাকে।

কী অপচয় জীবনের! কী অপচয় মেধার! তিনি মূলত অপরিণত মানুষের ভূমিকায় অভিনয় করলেন কিংবা নেচে গেলেন।

অথচ তাঁর জীবন আর মেধাকে এড়িয়ে তাঁর দেহসৌন্দর্য ব্যবহার করে কতো টাকাই না তুলেছেন লগ্নিকাররা! একটি স্বাভাবিক ছবিতেও অভিনয় করার সুযোগ পেয়েছেন কি না কে জানে! শুধু দর্শকের মনোরঞ্জন করার জন্য জীবন, সৌন্দর্য আর কাজকে ব্যবহার করে মাত্র ৩৬ বছর বয়সে তাঁকে বিদায় জানিয়েছে বলিউড কিংবা তিনি স্বামী-সংসারে হারিয়ে গেছেন।

বিদায় শ্রীদেবী। সৌন্দর্যব্যবসার সিনেরাজনীতি বুঝেও বলি, আপনার আপনাদের মতো অভিনেতাদের নানা ধরণের অপব্যবহার, অব্যবহারের পাটাতনেই বলিউডের ভিত্তি শক্তপোক্ত হয়েছে। কিছু স্বাভাবিকভাবে দেখতে পারার মতো, এমন কি চিন্তা উস্কে দেবার মতো ছবিও তৈরি হচ্ছে আজকাল। নারী চরিত্রগুলো মানুষের অবয়ব পাচ্ছে ক্রমশ।

আপনার জন্য দুঃখ রয়ে গেলো। শেষযাত্রায় ভালোবাসা।

  • ড. কাবেরী গায়েন: অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

(ফেসবুক থেকে)

 

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.